কুলভ্রষ্ট রজঃস্রাব

eta amar notun golpo. gorbo songkhar jonno lekha. pore dekho kemon holo......

ভারী চশমার উপর দিয়ে গম্ভীর ভাবে তুহিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আঃ রশীদ খান। তুহিন এই দৃষ্টির মানে ধরতে পারলো না। বোকার মত তাকিয়ে রইল। মুখ ফসকে বলে বসল, কি আছে রিপোর্ট এ?
-কি করেন আপনি? গমগম স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন শিশু বিশেষজ্ঞ।
-আমি এঞ্জিনিয়ার।
-কোথায় চাকরী করেন? আবার সেই গুরুগম্ভীর প্রশ্ন। চেষ্টা করেও তুহিন লোকটার উপর থেকে নজর সরাতে পারছে না।
-আমার ছেলের কি হয়েছে? বোকার মত জানতে চায় তুহিন।
-আমি যা জানতে চাইছি সেটার উত্তর দিন শুধু। চশমা খুলে এবার সরাসরি তুহিনের মুকের দিকে তাকিয়ে প্রায় ধমকের সুরে বললেন প্রায় ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ় ডাঃ আঃ রশীদ খান।
-আমি একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করি।
-আই সি। ব্যাচেলর করেছেন কোথা থেকে? বলে নিজের রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন ডাক্তার সাহেব।
-বুয়েট থেকে। ধমক খেয়ে ভেবাচেকা খেয়ে গেছে তুহিন।
-কি বললেন বুয়েট থেকে? পুনরায় প্রশ্ন ডাক্তার সাহেবের।
-জ্বী। কোনমতে ঢোক গিলে উত্তর দেয় তুহিন। গলার কাছে কেমন যেন শুকিয়ে গেছে। ডাক্তার সাহেব তার ছেলের ব্যাপারে কিছুই বলছে না। অথচ ছেলেটা তার দারুণ অসুস্থ।
-বাহ বাহ! এই তো চাই! আপনারা হলেন আমাদের দেশ ও জাতির গর্ব। দেশের কর্ণধার। কন্ঠে স্পষ্ট ব্যাঙ্গের সুর ডাক্তার সাহেবের।
-কেন বলছেন এই কথা?
-এখন বলব না। পরে জানতে পারবেন। আপনি থাকতেন কোথায়? হলে?
-জ্বী হলে। নজরুল হলে থাকতাম।
-আপনার স্ত্রী কি করেন? গৃহিনী?
-জ্বী। তবে ও আমার ক্লাসমেট ছিল। একসাথে পড়তাম আমরা।
-তারমানে আপনার স্ত্রীও বুয়েট থেকে পাস করা এঞ্জিনিয়ার?
-জ্বী।
-উনি কোন চাকরী করে না যে?
-আগে করত একটা। ছেলেটা হবার পর থেকে আর করে না। ওর জন্মের পর থেকেই আমার স্ত্রীও প্রায় অসুস্থ থাকে।
-আপনি থাকেন না? আচমকা গুলির মত প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় ডাক্তার সাহেব।
-মানে?
-মানে কিছু না। কাল আপনার স্ত্রীকে আমার চেম্বারে নিয়ে আসবেন। আপনাদের দুইজনেরই ব্লাড টেস্ট করাতে হবে। কাল ঠিক চারটার সময় চলে আসুন। এখন আপনি আসুন। বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললেন ডাক্তার সাহেব।
-আমার ছেলের রিপোর্টটা? আবার বোকার মত প্রশ্ন করে তুহিন।
-আমার কাছে থাকলে কি আপনার অসুবিধা আছে? তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললেন ডাক্তার সাহেব। আপনাদের টেষ্ট হোক আগে। পরে জানতে পারবেন। আমি এখন কিছুই বলছি না।
অগত্যা চেম্বার থেকে মাথা নীচু করে বের হয়ে এল তুহিন।

তিন দিন পর......

ডাক্তার আঃ রশীদ খান এর চেম্বারে ডাক্তার সাহেবের মুখোমুখী বসা তুহিন আর নিপা। নিপার গলা জড়িয়ে ধরে শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে ওদের ছেলে অয়ন। নিপার চোখের নীচে কালি পড়ে গিয়েছে। দেখেই বোঝা যায় শরীর ভাল না। অনেক ঝড় ঝাপ্টা যাচ্ছে শরীর আর মনের উপর দিয়ে। গম্ভীর মুখে ডাক্তার সাহেব এক এর পর এক পাতা উল্টে দেখে যাচ্ছেন ওদের তিনজনের রিপোর্ট। কারো মুখে কোন কথা নেই। অসহ্য এক নৈশব্দের ভেতর দিয়ে কেটে যাওয়া প্রতি মুহুর্ত অনেক লম্বা মনে হয়। মনে হয় যেন দিনের পর দিন পার হয়ে যাচ্ছে।
-আপনাদের ছেলের জন্ম কিভাবে হয়েছে? নরমাল না সিজার? গমগম স্বরে জানতে চাইলেন অবশেষে ডাক্তার সাহেব।
-নরমাল। নিপা উত্তর দেয়।
-ভাল করে মনে করে দেখুন আপনারা দুইজন, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে আপনারা কখনও রক্ত নিয়েছেন কিনা? ভেবে চিনতে উত্তর দিন আমাকে।
-আমি কখনও রক্ত নেইনি। কখনই না। বলে কাশতে থাকে নিপা। শব্দ কমানোর জন্য তাড়াতাড়ি মুখে ওড়না চাপা দেয়।
-আপনি? ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুর রহমান সাহেব! আপনি রক্ত নিয়েছেন কখনও?
দুইদিকে মাথা নেড়ে জানায় তুহিন, সেও কখনো রক্ত নেয়নি কারো কাছ থেকে।
-আই সি। কিভাবে হল তাহলে?
-জ্বী? কি কিভাবে হল? নিপা প্রশ্ন করে।
-ওহ। আপনাদের তো জানার কথা নয়। রিপোর্ট তো আমার হাতে। কিভাবে বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। ডাক্তার সাহেবের কন্ঠে এমন কিছু ছিল যা শুনে নিপার বুকটা ধড়াস করে উঠল।
তুহিন কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই হাত উঁচু করে তাকে থামিয়ে দিলেন প্রৌঢ় ডাক্তার। আপনাদের কে ভেবেছিলাম অনেক আধুনিকচেতা হবেন। আপনাদের কাছ থেকে আমি এমনটা আশা করি নি। ভাবতেও অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি। ভেবে পাচ্ছি না কিভাবে বলব। আবার না বলেও আমার উপায় নেই। আমি যা আশঙ্কা করেছিলাম তাই হল। আমি জানি না এর দায়ভার কে বা কার। সেটা আপনারাই ভাল বুঝবেন। আপনারা দুইজনই প্রকৌশলী। দেশের সেরা মেধাবী আপনারা। দেশের গর্ব। আপনাদের কেন এমন হবে? দেশ কত কিছু আশা করে আপনাদের কাছে তাই না? একসাথে কথাগুলা বলে থামলেন ডাক্তার সাহেব।
-উঃ। গোঙ্গানির মত মনে হল নিপার গলা দিয়ে বের হওয়া শব্দটা। যেন কিছু শুনতেই পায়নি। এমন ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে ডাক্তার এর টেবিলের দিকে।
-কি হয়েছে অয়নের? এইবার সাহস করে তুহিন প্রশ্ন করে।
-শুধু অয়নের না। আপনাদের সবার।
-মানে?
-দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আপনারা তিনজনই এইডস এ আক্রান্ত। আপনাদের তিনজনেরই এইচ আই ভি পজিটিভ।
-আঃ------ করে আর্তনাদের মত একটা শব্দ করে উঠল তুহিন। মুখ খাবি খাওয়া মাছের মত হা হয়ে আছে।

নিপার মনে হল ও এখনি মাটিতে পড়ে যাবে। মাথা প্রচন্ড রকমের চক্কর দিয়ে উঠল। কোলে শোয়া অয়নের কথাও যেন ভুলে গেছে। দ্রুত দুই হাতে ডাক্তার সাহেবের সামনের টেবিল খামচে ধরে যেন নিজের পতন ঠেকাতে চাইল। আচমকা ঝাঁকুনিতে অয়নের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আরো শক্ত করে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল রুগ্ন ছেলেটা। এক এর পর এক গড়িয়ে পড়া চোখের পানিতে নিপার গাল ভিজে গেছে। নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে ডাক্তার সাহেব নিপার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। এই অবস্থায় কি ভাষায় সান্ত্বনা দিতে হবে সেটা জানা নেই ডাক্তার সাহেবার। কত সময় পার হয়ে যায় এইভাবে জানে না নিপা। এসসময় চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। চোখ মুখ শক্ত করে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে, আসি স্যার।
-তোমাদের ঠিকানা আমার কাছে আছে। আমি কাগজ পত্র সব কিছু পাঠিয়ে দেব।
মাথা কাত করে নিপা সায় দেয় মাত্র। টলমল পায়ে নিপা অয়নকে জড়িয়ে ধরে দরজার দিয়ে এগিয়ে যায়। অয়ন এর বয়স মাত্র দুই বছর। কথা ঠিক মত গুছায়ে বলতে পারে না। আঙ্গুল দিয়ে চেয়ারে বসা তুহিনের দিকে ইশারা করে বলে, ‘মা! বাবা বাবা। বাবা যাবে। বাবা যাবে মা’। নিপা অয়নকে নিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসে।

কি হয়ে গেল তুহিন যেন বুঝতেই পারছে না। পাশে তাকিয়ে দেখে নিপা নেই। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দরজার দিকে যায়। দরজার খুলে দেখে নিপা ধীর পায়ে করিডোর ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। এক দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ায় নিপার সামনে।
-কই যাও নিপা? দাঁড়াও। কথা শোন।
-সরে যাও। সরো বলছি! চিৎকার করে নিপা বলে ওঠে।
-আমার কথা শোন নিপা... তুহিনের কথা শেষ হবার আগেই ঠাস করে ওর গালে চড় মারে নিপা। শব্দ এত জোরে হয় যে করিডোরের সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। পাশ কাটিয়ে নিপা চলে আসে। নিচে নেমে সরাসরি রাস্তায়। মায়ের এই আচরনে কোলে শুয়ে থাকা অয়ন ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলে। তুহিন কিছুই বলতে পারে না। একটু পরে নীচে নেমে দেখে নিপা একটা রিক্সা ডেকে তাতে অয়নকে নিয়ে উঠে পড়েছে। হুডের বাইরে থেকে শুধু ওর পা দুটো দেখা যাচ্ছে। বাঁধা দেয়ার সাহস হয় না তুহিনের। অনেক রিক্সার ভিড়ে আস্তে আস্তে দৃষ্টিসীমা থেকে হারিয়ে যায় ওদের রিক্সাটা। নিপা আর অয়নের সাথে এটাই ছিল তুহিনের শেষ সাক্ষাত। নিপা আর বাসায় ফিরে আসে নি।

দশ বছর আগের কথা......

হল ভরা নতুন ভর্তি হওয়া এঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের মধ্যে ভাষণ দিলেন অনুষদের প্রধান, ‘তোমরা দেশ ও জাতির গর্ব। দেশের মানুষ তোমাদের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। তোমরা দেশের জন্য কিছু করবে এটাই আমাদের আশা...............’

শুরু হল দিনাজপুরের এক গ্রাম থেকে উঠে আসা মেধাবী ছাত্র তুহিনের নতুন জীবন। গ্রাম থেকে আসলে কি হবে? দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি মেধাবী। উত্তরবঙ্গ থেকে রেকর্ড মার্কস নিয়ে পাস করে তুহিন। এরপর উত্তীর্ণ হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। নজরুল হলে সিট নিয়ে উঠে। শুরু হয় ছাত্রাবাস জীবন। দিনাজপুরের এক ধনী এবং বনেদী পরিবারের ছেলে তুহিন। প্রতি মাসেই বাবা বেশী করে টাকা পাঠাতেন যেন ছেলে ভাল থাকে। মা মরা এই ছেলেই যে দশ গ্রামের গর্ব। তুহিনকে নিয়ে যে তার অনেক স্বপ্ন। ভাল ছেলে হিসাবেও গ্রামে তার ছেলের কত নামডাক। এই ভাল ছেলের বদলে যেতে সময় বেশী লাগে না। নিজের আবদ্ধ গন্ডি পেরিয়ে বেপরোয়া পথে পা বাড়ায়।

হলে যেই ঘরে থাকত সেই ঘরে আরো তিনজন ছিল। তারা অন্য ডিপার্টমেন্ট এর আর তুহিনের সিনিওর। অল্পদিনের মধ্যেই সবার সাথে খাতির হয়ে যায় ওর। ঘরের মধ্যেই আড্ডাবাজি, তাশ খেলা, সিনেমা চলতে থাকে। লেখাপড়ার দিকে খুব বেশী একটা মন থাকে না। রেজাল্ট খুব ভাল কিছু হয় না। কিন্তু সেটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তুহিনের। এখন ভার্সিটিটে পড়ে। জীবনকে একটু উপভোগ করে দেখতে চায়। রুমের সিনিওর দের কাছ থেকে অনেক উগ্র জিনিস ওকে আসক্ত করে ফেলে। মাঝে মাঝে রুমেই মদের আসর বসত। ঘটা করে রুমের সবাই একটু ড্রিঙ্ক করত। সেই সাথে চলতে থাকে আসর বসিয়ে অশ্লীল সিনেমা দেখা। তুহিন বাদ যাবে কেন? ছোট বেলা থেকে শিখে আসা সংস্কারের বাণী মলাটবন্দী হয়েই থাকে। একটু একটু করতে করতে তুহিন মদের অভ্যাস রপ্ত করে ফেলে। মাঝে মাঝে নিজেও কেনা শুরু করে। টাকা তো বাবার কাছে চাইলেই পাওয়া যায়। স্বল্প শিক্ষিত যে বাবা দূরে থাকেন, তাতে ধোঁকা দেওয়া এমন কঠিন কিছু না।

অন্যদের দেখা দেখি তুহিন অনেকটা শখ করেই টিউশনি করা শুরু করে। এক বড় ভাই জুটিয়ে দেয় তাকে। ইংলিশ মিডিয়ামের এক ছাত্রকে পড়াতে হবে। ভাল মালদার পার্টি। টাকা ভালই দেবে। নিছক কৌতুহলের বসেই তুহিন টিউশনিটা নিয়ে নেয়। হাতে যদি কিছু বাড়তি টাকা আসে তো অসুবিধা কি? ধানমন্ডিতে গিয়ে পড়াতে হবে। ছোট এক ছেলে। ক্লাস ফাইভে পড়ে। তাকে পড়াতে হবে। তুহিন সানন্দে রাজী হয়। ছেলেটির বাবা বিদেশে থাকে। বাসায় থাকে শুধু ছেলেটি আর তার মা। ছাত্রের মায়ের উগ্র বেশভুসা খুব সহজেই তুহিনকে আকৃষ্ট করতে থাকে। আর মহিলাও ইশারায় হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে সুদর্শন যুবক তুহিনকে। একদিন পড়ানোর পরে টাকা দেবার নাম করে মহিলা তুহিন কে তার ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। তুহিন ঘরে গেলে তাকে জাপ্টে ধরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তুহিন বাঁধা দেয়ার কোন সুযোগ পায় না। দেবেই বা কেন? হলের বড় ভাই দের কাছ থেকে এমন কত নারী অভিজ্ঞতার কথা শুনেছে। আজকে ওর জীবনেও এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে চিন্তা করেই হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে গেল। এর পরের ঘটনার বর্ণনা করা অনাবশ্যক। হিংস্র ক্ষুধার্ত হায়না যেমন শিকারের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠিক তেমনি দ্বিধা দ্বন্দ্বের সব বাঁধন খুলে ফেলে তুহিন নিজের এতদিনের লালিত কৌমার্য হারিয়ে ফেলে এই প্রোষিতভার্যার কাছে। নারীদেহের স্বাদ পেয়ে তুহিন বিভোর হয়ে যায়। ভুলে যায় পেছনের সব কথা। মনে থাকে না বৈধ অবৈধতার সীমারেখার কথা। ছাত্রকে পড়ানোর নাম করে ঐ বাসায় গিয়ে তুহিন দিনের পর দিন মহিলার সাথে মেলামেশা করতে থাকে। হলে এসে রুমমেট দের কাছে গর্ব করে তার ক্রিয়াকলাপের বর্ণনা করতে থাকে। তুহিনের এই দুষ্প্রাপ্য সৌভাগ্যে ইর্ষাণ্বিত হয়ে কেউ কেউ বলে, আহারে! এমন একটা টিউশনি যদি আমরা পেতাম। কেউবা তুহিনের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে, ‘সাবাস বাঘের বাচ্চা। তোমাকে দিয়েই হবে বৎস। চালিয়ে যাও’।

তুহিন মদের চাইতেও বেশী নারী দেহের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সপ্তাহে তিন চারবার মেয়ে মানুষের শরীর না পেলে যেন আর চলেই না। চলে যায় ছাত্রের বাসায়। কাজ হয়ে যায়। একসময় মহিলা বিদেশে স্বামীর কাছে চলে যায়। তুহিন পড়ে মহা বিপদে। এখন কার কাছে যাবে ও? আবার চেষ্টা করে একটা টিউশনি জুটিয়ে ফেলে। এইবার পড়াতে হবে এক কলেজ ছাত্রীকে। মনে মনে স্বপ্ন দেখা শুরু করে তুহিন। যে করেই হোক মেয়েটাকে পটাতে হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। প্রথমে প্রথমে খুব ভালমত পড়িয়ে মেয়েটির বাসার সবার মন জয় করে ফেলে ও। এরপরে নজর দেয় ছাত্রীর দিকে। আস্তে আস্তে পটাতে থাকে তুহিন। অল্পবয়সী মেয়ে খুব সহজেই তুহিনের বোনা ফাঁদে পা বাড়ায়। একদিন বাসায় কেউ না থাকার সুবাদে মেয়েটি তার প্রিয় তুহিন ভাই কে বাসায় ডেকে পাঠায়। তুহিনের আকন্ঠ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া যৌবনে যেন মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। নিশ্চিন্তে মেয়েটির বাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে বিছানায় তোলে। সুকৌশলে মেয়েটিকে বিদ্ধ করে অভিজ্ঞ তুহিন। মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তুহিনের কাছে সতীত্ব বিলিয়ে দেয়। সতীচ্ছদ ছিঁড়ে যাবার মুহুর্তে মেয়েটির চিৎকার খুব উপভোগ করে সে। কুমারীর রক্ত নিজের চোখে দেখে অনাবিল আনন্দ পায়। মনে মনে ভাবে, এতদিনে একটা আসল মাল পেলাম!

এরপরে অবশ্য মেয়েটি আর পড়ে না তুহিনের কাছে। ওদের বাসা থেকে না করে দেয়া হয় তুহিনকে। আবার মহা বিপদে পড়ে যায় তুহিন। এখন কি হবে? রুমমেট দের সাথে আলাপ করে। তারা জানায় এটা কোন ব্যাপারই না। আবার হয়ে যাবে। কিন্তু তুহিন যে চরম নেশায় আসক্ত। ধৈর্য্য যে আর বাঁধ মানে না। একদিন এক বড় ভাই পরামর্শ দিল তুহিনকে, রাতের বেলা চন্দ্রিমা উদ্যানে যেতে। ওখানে গেলে জিনিস পাওয়া যাবে। সর্বনাশা পথে পা বাড়ায় দেশের গর্ব, বাবার গর্বের ধন তুহিন। এরপর থেকে নিয়মিত পতিতাগমন করতে থাকে। দিনে একবার ভাত না খেলেও চলে কিন্তু নারী দেহ না পেলে যেন চলে না। মাথা কাজ করে না। পরীক্ষা ভাল হয় না। পড়া ভাল হয় না। নৈতিক অবক্ষয়ের চরম সীমায় চলে যায় ও। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারে না। এমনকি ক্লাসমেটরাও কেউ না। ক্লাসে দিব্যি ভাল মানুষ। কখন যে সর্বনাশা জীবানু দেহে বাসা বাঁধে টের পায় না। সব কিছু জানা সত্ত্বেও বেপরোয়া থাকে।

ফাইনাল ইয়ারে গিয়ে কথা হয় নিপার সাথে। সেই থেকে ভাল লাগা। প্রেম। এরপর পাস করার পরে সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত পড়ায়। নিপার সাথে প্রেম হবার পরে তুহিন তার খারাপ অভ্যাস থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। কিন্তু নিজের অগোচরে সর্বনাশ যা হবার তা হয়েই যায়। নিপা ঘুনাক্ষরেও কিছু জানতে পারে না। অন্য এক বন্ধু শাহরিয়ার, নিপাকে তুহিনের এইসব কথা বলে। কিন্তু নিপা পাত্তাই দেয় না। তখন সে তুহিনের প্রেমে বিভোর। পারিবারিক ভাবেই তুহিনের সাথে নিপার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কিছুদিন পরেই অয়ন পেটে আসে। অয়নের জন্মের পর থেকেই নিপাও অসুস্থ হয়ে যেতে থাকে। সাধারণ বাচ্চাদের যেমন বেড়ে ওঠার কথা অয়নের তেমন হয় না। সব সময়ই কোন না কোন অসুখ লেগেই থাকে। দুই বছর পার হয়ে যায়। এরপরের ঘটনা সবার জানা আছে। পুনঃ উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন.........

পুনশ্চঃ সবার প্রথমে মারা যায় অয়ন। এরপর ধুকে ধুকে চার মাসের মধ্যে নিপাও মারা যায়। তুহিনের কি হল আমাদের সেই ব্যাপারে আর কোন আগ্রহ নেই। মরণব্যাধিতে মরতে হবে তাকেও। নিপা ঐ দিনের পরে আর কখনই তুহিনের সাথে যোগাযোগ রাখেনি। প্রয়োজনও মনে করে নি। দেশ ও জাতির গর্ব যখন নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছায় বিপথগামী হয় তখন মানবকুল থেকে ভ্রষ্ট হয়ে সে হয় ‘কুলভ্রষ্ট’ আর সমাজের জন্য এমনই উচ্ছিষ্ট আবর্জনা যেমন নারীদেহ থেকে নির্গত ‘রজঃস্রাব’। স্বীয় দেহ থেকে নির্গত হলেও কোন নারী যেমন একে সাদরে বরণ করে নেয় না তেমন সুস্থ সমাজে বাস করে আমরাও এমন তথাকথিত ‘দেশের গর্ব’ অনাকাঙ্খিত মেধাবী আবর্জনাকে মেনে নিতে পারি না।

Author's Notes/Comments: 

7th September 2011

View shawon1982's Full Portfolio