নিভৃত যোগী

সদা ধ্যানে মগ্ন থাকে এক আজব তপস্বী,

অন্ধকারে থাকে বসে, দেখে না রবী শশী!

ঘন এক অরণ্যেতে একাই বাস করে,

মাঝে মধ্যে দেখা মেলে মরুর বালুচরে!

একা একা থাকতেই সে বড় ভালবাসে,

কেই না আসলেও কিই বা যায় আসে!

চায় না কেউ যেন তাকে দেখে ফেলুক,

সত্যি বলতে কি, সে বড় বেশী লাজুক।

নিজের সাথে রাখে এক অমুল্য রত্নখনি,

কভু শেষ হয় না যে, অপূর্ব সব মণি!

যতই নাও শেষ হবে না সেই রত্নভান্ডার,

নিভৃতচারী সেই যোগী যে তারই কর্ণধার!

অধোবদনে থাকে সে, নিম্নমুখী তার দৃষ্টি,

কভু সে কয়না কথা, বিধাতার কি সৃষ্টি!

মাঝে মাঝে ঝরায় সে অঝোর বারিধারা,

তার মত নিঃস্বার্থ আর আছে কারা?

উপকার করেই শুধু, চায়না কখনো কিছু,

তার সাহায্য নিতে তো কেউ ছাড়ে না পিছু।

দৃষ্টিগোচর হতে চায় না, অন্তরালে থাকে,

তাইত সবে তারে গোপন করেই রাখে।

অচল সব তাকে ছাড়া বিশ্বতেপান্তরে,

তাকে ছাড়া সবাই হায়, কেমন গুমরে মরে!

যদিও তার ক্ষুধা লাগার সঙ্গত নেই কারণ,

তথাপি অন্যের ক্ষুধা সে করে নিবারণ!

এমন কাউকে বোধহয় পাওয়া যাবে না,

জীবদ্দশায় দেখেনি কভু যোগীর আরাধনা।

তার সেবা করতে তো সবাই ভালবাসে,

দিনের মধ্যে কয়েকবার তার কাছেই আসে!

আসতে না চাইলেও সকলেই হয় বাধ্য-

যোগীদর্শন করবে না? এমন কার আছে সাধ্য?

তার মুখ দর্শন করেই তো দিনের শুরু হয়,

বিনা দর্শনে নিশিযাপন? কভু সম্ভব নয়!

শৈশব হতে বার্ধক্য তাবৎ সবাই তাকে চায়,

আমৃত্যু তারই সঙ্গ সবাই তো পায়।

অহর্নিশি যোগী তো একই স্থানে রয়,

তাইত তাকে সবে নিভৃত যোগী কয়!

মাঝে মাঝে দাঁড়ালেও সদাই বসে রয়,

শত কাজেও তার যেন নেই কোন ক্ষয়।

যোগী সে যেমনই হোক, ধবল বা কৃষ্ণ,

নেই তার কোন অভিযোগ, নেই কোন প্রশ্ন।

শৈশবে যখন তার বয়স ছিল অল্পসল্প,

তার ত্রাসে অস্থির হত সবাই বেশী-অল্প!

কৈশর হতে সে পেয়েছে এক অপার স্থৈর্য,

পূর্বের মত নেই আর বেড়ে গেছে ধৈর্য্য!

যৌবনে সে লাভ করে অপার শক্তির আধার,

তখনই সে অতিক্রম করে সব বিঘ্ন বাঁধার।

বার্ধক্যে গেলে তার শক্তি কমে যায়,

সারাটা জীবন যদি কিছু একটা খায়!

যোগীর কর্মের একটা দিক এখনো অজানা,

সে তো হায় মহাইতিহাস করলো রচনা।

বিশ্বব্রহ্মান্ডের কোথাও নেই তারই তুলনা,

মাথা খুঁটে মরলেও তো মেলেনা উপমা।

বেশীরভাগ সময় সে যদিও ঘুমিয়ে থাকে,

মাঝে মাঝে হঠাৎ করে ঠিকই জেগে ওঠে।

ঘুমে থাকলে যোগী কিন্তু সত্যি বড় নরম,

বজ্রের মত কঠিন হয়, হলে সে গরম!

তন্দ্রা থেকে জাগান তারে হয় খুবি সহজ,

পুনরায় ঘুম পাড়ানো নয় অত সহজ।

ঘুম থেকে উঠেই সোজা দাঁড়িয়ে রয়,

রাগ করলে কিন্তু সে থুথু ছিঁটিয়ে দেয়!

শুধুমাত্র দাঁড়ালে যোগী উর্ধ্বপানে চায়,

নতুবা সদা সর্বদা নিম্নমুখেই তাকায়।

স্পর্শ করলেই শুধু তারে বোঝা যায়,

ঘুমের ঘোরে রয়েছে যোগী অনন্ত সাধনায়।

নিভৃত যোগী ভালবাসে যেতে একটি পথে,

একা একাই যায় সে, যায় না কোন রথে!

সেখানে যেতে হলে তপস্যা করতে হয়,

ওখানে গেলেই যোগীর ইচ্ছা পূরণ হয়!

সেই জায়গায় যাওয়া তো এত সহজ নয়,

ঠিক পথে না গেলে হয়ে যাবে প্রলয়!

অন্য এক বনের প্রান্তে সেই পথটি মেলে,

উপাসনার ফসল মেলে সেই পথে গেলে।

মরুর প্রান্তে সেই পথ যাবে কভু দেখা,

কত যোগী গেছে সেথা, ইতিহাসে নেই লেখা।

সেই পথে পাওয়া যায় এক অন্ধকার ঘর,

সখ্যতা হয় যোগীর এবং ঘরের পরস্পর!

তার জন্য সব ঘর সমান নিরাপদ নয়,

বিপদের কথাটা তাই আগেই ভাবতে হয়।

উষ্ণ সেই কোমল ঘরে যোগী থাকতে চায়,

কিন্তু সর্বকা সেথায় সে থাকতে নাহি পায়।

বজ্রসম কঠিন হয়ে সেথায় প্রবেশ করে,

পুষ্পসম কোমল হয়ে নিজ ভুবনে ফেরে।

এমন কি আছে সেই আঁধার ঘর পানে?

এ প্রশ্নের উত্তর তো নিভৃত যোগী জানে।

ঘরের ভিতর সে যায় ধীরস্থির লয়ে,

প্রবেশ করেই সে মাতে অদ্ভুত প্রলয়ে!

সারা দেহে তার যেন কি যে হয়ে যায়,

চরম শিহরণ পুরা অঙ্গে আপনিই খেলে যায়।

বারবার ঘুরে ফিরে যোগী দেখে সেই ঘর,

যদিও সে কিঞ্চিত পরে হয়ে যাবে পর!

যোগী কিন্তু সেই ঘরে একা একা যায়,

অমুল্য তার রত্নভান্ডার সাথে নাহি নেয়।

রত্নভান্ডার রাখে সে ঘরের প্রবেশ মুখে,

এমনটা করে সে অপার আনন্দ সুখে!

বারবার ঘুরে ফিরে সে একই পথে আসে,

এইজন্যই সে বারংবার ধ্যান-তপস্যায় বসে!

স্বর্গীয় শান্তি যোগী লাভ করে সেথা-

এমন সুন্দর জায়গা আর পাবেই বা কোথা?

সময় শেষ হলেই সে বের হয়ে আসে,

এরপর সে একটা রহস্যের হাসি হাসে!

সেই হাসির গূঢ়তত্ত্ব কার আছে জানা?

যার খুশি জেনে নিক, বলতে নেই মানা।

ঘর হতে যখন সে বের হয়ে আসে-

রত্নখনির কিছু মণি ঘরে রেখে আসে!

মণিরত্ন উপহার দেয় ঘরকে ভালবেসে,

কৃতজ্ঞ থাকে যোগী ঘরের কাছে এসে।

এমনটা চলছে তার, সেই হতে আদিকাল,

চলবেও সবসময় এমনকি অসীম অনন্তকাল!

জীবসৃষ্টির মূলতত্ত্ব নিভৃত যোগী জানে,

সকলকে তাই সে নিজের দিকেই টানে।

Author's Notes/Comments: 

21st & 22nd December 2002

View shawon1982's Full Portfolio