জুজু’র ১০০ বছর ধরে গরুর মাংস খাওয়া

আজ ইফতারের দাওয়াত ছিল জুজু’র নানুর বাসায়। আমরা সবাই ইফতারের আগ দিয়ে গেলাম। আমার দুটা বাচ্চাই নানুর বাসায় যাবার নাম শুনলেই সারা বাসায় হল্লা করতে থাকে আনন্দে! অনিন্দ্য কিছু বোঝে না সেটা বলা যাবে না, কারণ আমাদের বাইরে যাবার পোশাক পরা দেখলেই সে খুশিতে লাফাতে শুরু করে! যা হোক, ইফতারের পরই তো আর ফেরা হলো না। রাতে আমি আর নাঈমা কিছু খাই না। বাচ্চারা খায়। জুজুকে ওর নানুর বাসায় রাতে খেতে দেয়া হলো। মেন্যু হচ্ছে ওর প্রিয় গরুর মাংসের ভুনা! ওর নানু ছোট ছোট টুকরা করে মাংস ভুনা যে করে, সেটা ওর অনেক পছন্দের!

 

বাসায় ফিরতে ফিরতে বেশ খানিকটা রাত হলো। আমি আর নাঈমা নামাজে দাঁড়িয়েছি, এমন সময় জুজু’র দাদীর কল আসলো! কলটা ঐ রিসিভ করবো। জুজু যখন ওর দাদীর কাছে দৈনিক কাজের ফিরিস্তি দিতে শুরু করে তখন মোটামুটি কিছুই বাদ যায় না। বর্ণনা করার সময় ও ঘটনার সাথে মেশাতে থাকে ওর নিজস্ব দর্শন আর চিন্তা ভাবনা। আজ আরেকটু হলে আমার নামাজ নষ্ট হবার উপক্রম হচ্ছিলো ওর কথা শুনে। আমরা তো শুধু জুজুর কথা শুনেছি। তার কিয়দংশ তুলে দিচ্ছি।

 

দাদীআপু, জানো আজকে রাতে নানুর বাসায় যে মাংস খেলাম না, সেটা এত্ত মজা হইসে, এত্ত মজা হইসে যে তুমি যদি একশ বছর ধরেও খেতে থাকো তাও মনে হবে আরও খাই। আর এত্ত খাওয়ার পরেও পেট দেখলে বোঝা যাবে না যে তুমি খাইসো। বুঝসো? এত্ত মজা, এত্ত মজা হইসে!

 

তুমি দেখো আমাদের বাসায় কবে এসে থাকতে পারো। তোমার যা যা জিনিসিপত্র আছে, তুমি নিয়ে আসো। অন্তত এক রাত যেন থাকতে পারো। তোমার ওষুধ, পানি, জামা যা লাগে নিয়ে এসো। এ পর্যায়ে ওর দাদী মনে হয় বলে, তার রাতে ঘুম ভাল হয় না। তখন আবার জুজু বলতে শুরু করে, ঐতো, ঘুমের ওষুধইতো আনতে বললাম। ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে থাকবা। আর ঘুম না আসলে, ঐযে তুমি কানে হেডফোন লাগায়ে মোবাইল থেকে কি সব শোন না? ওগুলা শুনবা আর ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকবা। আর আমি তোমার পাশে শুয়ে ঘুমাবো!

 

কথার এ পর্যায়ে আমার সালাম ফেরানো হলো। নাঈমা আগেই নামাজ কিছুটা পড়ে বসে ছিল। আমি সালাম ফিরিয়ে তাকেই আমার দিকে তাকালো। আমরা দুইজনই হাসিতে ফেটে পড়লাম এবং একই কথা বললাম, একশ বছর ধরে গরুর মাংস খেলেও পেট ভরবে না!  

Author's Notes/Comments: 

১০ মে ২০২১ 

View shawon1982's Full Portfolio