‘অ্যাসমা’ (হাঁপানি)

আমার দাদা’র ‘অ্যাসমা’ (হাঁপানি) ছিল বলে জেনেছি। দাদা মারাও গিয়েছেন সেই ১৯৮৬ সালে এই রোগের প্রকোপে। মৃত্যুর আগে তার অনেক শ্বাসকষ্ট হয়েছিল বলে শুনেছি। শুধু উনারই না, উনার ছোট ভাইও প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গেলেন বছর দুই হলো। কিছু কিছু রোগ মানুষ নাকি বংশক্রমে পায় বলেই শুনেছি। তাঁর মধ্যে এই হাঁপানি, ডায়াবেটিস অন্যতম। আমার জন্মবধি আমার বাবা, চাচা, ফুফু এমনকি চাচাতো ফুফাতো ভাই বোনের মধ্যেও কারও অ্যাসমা বা হাঁপানি আছে বলে আমি কখনও শুনিনি। আমার ধারণা ছিল, আমরা বুঝি মুক্তি পেয়ে গেলাম এই রোগ থেকে। আমার ধারণা কিছুটা হলেও ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল আমার মধ্যে দিয়েই।

 

আমার মধ্যে এই ব্যাপারটা প্রথম ধরা পড়ে সিঙ্গাপুরে যাবার পরপরই। প্রচন্ড কাশি হতে লাগলো। কিছুতেই মুক্তি পাচ্ছিলাম না। পরে ভার্সিটির হেলথ সেন্টারে গিয়ে ধরা পড়লো, গাছ থেকে নির্গত পরাগরেণু থেকে আমার এই সমস্যার সূত্রপাত এবং সেখান থেক ধরা পড়েছে আমার অ্যাসমা ও আছে। কম মাত্রায় হলেও আছে। ২০০৮ এর মার্চ মাসে জানলাম। আমার কখনই নিয়মিত ইনহেলার নিতে হয়নি। ডাক্তার বলেছেন সমস্যা যখন বেশী অনুভুত হবে শুধু তখনই। বাংলাদেশে এসে ব্লাট টেস্ট করে আমার ব্লাড অ্যালার্জি ধরা পড়লো। সহনশীল মাত্রা থেকে কয়েক গুণ বেশী। যদিও এখন আর ইনহেলার নিতে হয় না। আগে শীতকালে কষ্ট হতো একটু। এখন আর সেটিও টের পাচ্ছি না। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস জানি না, আমার দুই ছেলে মেয়ের মধ্যেই ব্লাড অ্যালার্জি আছে। যদিও ওদের অ্যাসমা হয়নি। তবে ওদের নিয়েও আমাদের অনেক সাবধানে থাকতে হয়। অনেক ভয়ে ভয়ে থাকি।

 

করোনার উপসর্গ যখন জানতে শুরু করলাম গত বছর থেকে, দেখলাম সবচেয়ে বেশী আক্রমন করে তো এই শ্বাসযন্ত্রকেই। করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের বেশীরভাগই শ্বাসকষ্টে মারা গেছে এটা আমরা কে না জানি? আমার এক পাইলট বন্ধু ইকবাল ও গত বছর অক্টোবরে আমাদের ছেড়ে চলে গেল করোনায় আক্রান্ত হয়ে। ভাইরাস ওর ফুসফুস একেবারে ঝাঁঝরা করে ফেলেছিল। বেঁচে থাকার আর কোন লক্ষণই ইকবালের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না। ইকবাল পাইলট ছিল। জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল ওর। সব কিছু শেষ হয়ে গেল কয়েক মুহুর্তেই। আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। যাদের আগে থেকেই অ্যাসমা আছে, তাদের জন্য এই সময় আরও কঠিন। দম নিতে চেয়েও দম নিতে না পারার যে কি কষ্ট সেটা কাউকে বলে বোঝানো যায় না। আমি এই শ্বাসকষ্টকে খুব ভয় পাই। প্রার্থনা করি, আমার কোন শত্রুরও যেন এই রোগ না হয়।  

 

অভিযোগের ফর্দ খুলে বসবো না। কারণ অভিযোগ করবই বা কার কাছে? যাকে সব কিছু খুলে বলা যায়, কিছুই গোপন না রেখে, তাকে তো শব্দ করে বলার কিছু নেই। অন্ত্রের অন্তঃস্থলের অভ্যন্তরে কাঁপতে থাকা চিন্তার প্রবাহও তো তাঁর কাছে গোপন থাকে না। নাহ আমিও অভিযোগ করবো না। তাকেও না। কারণ তাঁর চেয়ে আমার জন্য কল্যানকর পন্থা আর কে বেশী করে দিতে পারে?

Author's Notes/Comments: 

৭ জুলাই ২০২১

View shawon1982's Full Portfolio