১২ নভেম্বর ২০২২

জীবন নিয়ে ভাবাবভাবির কি শেষ আছে? প্রতিনিয়তই কত কিছু মনে হচ্ছে। কিছু আনন্দের কিছু হতাশার। আনন্দ আর হতাশার মাঝামাঝিই জীবন চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ভাবি যে এত চিন্তার কি আছে? আবার চিন্তা করবো না বলে যখন চিন্তা করি তখন মনে হয় চিন্তাটা আরও বেড়ে যায়। যদিও মনে করতে চাই না তবুও বারবার মনে পড়ে বয়স বেড়েই যাচ্ছে। কোন ভাবেই তাকে ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। মনের বয়স যদিও বাড়েনি কিন্তু শরীরের বয়স কি আর আটকে রাখা চলে? চলে না। অবশ্য মনের নিয়ন্ত্রণ কতকটা কিন্তু আমাদের উপর। ইচ্ছে হলে বুড়িয়ে যাওয়া চলে আবার ইচ্ছা হলে মনের বয়সের লাগাম ধরে রাখা যায়। আমি খুব সম্ভবত জীবন পণ করেই মনের বয়সের লাগাম টেনে ধরেছি। ধরেই আছি। কোনদিকে গন্তব্য সেটা নিয়ে ভাবি না। শুধু ভাবি আমি যেমন আছি তেমনটাই থেকে যাই। তবুও মানুষের মন তো! নানা রকম চিন্তা ভর করে। কিছু কিছু স্মৃতি মনকে যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি কিছু কিছু আমার ভারাক্রান্তও করে দেয়। এই নিয়েই আমাদের যাপিত জীবন। অনেক কিছুই মনে হয়। আজকে অফিসে যাবার পথেও কত কিছু আগুপিছু ভাবলাম। কাউকে তো পাইনা আমার এসব ‘হাবাজাবা’ শোনানোর মত। তাই নিজের মত করে লিখে রাখি। কার কি হয় জানি না, তবে লিখে রাখাটা আমার জন্য থেরাপির মত কাজ করে। মনের চঞ্চলতা কমে কিছুটা।

 

ভোর থেকেই মনে হচ্ছিলো আমাদের জীবন হচ্ছে নদীর মত। নদীর একটা শুরু আছে। নদী প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মেশে সমুদ্রে। সমুদ্রে যখন মিলে যায় তখন নদীর অস্তিত্ত্ব আর আলাদা করে চেনা যায় না। অতি বিশাল সমুদ্রে সে চিরতরে হারিয়ে যায়। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনটাও এই প্রবাহিত নদীর মতই। এর শুরু আছে। পার্থিব জীবনের শেষও আছে। আর এই পার্থিব জীবনের শেষে আমরাও মিশে যাবো অসীমের সাথে। অসীমের প্রবাহে আমরা বিলীন হয়ে যাবো। তখন আমাদের অস্তিত্ত্ব আর আলাদা করে খুজে পাওয়া যাবে না। এক মহাপ্রবাহে আমরা মিশে যাবো। পার্থিব লোকালয়ের সাথে আমাদের আর কোন যোগাযোগ থাকলো না। মানুষ আসবে আবার মিশেও যাবে কালের স্রোতে। কিছুদিন হয়ত আমাদের মনে রাখা হবে। এরপর সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে। তখন কেমন হবে আমাদের চাওয়া পাওয়ার সব হিসেব? কে মিলিয়ে দেবে তখন আমাদের সেই হিসেব। সেই অসীমের মহাপ্রবাহে আমাদের পরিণতি কি হবে আমরা কেউ জানি না। শুধু অপেক্ষা। গন্তব্য এবং ফলাফল দুটোই আমাদের অজানা। পার্থিব জীবন যেমন অনিশ্চিত ঠিক তেমনি আমাসের অসীমের মহাপ্রবাহের যাত্রার ফলাফলও অনিশ্চিত। এই সবই মনে হচ্ছিলো আমার সারাদিন ধরে। আমার এই চিন্তাগুলো যেন এলোমেলো না হয়ে যায়, এই ভাবনা থেকে দ্রুত একটা চিঠি লিখে ফেললাম। আমার এক পেন-ফ্রেন্ড কে। না জানি আমার সেই লেখা পড়ে ও কি ভাববে! যাই হোক, যা বলতে চেয়েছিলাম বলা হয়ে গেল।

 

আজকে আমার চাকুরিস্থলে বাচ্চাদের কয়েকটি স্কুলের বিজ্ঞান প্রজেক্ট এর প্রদর্শনী ছিল। ওরা নিতান্তই সব ছোট ছোট বাচ্চা। খুব বেশী হলে টু, থ্রি বা ফোর এ পড়ুয়া হবে ওরা! আমি ওদের বানানো সুন্দর সুন্দর প্রজেক্ট গুলো দেখছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। ইচ্ছে হল ওদের কিছু প্রশ্ন করি। কিন্তু ওদের মুগ্ধ আনন্দিত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি আমার সব প্রশ্ন ভুলে গেলাম। শুধু মনে হচ্ছিল এই বাচ্চাগুলোর হাসি যে অপার্থিব সৌন্দর্য তৈরি করেছে, সেখানে আমার কিছু বলা দূষণ ছাড়া আর কিছুই তৈরি করবে না। আমি মুগ্ধ হয়ে ওদের প্রজেক্ট দেখছিলাম।

 

 

দর্শক সারিতে দেখি আরও অনেকগুলো বাচ্চা মহানন্দে চেয়ারে পা দুলিয়ে বসে খোসগল্পে মশগুল আর অরা সবাই কাপ নুডুলস খাচ্ছিলো। আমার মনের ভেতর মনে হল দমকা বাতাস প্রবাহিত হয়ে গেল। আমার মন চাইলো আমি ওদের সাথে একটু ছবি তুলি। ওদের ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে তার হাতেই আমি মোবাইল তুলে দিয়ে বললাম, আপা আপনি ওদের সাথে আমার ছবি একটু তুলে দেবেন? ভদ্রমহিলা হৃষ্টচিত্তে আমার কতগুলো ছবি তুলে দিলেন। যদিও বাচ্চাগুলোর সাথে আমি বেমানান কিন্তু ওদের সেই কলকাকলি আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিচ্ছিলো। ওদের সেই আনন্দ নিয়ে নুডুলস খাওয়া দেখে আমার মনে হলো, আহারে আহারে কি আনন্দ! কি মজার শৈশব! এই ছোট বয়সে নামকরা একটা ভার্সিটি ওরা আসতে পেরেছে। ওদের আনন্দের সীমা নেই। কিন্তু ওরা কি বুঝেছে, ওদের পেছনে বসে থাকা আমার চোখ যে তখন ছলছল করে উঠছে। আমার শুধু ডুকরে ডুকরে বলতে ইচ্ছে করেছিলো, “বাবারা তোমরা তোমাদের শৈশব থেকে আমাকে দুই এক ছটাক শৈশব ধার দেবে? আমার যে এমন আনন্দের স্মৃতি নেই! আমাকে কিছুক্ষণের জন্য কি তোমাদের মত হতে দেবে?” ঘড়িতে দেখলাম দুইটা বাজে। আমার পরবর্তী ক্লাস। আমার দাহিত শৈশবকে টুকরো টুকরো করে অডিটোরিয়ামে রেখে দিয়ে আমি পা বাড়ালাম আমার উপর আরোপিত দায়িত্ব নিরসনে।   

View shawon1982's Full Portfolio