ব্যথার আরেক প্রতিশব্দ “ইউরিক অ্যাসিড”

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে কি হতে পারে তার পরিণাম হাতে নাতে টের পেলাম কয়েকদিন ধরে। এখনও পাচ্ছি। আক্ষরিক অর্থেই খোঁড়া মানুষের মত হাঁটতে হচ্ছে। কয়েক রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে আমার। কিছুদিন আগে একদিন সকাল বেলা উঠেই আবিষ্কার করলাম আমার ডান পায়ের বুড়া আঙ্গুলের গোড়ায় (হাড়ের সন্ধিতে) বেশ টনটনে ব্যথা। পাত্তা দিলাম না। ভাবলাম হয়ত শোয়ার সময় আঙ্গুলে বেমক্কা চাপ লেগে এই ঘটনা ঘটেছে। আঙ্গুল যেহেতু নাড়াতে পারছি সেহেতু সমস্যা নেই। কিন্তু সকাল ঘুরে সন্ধ্যা না হতেই পা ফুলে উঠতে লাগলো আর আমার হাঁটা চলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। এতো ব্যথা যে আমি এক দন্ডও স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম হয়ত গরম পানির ছেঁকা নিলে ঠিক হবে। নিলাম কিন্তু কিছুই হলো না। বাধ্য হয়ে পেইন কিলার ইঞ্জেকশন নিলাম। সাময়িক আরাম হলেও ব্যথা গেলো না আর পরেরদিন আবার একই কাহিনি। পেইন কিলার দিয়ে আর কতক্ষণ। এটা তো কোন সমাধান হতে পারে না। অগত্যা একজন অভিজ্ঞ অর্থোপেডিক ডক্টরের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হলাম।

 

ডক্টর আমাকে দেখেই বললেন, আপনার সম্ভবত ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেছে। উনি ব্লাড টেস্ট আর এক্স-রে করাতে দিলেন আর আমাকে তিনটা ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন, খেতে থাকুন, দেখবেন কাল সকালের মধ্যেই আপনার ব্যথা ৫০% হলেও কমে গেছে। আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে দেখলাম উনার কথা ঠিক। ওষুধ খাচ্ছি। ব্যথা সহনীয় মাত্রায় চলে এসেছে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক মানুষের মত হলেও হাঁটতে পারছি যদিও পুরো ছেড়ে যাচ্ছে না। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা শুধু যে বয়সের কারণে বাড়ে এমন কিন্তু না। আমাকে এক ছোট ভাই বলেছে, এমনটা ওরও হয়েছিল এবং ও আমাকে যা যা বলেছিল সব ডাক্তার সাহেবের কথার সাথে মিলে গেছে হুবহু!  

 

পরদিন রিপোর্ট নিতে গিয়ে দেখি ডাক্তারের আশঙ্কাই সত্যি। কিডনি ফাংশান ঠিকই আছে তবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা একজন পুরুষের যেখানে 3.4-7.4 mg/dL থাকা উচিত, সেখানে আমার আছে 10.1 mg/dL । উনি বললেন, যে ওষুধ দিয়েছি এগুলাই এক মাস চলবে আর এক মাস পরে ইউরিক অ্যাসিড আবার টেস্ট করিয়ে একটু দেখিয়ে যাবেন। উনি আরও জানালেন, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে ব্যথা যে কোন জয়েন্টেই হতে পারে তবে সবার প্রথমে হবার সম্ভাবনা যেখানে থাকে সেখানে হলো পায়ের আঙ্গুলে, ঠিক যেমনটা আমার হয়েছে। সাথে সাথে একটা সিল মারলেন প্রেসক্রিপশনের উপরে। লেখাগুলো মনে হয় কাগজে না, আমার কলিজার উপরে পড়লো। আহারে সব নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা! আহত চোখে দেখলাম- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি! এগুলো খাওয়া চলবে না। যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। হায় আমার প্রিয় খাবার গুলো! কোনটা সামাল দেবো, ব্যথা নাকি লোভ? ব্যথা নিশ্চই! কি আর করার!

 

 

Author's Notes/Comments: 

১১ অক্টোবর ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio