জীবন থেকে নেয়া [Bangla Story]

      লেখক নূর আরেফিন অনেকদিন ধরে একটি অসাধারণ গল্প লিখার জন্য এজমা রোগীর মত হাঁসফাঁস করছেন। কিন্তু কোনও একটি মানানসই গল্পের বিষয় ওনার মস্তিস্কের জালে ধরা দিচ্ছে না! বাইন মাছ যেমন হাত পিছলে দেয় দৌড় এদিক ওদিক, ঠিক তেমনি নূরের মাথায় কোনও একটি চমৎকার গল্পের কাহিনী আসি আসি করেও যেন আসে না!

 

        অবশেষে আরেফিন একটি গল্প লিখতে শুরু করে। এ গল্পটি একজন বোবা ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটিকে সে একদিন সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ট্রেনের ভেতর মানুষের কাছে চকলেট বিক্রি করতে দেখেছে।

 

        প্রায় যতবারই আরেফিন ট্রেনে যাত্রা করেছে, ততবারই সে বোবা ছেলেটিকে দেখেছে। মজার বিষয় হচ্ছে এই যে ছেলেটি যে উপায়ে চকলেট বিক্রি করে তা একেবারে অভিনব! প্রথমে সে নির্দিষ্ট বগীর এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়, তারপর ছোট্ট একটি কাগজের টুকরা জাগ্রত কিংবা ঘুমন্ত সবার কাছে দেয়; যারা জেগে আছে তাদের হাতে দেয় আর যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের পাশেই রেখে দেয় এই আশায় যে তারা ঘুম ভাঙার পর নিশ্চয়ই সেটা হাতে নেবেন।


সেই কাগজটিতে কয়েকটি হৃদয়স্পর্শী লাইন লেখা- আসসালামু আলাইকুম, আমার নাম আকবর। আমি খুব দরিদ্র পরিবারের ছেলে। আমি বোবা, কথা বলতে পারি না। তবে আমি জানি ভিক্ষা করা খারাপ, তাই ভিক্ষার পরিবর্তে আমি আপনাদের কাছ থেকে চকলেটের বিনিময়ে দুই টাকা চাই। দয়া করে আমার কাছ থেকে চকলেট কিনলে চির কৃতজ্ঞ থাকব। আল্লাহ্‌র রহমত আপনাদের উপর সবসময় থাকুক এই কামনা করছি। আরেফিন খুব মনোযোগের সাথে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেই ছোট্ট কাগজটিতে লেখা বাংলা লাইনগুলো থেকে ভুল বের করার চেষ্টা করেও পারেনি!  

 

আরেফিন মনে মনে সেই বোবা ছেলেটির কথা ভাবছে এবং কিভাবে গল্পটি শুরু করা যায় তাই গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। নিঃসন্দেহে বেশীরভাগ মানুষই সেই বোবা ছেলের কাছ থেকে চকলেট কিনত। প্রথমত দয়াবশত, দ্বিতীয়ত ছেলেটি তো কোনও অন্যায় কিছু করছে না; চকলেট বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনের মধ্যে নিশ্চয়ই দোষের কিছু নেই।

 

তবে তিন বছর পর আরেফিন এই বোবা ছেলেটিকে সিলেট রেল স্টেশনের কাছে মাইক হাতে ক্যানভাস করতে করতে বাতের মলম, চুলকানির বাম ইত্যাদি বিক্রি করতে দেখে, তখন তার মনে হয় সে যেন আকাশ হতে প্যারাসুট মানবের মত ভূমিতে পতিত হচ্ছে!

 

আরেফিন প্রথমবার তাকে দেখেই চিনতে পারে। নিঃসন্দেহে এই সেই কথিত বোবা ছেলে যে জনে জনে চকলেট বিক্রি করেছে; মানুষের সহানুভূতি অর্জন করেছে। আজ আরেফিন তার ভণ্ডামি ধরে ফেলেছে; এটা প্রমানিত যে সে বোবা হবার ভান করেছে।

 

আরেফিন ভাবে যে পৃথিবীতে মানুষ তার নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কত রকমের ছলনার আশ্রয় যে নিতে পারে তার কোনও হিসেব নেই! একবার তার মনে হয় ছেলেটির কাছে গিয়ে তাকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে। কিন্তু পরে কেন জানি তার এসব নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছে হয় না।

 

আরেফিন দূর থেকেই সেই ছেলেটিকে লক্ষ্য করে ঘৃণার আগুন ছড়াতে থাকে। ব্ল্যাক ম্যাজিকে যেমন অনেকে দূর থেকে অনিষ্ট সাধন করে ঠিক তেমনি। যে ছেলেটির প্রতি তার মনে করুণার জন্ম হয়েছিল কয়েক বছর আগে, এখন ঠিক সেই ছেলেটির প্রতি সে অভিশাপের বিষবাণ ছুঁড়ে দিচ্ছে যেন।

 

       যাইহোক, আরেফিন ঠিক করে যে এই ছেলেটির অভিনব প্রতারণা নিয়েই সে একটি চমৎকার গল্প লিখবে যে গল্প পরে সমাজের মানুষ এরকম ভণ্ড মানুষ হতে অনেক দূরে থাকতে পারবে। আরেফিন তার গল্পের নাম দেয় ভণ্ডামি; সে গল্পের প্রথম লাইনটি লিখতে শুরু করে- ভণ্ডদের স্বর্গ হয়েছে যেন বিশ্ব আজ... 

View kingofwords's Full Portfolio
tags: