আমরা কেউ ভাল নেই। আমাদের কারও মনের অবস্থা ভাল নেই গত ২১ জুলাই প্লেন দুর্ঘটনা এবং মাইলস্টোন স্কুলের এতগুলো নিষ্পাপ দাহিত শরীর দেখে, এতগুলো হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের দেখে আমরা কেউ ভাল নেই। ভাল থাকা যায় না। বুকের উপর যন্ত্রণার যে পাথর চেপে বসেছে সেটা নামানো যাচ্ছে না। কোন সুস্থ বিবেকধারী মানুষ এটা ভুলতে পারছে না। সন্তানের জ্বরও যেখানে বাবা মায়ের সহ্য হয় না, সন্তানের একটা ‘কাশি’ও যেখাবে বাবা মায়ের বুকের মধ্যে গিয়ে লাগে, সেখানে একটা নিষ্পাপ বাচ্চার জ্বলন্ত শরীর বাবা মা কি করে সহ্য করবে? আমরা যেখানে মেনে নিতে পারি না, সেখানে বাবা মা কি করে সহ্য করবে? চোখের নিমেষে কি থেকে কি হয়ে গেল! ক্ষণে ক্ষণে যখনই মনে আসছে, যখন দাহিত ছবিগুলো সামনে আসছে তখনি চোখ ছাপিয়ে লোনা পানি নেমে আসছে! ওই সব বাচ্চা তো আমার বাচ্চা! হ্যাঁ আমার বাচ্চা! শিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করার পর থেকে সমস্ত শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের থেকে কোন পার্থক্য তো করতে পারি না। যে আমার কাছে একটা সূত্রও শিখেছে সমগ্র জীবনে, সেও আমার কাছে সন্তানতুল্য। যে সব বাচ্চাকে অকালে চলে যেতে দেখলা, সবাই তো আমার ঘরে জন্মদেয়া বাচ্চাদের বয়সী! অথবা তার চেয়েও ছোট! এই ঘটনা তো আমাদের যে কারও সাথেই যে কোন সময়ে ঘটতে পারতো! মন থেকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না এই কথা। এই ছবিগুলো তো মুছে যাবার না। নিজেকে তো প্রবোধ দিতে পারছি না কিছুতেই! নিজেকে এখনও কিছুটা মানুষ মনে হয়। বারবার শুধু এটাই মনে হচ্ছে, আমার নিজের অনেক বেঁচে থাকা হয়েছে। এই জীবনের খুব বেশী আর দরকার আছে বলে মনে হয় না। আমার এই জীবনের বিনিময়েও যদি এই নিষ্পাপ জানগুলো ফিরিয়ে দেয়া যায়, তাহলে আমার নিয়ে নেয়া হোক। তবুও বাচ্চাগুলো ফিরে আসুক। জীবনের কিছু দেখার আগেই চলে গেল ওরা। কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই ছাই হয়ে গেল। সমস্ত ক্লাস জীবন্ত চিতা হয়ে জ্বলে উঠলো। আহ! লিখতে গিয়েও তো সহ্য হয় না। সহ্য হয় না।
অনেক পোস্ট থেকে দেখেছি, এবং এটা খুব মিথ্যা বলেও মনে হয় না কারণ আমরা বাংলাদেশী। আমি জেনেছি দুর্ঘটনার দিন পানির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, সি.এন.জি অটোরিক্সার ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। যদি এটা সত্যি হয়ে থাকে, আমি কায়মনোবাক্যে আল্লাহ্ পাক জাতের কসম খেয়ে বলছি, যারা এই কাজ করেছে তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাক। এই সমস্ত দানবরা পশু খেতাব পাবার যোগ্যতাও রাখে না। এরা সবই জীবন্ত শয়তান, পিশাচ, দানব। এরা সব মরে যাক। এই সমস্ত দানব পুড়ে মরুক বা জ্বলে মরুক তাতে কিছু যায় আসে না। আমার যদি একটাও পূন্য জমা থাকে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, আমি সেটার বিনিময়ে হলেও বদদোয়া করি, এসব মানুষ সমূলে ধ্বংস হয়ে যাক। এদের বেঁচে থাকার কোন দরকার নেই। এরা মানুষ না। এদের চেয়ে বড় মুনাফিক শয়তান আর কিছুই হতে পারে না। জাহান্নামের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক এইসব স্বার্থলোভী অর্থলোভী পিশাচদের। আমরা জ্বলন্ত সন্তাদের শরীর দেখেও যাদের মনে দয়া আসেনি, যারা মানুষের কষ্টতম সময়ের সুযোগ নিয়ে এসব করেছে, এদের জন্য জাহান্নামই হোক উত্তম জায়গা।
বাংলাদেশ নাকি মুসলমানের দেশ বলে কেউ কেউ? এজন্য যে এদেশে মুসলমান(!) এর সংখ্যা বেশী? মুসলমান কাকে বলে? কারা মুসলমান? আমাকে একটু বুঝিয়ে দেবেন। আমি তো মুসলমান বলতে সেটাই বুঝি, যে নিজে ক্ষুধার কষ্টে মরে যাবে তাও অন্যের ক্ষুধা সহ্য করতে পারবে না। আমি মুসলমান বলতে সেটাই বুঝি যে নিজে না খেয়ে থাকলেও শত্রুকে রুটি বানিয়ে খাওয়াবে। এদেশে মুসলমান কোথায়? যাদুঘরে? কোন যাদুঘরে মুসলমান দেখা যাবে আমাকে একটু বলবেন তো। আমি টিকেট কেটে হলেও এওটু মুসলমান বা কমপক্ষে একটু মানুষ দেখে আসি। আপনি হিন্দু বলবেন? আমার কাছে হিন্দু তো সেই যে মহানাম যজ্ঞের অনুষ্ঠানে দর্শনার্থী সারির প্রথম আসনে একজন অন্যধর্মীকে বসতে দিয়েছে। রাখী বেঁধে দিয়েছে অন্য ধর্মের মানুষের হাতে। আমি তো খ্রিষ্টান বলতে তাকেই বুঝি যে ক্রিস্টমাসের কেক তার প্রতিবেশী কে পরম যত্নে খাইয়েছে। আমি তো বৌদ্ধ বলতে তাকেই দেখেছি যে যে অহিংসা কে ব্রত করে মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছে। আমার কাছে এটাই তো ধর্ম! অন্য কোথাও দেখিনি, শুধু বাংলাদেশে দেখেছি, রমজান মাস এলে খাবার থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠিয়ে দেয়া হয়। যারা এই কাজ করে, যারা ধর্মকে ঢাল বানিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়, এরা মুসলমান? এরা মানুষ? প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রইলো।
যে সব মহাত্মা শিক্ষক বাচ্চাদের জীবন বাঁচাতে নিজেদের আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের কথা মনে যতবার এসেছে, ততবার দীর্ঘশ্বাস বের করে একটা প্রার্থনাই করেছি, আল্লাহ্ উনাদের কে সমস্ত হিসাব থেকে মুক্তি দাও। তাঁদের কোন হিসাব তুমি নিও না। মন থেকে বলতে চাও, আপনারা মানুষ ছিলেন। পৃথিবীতে মানুষের থাকার কথা ছিল। আপনারা ফেরত আসুন। আমাদের মত দানবদের থাকার দরকার নেই। পৃথিবীটা আর বীরভোগ্যা নয়; পৃথিবীটা এখন দানবভোগ্যা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কে এখন আর সোনার বাংলা, অঙ্গার বাংলা মনে হয়। মানুষের আচরণ এত নিকৃষ্ট হয়ে গেছে। শেষ কথাটা বলি এবার। মাইলস্টোন স্কুলের এই ঘটনাকে পুঁজি করে যারা কোন রকম ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে, সেটা রাজনৈতিক ফায়দা হক, লাইক কমেন্ট ভিউ রিচ এর ফায়দা হোক, ব্যবসায়িক ফায়দা হোক, আল্লাহ্ সবাইকে ধ্বংস করে দিন। আমিন।