২২ নভেম্বর ২০২১

‘সাধ’ আর ‘সাধ্য’ দুইটা শব্দ লিখতে গেলে মাত্র একটা য-ফলা এর পার্থক্য। কিন্তু এই দুই শব্দের মধ্যের ওই য-ফলাটাই বাস্তব জীবনে অনেক কিছু নির্ধারণ করে দেই। সাধ অসীম হতে পারে কিন্তু সাধ্য সবসময়ই সসীমের অতি ক্ষুদ্র গন্ডিতে ঘুরপাক খেতে থাকে। সাধ কে আমরা আমাদের ইচ্ছের কাছে পরাজয় বরণ করাতে পারলেও সাধ্য আমাদের কে পরাজয় বরণ করিয়েই ছাড়ে। প্রত্যেকেই যদি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি তাহলে এর উত্তর আমার নিজেকেই নিজে দেয়া হয়ে যাবে। শপিং মল থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার পর্যন্ত প্রতিক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটছে। এভাবেই ঘটে চলবে সারাজীবন। এটাই জীবনের নিয়তি আর এভাবেই আমাদের সমন্বয় করেই বেঁচে থাকতে হয় সারাজীবন। আর এই দুই শব্দের মধ্যে যদি আমরা সমন্বয় করতে গিয়ে হোঁচট খাই তাহলে জীবনে যে সীমাহীন অতৃপ্তি ভর করে তা পুরো জীবনটাকেই বিষাক্ত করে তোলে। সম্পর্ক কে নষ্ট করে দিতে পারে। যে জিনিস দূরে, যা আমার সাধ্যের বাইরে সেটাকে সাধের মধ্যে এনে কষ্ট পাওয়া অনর্থক আর নিজের জীবনের ক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি অন্তত সেটাই বুঝে নিয়েছি এতদিনে ভালমতো। আরও বুঝে নিয়েছি যেটা সেটা হল, সাধ অবাস্তব হতে পারে কিন্তু সাধ্য কিন্তু সবসময় বাস্তবতার চৌহদ্দিতেই থাকে।

 

সাধ আর সাধ্যের সাথে আরেকটা জিনিস জড়িয়ে থাকে। সেটা আমাদের বয়স। বয়সের উপরে ভিত্তি করে আমাদের অনেক আশা আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন হয়েই যায়। সেই ভার্সিটিতে পড়ার দিনগুলোতে বয়স যখন ২৫ ছিল, তখন যে জিনিস কাছে পাবার জন্য ভেতরে ভেতরে মরিয়া হয়ে উঠতাম; এখন সেই আমিই বয়স প্রায় চল্লিশের দ্বারপ্রান্তে এসে সেই জিনিসিটাকেই হয়ত আর দুই পয়সাও দাম দিচ্ছি না। মনে পড়লে বরং হাসিই পায় যে, এই জিনিসের জন্য একসময় মরিয়া ছিলাম? সেটা লেখাপড়া বা রেজাল্ট থেকে শুরু করে পার্থিব যা কিছুই হোক না কেন!

 

ঐ সময়ের আরও একটা কথা এখানে উল্লেখ করা যেতেই পারে। ওই বয়সে আমি কবিতা একদমই পছন্দ করতাম না বললেই চলে। আমার কাছে কবিতা কিছু অর্থহীন ছত্রের আর শব্দের সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর এখন? এখন কবিতা ছাড়া আমার কোন কোন দিন অর্থহীন মনে হয়। প্রতি মাসে দুইবার ‘দেশ’ পত্রিকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি নতুন কবিতা পড়ার জন্য। নতুন করে কিছু কবিতা লেখার জন্য মন ছটফট করতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে আমি বুঝতে পারি আমিও অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছি। এখন আমি কবিতার মধ্যে আত্মার চিত্রায়ন খুঁজে পাই। আগে যে জিনিস আমার কাছে বিরক্তিকর আর অবাস্তব ছিল এখন সেটাই আমার আত্মার অংশ হয়ে গেছে। এখন আমি মাঝে মাঝে নিজেকে কবিতার মধ্যে খুঁজে পাই। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, একজন কবি কিভাবে পারেন আমার মনের কথাগুলোকে এভাবে কিছু শব্দের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে?

 

 

সাধ আর সাধ্যের মৃত্যু আমার জীবনে একবার ঘটেছিল খুব ভালকরেই। সেই কথা মনে পড়ে যায় প্রায়ই। আজকে লেখা শুরু করেছিলাম মূলত সেটাই লিখবো বলে। এতক্ষণ যা যা লিখলাম সেটা লিখে মনে হচ্ছে লেখার ব্যপ্তি ইতিমধ্যেই অনেকটা বাড়িয়ে ফেলেছি। আমার কথা তো আর ফুরিয়ে যাচ্ছে না। একসময় লিখে ফেলবো। আজকে না হয় আরেকদিন  তো লেখা যায়ই। লেখার সাধ মনের মধ্যে কখনই ফুরোয় না আমার। 

View shawon1982's Full Portfolio