কড়ির বরতন

১.


ডাইনিং টেবিলে হাসাহাসির শব্দে আবিদুর রহমান সাহেব তার ঘর থেকেই চাপা হুঙ্কার দিলেন। এর অর্থ হল তিনি ঘুমাতে পারছেন না। প্রায় সাত বছর আগে উনি স্ট্রোক করার পর থেকে ঘরেই অবস্থান করেন। উনি যে বেঁচে ফিরতে পারবেন এই আশাটুকুও পরিবারের লোক প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। কিন্তু উনি বেঁচে যান। পক্ষাঘাত দশা কিছুটা কমে গেলেও উনার আচরণ গত কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেকটা বাচ্চাদের মতই আচরণ করেন। বাচ্চাদের মত জিদও দেখান মাঝে মাঝে। অনেক সময় তাকে তার ছেলে মেয়ে মুখে তুলেও খাইয়ে দেয়। কথা বলেন খুব এক। এক সময়ের ডাকসাইটে এবং জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ আবিদুর রহমান সাহেব তার এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরও ছিলেন। এমন তেজী একটা মানুষ এমন চুপচাপ হয়ে শুয়ে বসে থাকেন ঘরে, এটা বাইরের মানুষ বিশ্বাস ও করতে চায় না। উনার হুঙ্কার শুনে, উনার স্ত্রী সালেহা বেগম বাসার পরিচারিকা মেয়েটিকে হাতের ইশারা দিয়ে বললেন আবিদুর রহমান সাহেবের দরজাটা লাগিয়ে দিতে যেন এঘরের শব্দ গিয়ে স্বামীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। অনেক দিন পরে উনার তৃতীয় মেয়ে সীমা আমেরিকা থেকে জরুরী কিছু কাজ সারতে অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে এসেছে। সালেহা বেগম তার সাতটি সন্তানের সবাইকে পালাক্রমে দেখতে পারলেও সীমাকে তো ভিডিও কলে দেখা ছাড়া আর উপায় থাকে না। তাই সীমা যে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসেছে, প্রতিবেলায় সাধ্যমত চেষ্টা করেন মেয়ের পছন্দের কিছু খাবার তৈরী করতে। ডাইনিং টেবিলে সবাই মজা করে রাতের খাবার খাচ্ছিলো আর খোশগল্পে মেতে উঠেছিল। সেই হাসির শব্দেই আবিদুর রহমান কিছুটা বিরক্ত, কারণ ঘুমাতে পারছিলেন না।

 

ডাইনিং টেবিলে সীমা আর সালেহা বেগম মুখোমুখি বসা। সীমার পাসে ওর বোন সুপ্তি বসা। সুপ্তির পাশেই ওর স্বামী সায়েম একমনে গরুর মাংশের একটা টুকরা নিয়ে আয়েশ করে খাচ্ছিলো। সুপ্তি আর সায়েমের প্রায় ১১ বছরের সংসার। দুটি সন্তান। বড়টি মেয়ে ছয় বছর বয়স, আর ছোটটি ছেলে সদ্য এক বছর হল। ছেলেটি এখনও হাটা শিখেনি। নানীর বাসায় এসে মহা আনন্দে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে সারা মেঝে। সীমার একদম ছোট বোন তুলি, মেকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে দ্বিতীয় বর্ষে। সুপ্তি তার বাচ্চাদুটোকে নিয়ে এসে তুলির আনন্দ আর ধরে না। সারাক্ষণ সুপ্তির বাচ্চাদুটোর যত্ন নিয়ে ব্যস্ত। আর এখন করোনার প্রাদুর্ভাবে তুলি বাসা থেকেই ক্লাস সেরে নিচ্ছে অনলাইনে। ভার্সিটিতে যেতে হচ্ছে না বিধায় সবসময় বাসায় থাকে। সুপ্তিও বোনের আগমন উপলক্ষে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বাবার বাড়ীতে স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। সায়েমের বাসা খুব বেশী দূরে না হওয়ায় সে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। শ্বশুর বাড়ীতে ভালমন্দ কিছু রান্না হলে সায়েমের ডাক পড়বেই। সালেহা বেগম সায়েমকে ঠিক জামাতার মত না বরং নিজের ছেলের মতই দেখেন। কারণ সায়েমের পরিবারের সাথে সালেহা বেগমদের আত্মীয়তার পুর্বসূত্রিতা আগে থেকেই ছিল। ডাইনিং টেবিলে কথা হচ্ছিলো মূলত সীমার সাথে সায়েমের। সুপ্তি চুপচাপ শুনছিল। কথা হচ্ছিলো পুর্ব পূরুষদের নিয়ে। কে কতজন পূর্বপূরুষদের নাম জানে, কে কয়জনকে দেখেছে এসব নিয়ে।

 

সায়েম মাংসের টুকরায় আয়েশ করে কামড় দিচ্ছিলো আর সীমাকে বললো, আমি তোমার দাদার বংশে তোমার দাদার উপরে আরো প্রায় চার পুরুষের নাম জানি। আমি তোমার দাদা মানে আমার দাদা শ্বশুরের কাছ থেকে এসব শুনে লিখে রাখছিলাম।

-তাই সায়েম ভাই? দাদা তাইলে আপনাকে অনেক পছন্দ করতো তাই না? সীমা বললো।

-হ্যাঁ তা করতো। গেলেই উনার সাথে পুরানো দিনের গল্প জুড়ে দিতাম। উনার ছয়টা ভাই কলেরায় মারা গেল, শুধু উনি একাই বেঁচে রইলেন ভাইদের মধ্যে। সায়েম জানালো আগ্রহী কন্ঠে।

-দেখসেন সায়েম ভাই, আমার দাদার বংশের কথা, অথচ আমিই তেমন কিছু জানি না। নামগুলা তো তেমন শুনিও নাই। সীমা বললো হাসতে হাসতে।

এমন সময় সুপ্তি ফোঁড়ন কেটে বললো, দেখো দেখো, আমার বইনের অবস্থা দেখো! নিজেদের দাদাবাড়ির ইতিহাস শুনতেছে বোনের হাজব্যান্ডের কাছ থেকে।

-তো কি হইসে? ও তো আমেরিকা থাকে। এসব ঘাটাঘাটি করার টাইম কই। আমার ভাল লাগে আমি ঘাটাঘাটি করি। বলতে বলতে সায়েম ততক্ষণে খাওয়া শেষ করে ফেলেছে।

এমন সময় বোমাটা ফাটালেন সায়েমের শাশুড়ী সালেহা বেগম। উনি বললেন, আমি তো আমার দাদা শ্বশুরের ছোট মা কেও দেখেছি!

-দাঁড়ান দাঁড়ান বুঝে নেই! সায়েমের চোখ গোল গোল হয়ে গেল! আপনার দাদা শ্বশুর, মানে আমাদের বড়-আব্বা, উনার ছোট মা? ইয়া আল্লাহ বলেন কি!

-হ্যাঁ! উনাকে দেখছি। উনি অবশ্য আমার দাদা শ্বশুরের আপন মা ছিলেন না। সৎ মা ছিলেন। তবুও তো। আমার দাদা শ্বশুরের আব্বা চারটা বিয়ে করেছিলেন। আমি যাকে দেখছি সে ছিল চার নাম্বার বৌ। আর আমার দাদা শ্বশুরের আপন মা ছিলেন প্রথমা স্ত্রী। সালেহা বেগম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন। উনি তো নাঈমকেও দেখে গেছেন আর আমাদের বাড়ীতে এসে ভাতও খেয়েছেন। নাঈম হলো সুপ্তির বড় ভাই। সায়েমের বড় সম্বন্ধী।

 

সালেহা বেগম বলে চললেন, একদিন হইসে কি শোন। উনি আমাদের বাড়ীতে আসছেন। খেতে দিয়েছি ভাত। কিন্তু প্লেট ছিল মেলামাইনের। উনার সেটা মোটেই পছন্দ হয়নি। উনি তীক্ষ্ণ স্বরে আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘এই আবিদের বৌ! আমাদের যখন খাইতে দিবি তখন কড়ির বরতনে খাইতে দিবি। আমরা এইসব বরতনে খাই না। সরা এখান থেকে’। বলেই সালেহা বেগম হেসে ফেললেন। ‘কড়ির বরতন’ মানে কি বুঝছো সায়েম? কাঁচের থালা কে উনারা বলতেন কড়ির বর্তন।

বিস্মিত সায়েম বললো, জ্বী আম্মা বুঝছি। কড়ি কিছুটা কাছের মতই তো। এজন্যই মনে হয় উনারা কাঁচের প্লেটকে কড়ির বর্তন বলতেন। রাত বেশী হয়ে যাচ্ছিলো দেখে সায়েম সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের বাইরে পা বাড়ালো। উদ্দেশ্য একটা রিক্সা নিয়ে নিজের বাসায় চলে যাবে। কেউ নাই বাসায়। এদিকে ছাত্রদের জন্য প্রশ্ন তৈরী করতে হবে। ওদের কাল পরীক্ষা নিতে হবে অনলাইনে। সায়েমের থেকে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না। হাতের ইশারায় একটা রিক্সা ডাক দিয়ে সায়েম উঠে পড়ে বললো, উল্লাপাড়া। রিএক্সা চলা শুরু করবো। কিন্তু সায়েমের মাথায় ঘুরতে লাগলো, কড়ির বরতন, কড়ির বরতন, কড়ির বরতন... নিজের অজান্তেই সায়েমের দুই হাতের আঙ্গুলগুলো মুঠো পাকিয়ে গেলো।

 

২.


সাত বছর আগের ঘটনা। সায়েম মালেশিয়া থেকে ডক্টরেট করে দেশে এসেছে প্রায় সোয়া এক বছর হয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবে। কিন্তু তেমন কোন উপায় হলো না। বলতে গেলে তখন এক রকম বেকারই ছিল। একটা কোচিং এ ক্লাস করাতো অনেকটা সময় পার করতেই। ততদিনে সায়েমের সাথে সুপ্তির বিয়ে হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫ বছর হতে চললো। সুপ্তি তখন ৮ মাসের গর্ভবতী। সায়েমের বাবা হাজী জয়নাল আবেদীন সাহেব সংসারের পুরোধায়। সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রনে। সুপ্তির সাথে কথা বলার সুযোগ পেলেই, কেন সায়েম আরো চেষ্টা করছে না এই নিয়ে নানা রকম কথা শোনাতো।

 

একদিন সুপ্তি ভাত খেতে বসেছিল। তখন জয়নাল সাহেব বাইরে থেকে সদ্য বাসায় এসেছেন। সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললেন, চালের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে বুঝলে। এই কথা শোনার পরে, মুখে তোলা গ্রাসটা কোনরকমে পানি দিয়ে গিলে চোখ মুছতে মুছতে সুপ্তি নিজের ঘরে চলে গেল। বাকীটুকু গ্রাস আর মুখে উঠলো না। এমন কড়া কথা ঠাট্টাচ্ছলেও জয়নাল সাহেব প্রায়ই সুপ্তিকে শুনিয়ে দিতেন। গর্ভবতী সুপ্তির উপরে প্রচন্ড মানসিক চাপ পড়তো। একা একা চুপচাপ কাঁদত। তবুও সায়েমকে অনেক কিছু বুঝতে দিতো না। সায়েম যদি ওর বাবার সাথে কোন রকম ঝগড়া বিবাদ করে বসে। তাহলে তো দোষ সব সুপ্তিরই হবে। সুপ্তি মুখ বুঝে সহ্য করতো। সায়েম এগুলো সব জানতো। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস সহ্য করা ছাড়া আর উপায় তেমন আসলেই ছিল না। একজন ছেলের হাতে যখন টাকা না থাকে, কিংবা যোগ্যতার উপযুক্ত কাজ না থাকে, তখন তার চেয়ে নিকৃষ্ট জীব মনে হয় পৃথিবীতে আর একটাও থাকে না। সায়েমও সেই নিকৃষ্ট জীবই ছিল তখন। কথা শুনে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। জয়নাল সাহেব দয়া পরবশ হয়ে ছেলেকে কথা শোনাতেন না খুব একটা, কিন্তু গর্ভবতী পুত্রবধুকে সুকৌশলে কথা শোনাতে ছাড়েন নাই কিছুই।

 

একদিন সুপ্তি সকালে উঠে গেল প্রচন্ড পানির পিপাসায়। ঘরে পানির বোতল হাতে নিয়ে দেখলো পানি নেই তাতে। সায়েম তখনও ওঠে নাই। ডাইনিং রুমে হাজী জয়নাল সাহেব নাস্তা খাচ্ছেন আর মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন রান্নাঘরে কর্মরত সায়েমের মা রাহেলার উদ্দেশ্যে। রাহেলাও থালা বাসন আছড়া আছড়ি করতে করতে পালটা জবাব দিচ্ছিলেন। এমন সময়, হেলতে দুলতে সুপ্তি গিয়ে দাঁড়ালো পানির ফিল্টারের কাছে, ডায়নিং টেবিলের পাশেই। ঢাউস পেট নিয়ে নিচু হতে সুপ্তির অসুবিধা হচ্ছিলো। তবুও অনেক কৌশলে সুপ্তি নিচু হয়ে পানি খেয়ে যেই উঠে দাঁড়িয়েছে তখন জয়নাল সাহেব বললেন, সুপ্তি বসো। আমরা একটু কথা বলি।

 

অগত্যা সুপ্তি বসে বললো, জ্বী বাবা বলেন। জয়নাল সাহেব বার দুই গলা খাকারি দিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। শুরুই হলো সংসারের সুশাসন ব্যবস্থায় উনার অবদান আর সংসারের যাবতীয় অব্যবস্থার মূলে যে সুপ্তির শাশুড়ি রাহেলা খাতুন সেটাও খোঁচা দিয়ে দিয়ে বলছিলেন। সেই সাথে অবধারিত ভাবে সায়েমের কর্মহীনতা, জয়নাল সাহেবের হাতে টাকা নেই, সংসার কিভাবে চলবে, এই জাতীয় কথা একের পর এক চলতে লাগলো। সুপ্তি টেবিলে ছিল বলে রাহেলা নিজের প্রসঙ্গে বক্রোক্তি শুনেও চুপ ছিল। নিজের মত কাজ করে যাচ্ছিলো। আর সুপ্তি কোন উত্তর না দিয়ে শুনে যেতে লাগলো শ্বশুরের কথা। কথার এক পর্যায়ে হাজী জয়নাল সায়েব চেয়ারের পেছন ফিরে শো-কেস খুলে সেখান থেকে চারকোনা বড় একটা কাঁচের প্লেট তুলে নিলেন। তখন উনি উনার স্ত্রী অর্থাৎ রাহেলার কারনে তার জীবনে কি কি অশান্তি সেগুলো কুরিয়ে কুরিয়ে বলতে লাগলেন।

 

সুপ্তির প্রচন্ত শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলো। কিন্তু কিছু করার ছিল না শ্বশুরের কথা শুনে যাওয়া ছাড়া। জয়নাল সাহেব হাতের থালাটা নিয়ে টেবিল ঘুরে সুপ্তির কাছে এসে দাঁড়ালেন। সুপ্তি কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে গিয়েছিল কথা শুনতে শুনতে। এমন সময় জয়নাল সাহেব বললে, সুপ্তি সংসার কিভাবে ভেঙ্গে যায় জানো? সুপ্তি যেই তাকালো ওর শ্বশুরের দিকে, ওমনি জয়নাল সাহেব উনার হাতে ধরে কাঁচের বড় থালাটা সুপ্তি যেখানে বসে ছিল তার ঠিক পাশেই প্রচন্ড জোরে আছাড় দিয়ে ফেলে দিলো। প্রচন্ড ঝনঝন শব্দে থালাটা ভেঙ্গে কাঁচের টুকরাগুলো সারা ঘরের এপাশ ওপাশ হয়ে গেল। অপ্রস্তুত সুপ্তি আচমকা এই শব্দে ভীষণভাবে কেঁপে উঠে এমনভাবে মাথা ঝুঁকিয়েছিল যে, পিঠ চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল আর পেটে টান লাগায় দুই হাত দিয়ে পেট ধরে বসে ছিল। দুই চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি নেমে এসেছে তখন। জয়নাল সাহেবের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। কি হলো কি হলো করতে করতে রান্নাঘর থেকে রাহেলা ছুটে এলেন। শব্দের প্রচন্ডতায় সায়েমের ঘুম ভেঙ্গে গেল। এক লাফ দিয়ে ডাইনিং রুমে এসে দেখে জয়নাল সাহেব তার নির্ধারিত আসনে বসা। সুপ্তি ওড়না দিয়ে চোখ মুছছে। জয়নাল সাহেব বলে চলেছেন, এই কাঁচের ভাঙ্গা টুকরাগুলোর মত তোমার শাশুড়ির কারনে সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। উনি খেয়াল করেননি যে সায়েম ওখানে এসে দাঁড়িয়েছে।

-থালা কে ভাংছে? সায়েম প্রশ্ন করলো ওর বাবার দিয়ে তাকিয়ে।

-আমি ভাংছি। বলেই অগ্নিচক্ষু দিয়ে জয়নাল সাহেব সায়েমের দিকে তাকালেন। পারলে চোখ দিয়ে ছেলেকে ভস্ম করে ফেলেন।

-কেন ভাংছো? এবার সায়েমের প্রচন্ড রাগ হয়ে গেল।

জয়নাল সাহেব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তেড়ে এলেন সায়েমের দিকে। বুকের উপরে চাপড় মেরে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, আমার প্লেট আমি ভাংছি, তাতে তোর কি?

-আমার কি মানে? তুমি প্লেট কেন ভাংছো? সায়েমও এবার রুখে দাঁড়ালো। ওর সহ্য হচ্ছিলো না সুপ্তির সাথে ঘটা এই অনাচার। এবার জয়নাল সাহেব সায়েমকে মারার জন্য যেই এগিয়ে এলেন, তখনই সুপ্তি গিয়ে সায়েমকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো, তোমার আল্লাহর দোহাই লাগি, আর একটা কথাও বইলো না। আমার কিছুই হয়নি। ঘরে চল। সুপ্তি ডান হাত দিয়ে সায়েমের মুখ চেপে ধরে, বাম হাত দিয়ে সায়েমের বুকে ঠেলা দিতে দিতে তাকে পরাস্ত করে ঘরে নিয়ে গেল। বন্ধ দরজা ঘর থেকেও সায়েম শুনতে পাচ্ছিলো জয়নাল সাহেবের তারস্বর চিৎকার গালিগালাজ।

...শুওরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা, ওর প্লেট? আমার প্লেট আমি ভাংছি, ও প্রশ্ন করার কে? আমার প্লেট আমি ভাংবো। যত খুশি ভাংবো। কি করবি কর!...  

 

৩.


সায়েম রিক্সা থেকে মেনে ভাড়া দিয়ে নিজের বাসার দরকার সামনে যখন এসে দাঁড়ালো তখনো মাথার মধ্যে ক্রমাগত ঘুরতে লাগল, কড়ির বরতন... কাঁচের প্লেট... কড়ির বরতন... কাঁচের প্লেট...

Author's Notes/Comments: 

৭ অক্টোবর ২০২০

View shawon1982's Full Portfolio