১৪ মাসের কারাবাস থেকে মুক্তি

অবশেষে আমার ‘মুক্তি’ হলো! বহু আকাঙ্খিত মুক্তি। ১৪ মাসের কারাবরণ তো খুব সহজ কথা নয়। তাও আমার জন্য। অবশ্য আমি যে ছাঁচে গড়া মানুষ, তাতে আমার এতেও শিক্ষা হবে কিনা জানি না। আমার আবারও কারাবরণ করতে হতে পারে। প্রতিবার চেষ্টা করি এবার আর বন্দী না হই। তা আর পারি কই? নিজের আবেগের কাছে পরাজিত হয়ে নিজের অগোচরে বন্দী হয়ে যাই। এরপরে যতই হাঁসফাঁস করি না কেন, আমার যন্ত্রণার সেই আস্ফালন কারও চোখে পড়ে না। কেউ সেটা দেখে না। আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে কি নিদারুণ যন্ত্রণা আমি ভোগ করি, সেটা কেউ বুঝবে না। বোঝার চেষ্টাও করবে না। কার কি যায় আসে তাতে? বন্দী তো আমি অন্য আর কেউ তো না। গত ১৪ মাস ধরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমি সেটা। অনেক ধৈর্য ধরেছি। অবশেষে মুক্তি পেলাম। কিছুটা হলেও স্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন পরে মুক্ত বাতাসে একটু হালকা বাতাসের নিঃশ্বাস নিতে পারছি। ভারী বাতাসের নিঃশ্বাসে যে কি অব্যক্ত যন্ত্রণা লুকানো থাকে, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।

 

ড. হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। উনার একটা লেখায় পড়েছিলাম দুই লাইনের প্রচলিত একটা ছড়া-

 

“পুড়লো কন্যা; উড়লো ছাই

তবেই কন্যার গীত গাই”

 

প্রচলিত এই লোককথার দুই লাইন শুধু কন্যা যেন, সমাজের ওই প্রতিটা মানুষের জন্য প্রযোজ্য যারা “উলুবনে মুক্তা” ছড়ায়। আরেক দলও আছে। যারা কোন স্বার্থচিন্তা ছাড়াই মানুষের উপকারের জন্য ঝাপায়ে পড়ে তারা। এই দুই শ্রেণীর মানুষ যতই ভাল কাজ করুক না কেন আর যাদের জন্যই করুক না কেন, এদের স্বীকৃতি হবে না। এরা এদের স্বার্থহীন উপকারের কোন স্বীকৃতি পাবে না। লোককথার ভাষ্যমতে, পুড়ে যাওয়া কন্যার গীত যতই গাওয়া হোক না কেন, কন্যা তো তার জীবদ্দশায় সেই গীত শুনতে পায় না। তেমন শুনতে পায় না স্বার্থহীন মানুষগুলোও। উলটো কি হয় জানেন? বলছি-

 

অনেকগুলো আঙ্গুল তাক করা থাকে সেই মানুষটার দিকে। মানুষের উত্থিত আঙ্গুলির নিশানা যে বন্দুকের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে সেটা কি আপনারা জানেন? তাঁরা বুঝবেন না যাদের দিকে আঙ্গুল তাক করা হয়নি। আমি বুঝেছি। আমি ১৪ মাস শুধু কারাবন্দীই ছিলাম না, বরং অনেকগুলো দৃশ্যমান অদৃশ্যমান আঙ্গুল আমার দিকে তাক করা ছিল। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম। আশা করছিলাম আমার মুক্তি হোক, উত্তর দেয়া হয়ে যাবে। আমি গত ১৪ মাসে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। এইসব আঙ্গুলের নিশানার সামনে তাক হয়ে থাকতে থাকতে আমি অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। এই ১৪ মাস পরে প্রমাণ দিতে পেরেছি, আমি আমার কথায় সত্য ছিলাম। আমি ধোঁকাবাজ ছিলাম না। আমি কাউকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাইনি।

 

আমার শরীর মন এখন আমাকে শুধু একটু বলছে, বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আমি জানি, যে নদীতে সাঁতার দিতে নেমেছি, সেখানে বিরামের সুযোগ নেই। হয়তো দিক বদলাতে হতে পারে। তবুও ওপারে যেতে হবে। সাঁতারে থেমে যাওয়া মানে তো মৃত্যু। এত সহজে হার মানবো? এতদিন কারাবাসের পরে?

 

ভাল কাজের করতে চান? তাহলে করুণ। করতে থাকুক। কোন স্বীকৃতি পাবেন না, কোন প্রতিদান কারও কাছ থেকে পাবেন না, এটা ধরে নিয়ে করতে পারলে করুণ না যত খুশি। মানা কে করেছে। তবে মাথায় রাখবেন, যাদের জন্য যত ভাল করবেন, তাদের কাছ থেকে কিন্তু তত মাত্রার আঘাত ও আসবে। আসাটাই কিন্তু নিয়তি। সেটা মানতে পারবেন তো? যদি বন্দী হতে হয় সেটা হতে পারবেন তো? যদি সেগুলো মেনে নিতে পারেন, তাহলে এগিয়ে যান। উপকারে মহান ব্রতী হন। একটা কথা মাথায় রাখবেন। উপকার করে করে পথ চলতে গেলে ধাক্কা খাবেন কিছু, বিপদ আসবে কিছু, তখন কিন্তু কেউ আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না যাদের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কিছু করছিলেন। বিপদের প্রহরগুলো আপনাকে একা সামাল দিতে হবে। যদি সেটা পারেন তাহলে এগিয়ে যাব। আর যদি এগুলো সামলাবার সাহস না থাকে, তাহলে নিজের রাস্তা নিজে চলাই ভাল। কেউ কেউ কিন্তু আপনাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিবে সাঁতার দেয়ার জন্য। এরপর তাদের দেখাও পাবেন না।

 

 

তবে সবাই কিন্তু এক নয়। ভাগ্য ভাল থাকলে দুই একজন এমন পাবেন হয়ত বিপদের দিনে এসে আপনার হাত ধরবে।  

Author's Notes/Comments: 

২১ অক্টোবর ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio