বলদ! [Bangla Story]

অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবা তানবির তুহার সাথে তেরো বছরের জাবেদকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে হয়। জাবেদ অনেক অনুরোধ করার পরেও বাবা কোনও কর্ণপাতই করে না। তার মা জাহানারা বাসায় না থাকাতে তুহা ছেলেকে একা রেখে অনুষ্ঠানে যাবার সাহস করতে পারেনি। জাবেদ বারবার বলে যে সে পাশের বাসার জনির সাথে বসে টিভিতে কার্টুন দেখবে কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয় না।

 

একেতো নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আসা, তার উপর যেদিকে তাকায় শুধু বড়দের ভিড়; প্রায় সবাই জাবেদের বাবার বয়সী। তার যে কি অস্বস্তি লাগা শুরু হয় তা কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। বাবা কারো সাথে কথা বলতে শুরু করলে জাবেদ একবার বাবার দিকে তাকায় আরেকবার ঐ লোকটির দিকে তাকায়। একটু পরপর বাবার হাত ধরে বলে,

 

- বাবা, বাসায় কখন যাব?

 

- এ কথা শুনে তুহা বিরক্ত হয়ে বলে, সবেমাত্র এসেছি! অনুষ্ঠান এখনও শুরুই হয়নি আর তুমি বলছ কখন বাসায় যাব? বিরক্ত না করে চুপ করে ঐ আসনে গিয়ে বসো!

 

অগত্যা আর কোনও উপায় না দেখে বর্ষায় ঢেকে যাওয়া আকাশের মত জাবেদ মুখ কালো করে বসে থাকে। হঠাৎ সে এমনিতেই তার পকেটে হাত দেয় এবং সেখানে একটি চকলেটের সন্ধান পায়! এটি পেয়ে জাবেদ আনমনে হেসে উঠে কারণ এই চকলেট সে আজ কিনেছে এমন নয়, এটি বেশ অনেকদিন আগের কেনা। সেই কবে প্যান্টের পকেটে রেখে সে ভুলেই গিয়েছিল এটির কথা; আজ অনেকদিন পর এই প্যান্টটা পরার ফলেই চকলেটটি আবিষ্কৃত হয়!

 

যাইহোক জাবেদ চকলেট মুখে দিয়ে আস্তে আস্তে খেতে থাকে। দুয়েক মিনিট পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়; আসলে প্রকৃত অনুষ্ঠানের পূর্বে গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ যে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন সেই ধাপটি শুরু হয়।

 

একে একে সম্মানিত ব্যক্তি মঞ্চে উঠেন, বক্তব্য শেষ করেন এবং নেমে পড়েন। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচজনের মতন লোক বক্তব্য দিয়েছেন তবে কেউ খুব একটা বেশী সময় ধরে বক্তৃতা দেননি। মজার বিষয় হচ্ছে এই যে সর্বশেষ বক্তা মাইক হাতে নিয়ে কোনও এক মহান নেতার মত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেন!

 

অন্য বক্তাগণ যেখানে বড়জোর পাঁচ মিনিটের বেশী বলেননি, সেখানে তিনি একাই ইতোমধ্যে আধাঘণ্টার উপরে কথা বলে ফেলেছেন! একই কথা ঘুরেফিরে বলছেন! জাবেদের বিরক্তি তুঙ্গে উঠে গেলেও তার বাবার ধমকের ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তার মনে একটি কথা পানিতে মাছের মত কিছুটা উপরে উঠে আসে আবার নিচে নেমে যায়!

 

জাবেদ তার বাবাকে বলতে চায় যে ঐ লোকটি এতক্ষণ ধরে বক্তৃতা দিচ্ছে কেন? এদিকে তুহার চোখেমুখেও বিরক্তির ছাপ; সে একটু পরপর হাতের ঘড়ি দেখছে। এই ব্যাপারটি জাবেদের চোখ এড়ায়নি। জাবেদ মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে বসা মানুষদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে; সে দেখতে পায় যে এই অবিরাম কথা বলে যাওয়ার অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ; সবার ভ্রূ কুঁচকে আছে।

 

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন বলে বসেন, ভাই অনেক হয়েছে! আপনার বক্তব্য শেষ করেন! কিন্তু তাতেও সেই বক্তা দমে না! দুই মিনিট পর আরেকজন বলেন, এই এই! সবাই তালি দিতে থাক! অনবরত তালির শব্দে ঐ আজব বক্তা লজ্জা পাবে এবং তার বক্তব্য থামবে এবং আমরাও মুক্তি পাবো! এ কথা শুনে জাবেদের অট্টহাসি পেয়ে যায়! সে কোনওমতেই তার হাসি থামাতে পারছে না। সে একবার ঐ লাগামহীন বক্তার দিকে তাকায়, আর হো হো করে পাগলের মত হাসে!

 

 

তুহা জাবেদের অট্টহাসি শুনে তাকে ইশারায় থামতে বলে; ওদিকে শ্রোতাগণ ঐ বিরতিহীন বক্তাকে থামাতে ব্যস্ত, অন্যদিকে একজন পিতা তার পুত্রের অট্টহাসি থামাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন... 

View kingofwords's Full Portfolio
tags: