৩১ আগস্ট ২০২০

দ্বিতীয় পুনর্জন্ম

. . .. . . . . . . 



আজকে আবার দ্বিতীয় পুনর্জন্মের কথা বলবো। সেই সাথে হয়ত কিছু আনুসাঙ্গিক পুরনো কথা, কিছু স্মৃতিচারণ! জানি না আমার কথা ভাল লাগবে কি না, তবুও কিছু প্রিয় মানুষকে হয়ত স্পর্শ করতেও পারে আমার কথাগুলো। পুনর্জন্ম বলতে আমি বুঝিয়েছি আমার দ্বিতীয়বার বাবা হবার কথাটাকে। কারণ একজন পুরুষ যখন ‘বাবা’ হয়, সত্যিকারের ‘বাবা’ হয় তখন ‘বাবা’ হিসেবেই তার নতুন করে জন্ম হয় তার সন্তানের সাথে। এটা জীবনের একটা নতুন মাত্রা এবং একটা নতুন দায়িত্বশীলতার উপলব্ধি নিশ্চই। কারণ ‘বাবা’ শব্দের অন্তর্গত তাৎপর্য অনেক গভীরে। পুরুষের যৌনতার সক্ষমতা আর সেই সুত্রে প্রাপ্ত কোন মানব শিশুর জন্ম হলেই কেউ ‘বাবা’ হয়ে যায় বলে আমি বিশ্বাস করি না। ‘বাবা’ শুধু একটা শব্দ নয়, এটা একটা দর্শন, এটা উপলব্ধি, এটা অনুভব, একটা আশ্রয়, একটা পরম নির্ভরশীলতা। ‘বাবা’ মানে আমার কাছে একটা শীতল ছায়া, সমস্ত ভয় কে দূর করার একটা শ্রেষ্ঠ উপায়। আমি ‘বাবা’ মানে সেটাই বুঝেছি। আমার পাশে আমার ‘বাবা’ আছে মানে আমার আর কোন ভয় নেই। সমস্ত ভয়কে আমি জয় করে ফেলতে পারবো। অন্তত আমি আমার সন্তানের কাছে ঠিক এমনই একটা পরম নির্ভরতার আশ্রয়, তেমন একজন ‘বাবা’ হতে চাই। জীবনে আমি যা পাইনি, সেই জিনিস থেকে আমার কোন সন্তান বঞ্চিত হোক, সেটা আমি আমার জীবদ্দশায় হতে দিতে পারি না। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে আমার অনেক বন্ধুদের অনেক অনেক পোষ্ট দেখি, যা যার ‘বাবা’কে নিয়ে লিখে। ‘বাবা’ কে নিয়ে কত আবেগাপ্লুত করা কথা লেখে। পড়তে ভালই লাগে কিন্তু সেসব লেখা আমার মনকে স্পর্শ করে না। যে কখনও মিষ্টির স্বাদ পায়নি, তাকে যেমন সাহিত্য দিয়ে মিষ্টির স্বাদ পাওয়ানো যায় না, ঠিক তেমনই অবস্থা আমারও। ওসব লেখা সাহিত্যের বিচারে পড়তে আমার অনেক ভাল লাগে কিন্তু আমাকে স্পর্শ করে না। কারণ আমার অভিজ্ঞতা আমাকে আবেগে আপ্লুত হতে দেয় না অনেক ক্ষেত্রেই। যে জিনিস গত হয়ে গেছে সে জিনিস তো চাইলেও সামনে টেনে আনা যায় না। যদি সেটা আনার মত কিছু করা হয়, তাহলে সেটা নিজের সাথে প্রপঞ্চতা আর মিথ্যা অভিনয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি চাই আমরা সন্তানের আছে ‘বাবা’ অনেক সুখ স্মৃতিময় কিছু হয়ে থাক। ওরা যেন বুঝতে পারে, ‘বাবা’ শুধু একটা শব্দই না বরং ‘বাবা’ হল পুরো একটা মহাবিশ্ব সঞ্চিত একজন নশ্বর মানুষের শরীরে। আমি ওদের কাছে ঠিক একজন ‘বাবা’র মত ‘বাবা’ই হয়ে থাকতে চাই।

 

কি কথা লিখতে শুরু করে কত ইতং বিতং করে ফেললাম। শুরু করি আমার অনিন্দ্য’র জন্মের সুত্রপাত থেকে। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে বেড়াতে গিয়েছিলাম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে যেখানে সমাজ স্বীকৃত আমার একটা ‘পৈত্রিক’ ভিটা ছিল। ওটা এখন অতীত। ‘ছিল’, এখন নেই! যাক সেটা আমার কোন উপাখ্যান না এখানে। ওখানে তখন বেড়াতে গিয়েছিলাম আমি আর নাঈমা। যাওয়ার পরে শুনলাম বোনের শ্বশুর বাড়ী থেকে প্রায় ১৫-১৬ জন মেহমান বেড়াতে আসছেন ওখানে। উনারা এলেন। উনাদের আপ্যায়ন রান্না বান্নার কাজে আম্মুর সাথে সহযোগী হিসেবে নাঈমা ছিল। মেহমানদের খাবার পরিবেশন করা, তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা সবকিছু। কিন্তু ও আমাকে বারবার বলছিলো যে শরীর ভাল লাগছে না। আমি ঠাট্টা করে বলেছিলাম, তুমি কি প্রেগন্যান্ট নাকি? ও বলেছিল, বুঝতে পারছি না তবে মনে হচ্ছে এমন কিছু। তখন আমি ভেতরে ভেতরে একটু সতর্ক হয়ে গেলাম। আমি আগে ঢাকা চলে আসি। নাঈমা পরে আসে। ভেতরে ভেতরে ওর খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। পরে ১৭ই জানুয়ারী ২০১৯, ঘরোয়া পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের ঘরে আমাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম। এখনও করি তার এই অবারিত করুণার জন্য। পরের দিনই প্যাথলজিতে টেস্ট দিলাম এবং টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ পেলাম। সেই পুরনো দুঃখের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৩। আমাদের প্রথম সন্তান জুওয়াইরিয়া’র আগমনের কথা যেদিন প্যাথলজির রিপোর্ট পেয়ে নিশ্চিত হলাম, সেদিনই নাঈমার ব্লিডিং শুরু হয় বেশ ভাল মাত্রায় এবং ডাক্তার অনকটা হতাশ করে দিয়ে আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল, সব বাচ্চা পৃথিবীতে আসে না। সেই সব কথা আমি আমার অন্য লেখায় লিখেছি। এবারো প্যাথলজি রিপোর্ট আনার সময় বারবার সেই কথাগুলই মনে পড়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আল্লাহ’র ইচ্ছায় এবার তেমন কিছু হল না। নাঈমার সাধারণ খারাপলাগাটুকু বাদ দিলে, মোটামুটি ভালই ছিল। এবার আর দেরী করি নি। সরাসরি ওকে অধ্যাপক ডাঃ রাশিদা খানম রিতু আপার চেম্বারে নিয়ে গেলাম, ইবনে সিনা তে। এই আপার তত্ত্ববধানেই জুওয়াইরিয়া হয়েছিল। আপা আমাদের দেখেই চিনে ফেললেন। নাঈমাকে পরীক্ষা করে সাধারণ ব্যবস্থাপনা দিয়ে দিয়েন এবং সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে জানালেন সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯। ঘুরে ফিরে সেই দিনটাই কিভাবে যেন চলে এলো! আমার মেয়েটার সময়ে রাশিদা খানম আপা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। এবার গিয়ে দেখলাম আপা ফুল প্রফেসর হয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। উনার ভিজিট আমার জানা ছিল আগের হিসেবে। সেটা যখন দিলাম উনি একশো টাকা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, প্রোমশন পাবার পরে আমি ফি কমিয়ে দিয়েছি। আপাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে এলাম।

 

নিয়মিত চলতে লাগলো নাঈমার শারিরীক পরীক্ষা। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা গেল বাচ্চার জীবনস্পন্দন ঠিকঠাক মতই পাওয়া যাচ্ছে। কোন সমস্যা নেই। জুওয়াইরিয়া যখন জানতে পারলো যে তার একটা ভাই/বোন আসছে তখন থেকে আর খুশির শেষ নাই। খেলাধুলা করে আর এসে এসে ওর আম্মুর পেট ছুঁয়ে ছুঁয়ে ওর অদেখা অচেনা ভাই/বোনটিকে মায়া বুলিয়ে দিয়ে যায়। কখনও এসে ওর মায়ের পেটের উপরে চুমু দিয়ে আবার খেলতে চলে যায় আর প্রশ্নবানে আমাদের জর্জরিত করে ফেলে, বাবু কবে আসবে? ওকে নানা রকম বুঝ দিয়ে চলতে হত! ওকে যখন প্রশ্ন করতাম তুমি চাও? ভাইয়া না একটা ছোট্ট আপু? তখন ও খানিকটা চিন্তা করে দার্শনিকের মত উত্তর দিত, আমার তো আসলে আপুই বেশী পছন্দ, কিন্তু থাক, এবার একটা ভাইয়াই হোক! আল্লাহ আমার মেয়েটার কথা শুনেছেন। মেয়েটাকে একটা ভাইই দিয়েছেন, যে ভাইটা এখন মেয়েটার জানের টুকরা হয়ে গেছে। ভাইয়াকে ছাড়া মেয়েটা এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। চুমু দিতে দিতে ভাইকে অস্থির করে একেবারে কাঁদিয়ে ছাড়ে মাঝে মাঝে! ভাই তার ছোট ছোট হাত দিয়ে বোনের চুল ধরে টানাটানি করতে থাকে। বোন ব্যথায় চিৎকার করে আর বোনের এই দুর্দশা দেখে ভাই খিলখিল করে চারটা দাঁত বের করে হাসতে থাকে।

 

শুরু হলো আমাদের অখন্ড অবসরের পালা। দিন যায় রাত যায়! আমাদের ছোট্ট অনিন্দ্য তার আম্মুর পেটের ভেতরে বেড়ে উঠতে থাকে।  আমার ধৈর্য আর বাঁধ মানে না। ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল... এভাবে মাস গুনতে লাগলাম। জুন এসে গেল। জুনের ৩০ তারিখে আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী। ভাবলাম সাধ্যমত পালন করি। এই দশম বিবাহ বার্ষিকীতে আল্লাহ’র শ্রেষ্ঠ উপহার আমরা পেতে যাচ্ছি। সাধ্যমত বাসায় খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করে আমার তিনজন মামাতো বোনকে দাওয়াত দিলাম। ওরা আসলো। খাওয়া দাওয়া হল। আমরা উপহার পেলাম। আমি নাঈমাকে দিলাম লাল-বেনারসী ওড়না। টকটকে লালের ভেতরে সোনালী সুতার ডিজাইন। লাল রঙ আমার সবসময়ই পছন্দ। আর বেনারসী লাল শাড়ি পরা নাঈমাকে দেখতে আমার সবসময়ই ভাল লাগে। এখন শরীরের এই অবস্থায় শাড়ি পরা সম্ভব ছিল না বিধায় লাল বেনারশী ওড়না দিয়ে বললাম, নতুন বৌ-এর মত ঘোমটা দাওতো দেখি, কেমন লাগে! দিয়েছিল! আর ওকে একটা গোল্ডের ব্রেসলেটও কিনে দিয়েছিলাম আমার উপহার হিসেবে। সেদিন আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সবসময়।

 

আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ এসে গেল। শশুরবাড়ী বেড়াতে গেলাম। নাঈমা বললো, আমার কেমন জানি লাগছে। আমরা জানতাম যখন তখন আমাদের রেডী থাকতে হবে। রাশিদা আপা বার বার বলে দিয়েছেন, শেষের দিকে প্রেসার বার বার মেপে দেখতে হবে। নাঈমার বড় বোনের বাসায় গিয়ে প্রেসার মেপে দেখা গেল নাঈমার প্রেসার বেশী এবং ওর কিছুটা খারাপ লাগছে। আমি বললাম, আর দেরী করা যাবে না। কিছুতেই না। তোমাকে এখান থেকেই এক কাপড়ে আমি হসপিটালে নিয়ে যাবো। কোন রকম রিস্ক আমরা নিতে পারি না। নাঈমার বোনের বাসা থেকেই ওকে গাড়িতে করে ধানমন্ডি শঙ্করে ইবনে সিনা হসপিটালে নিয়ে গেলাম। তখন রাত প্রায় ১১.৩০ এর মত বেজে গেছে। ওরা তখনই ভর্তি করে নিলো। প্রেসারের অবস্থা দেখে বললো, এখন অবজারভেশনে থাকতে হবে, রাশিদা আপা এসে কাল চেক করে জানাবেন কি ব্যবস্থা। নাঈমা তখন আমাকে জানালো, তুমি তো এখানে থাকতে পারবে না। ওর ছোট বোনের কথা বললো, তাকিয়া আসুক, ও আমার সাথে থাকবে, তুমি কাল ভোরে চলে এসো। তাকিয়া, নাঈমার কিছু কাপড় নিয়ে রাত ১২.৩০ এর দিকে আসলে, আমি চলে এলাম হসপিটাল থেকে। ভোরে আবার আসতে হবে। নানা চিন্তায় রাতে ঘুমই আসলো না ঠিকমতো। সকালে ফজরের পরেই পড়িমরি করে আবার চলে আসলাম হসপিটালে। সকাল ৮টার দিকে রাশিদা আপা এসে চেক করে আমাকে ডেকে নিয়ে জানালেন, ওর প্রেসার আছে। রিস্ক নেয়া উচিত হবে না। আর আগের বাচ্চাটা যেহেতু সিজারে ছিল একই কারণে অর্থাৎ নাঈমার প্রেসারের কারণ, এখানে বাচ্চাকে নরমালে হওয়ালে বাচ্চার জীবন ঝুঁকিতে চলে যেতে পারে। আর প্রাকৃতিক সময়ে আরো প্রায় আড়াই সপ্তাহ তো বাকী ছিলই। নাঈমা জানত ব্যাপারগুলা। মানসিক প্রস্তুতি তো ছিলই। আপা জানালেন সিজার অপারেশন হবে দুপুরের পরে। ৪টার দিকে। আমি ফোনে ফোনে সবাইকে জানাতে লাগলাম। আম্মু তখন ঢাকায় ছিল না। আম্মুকে ফোন দেয়া মাত্রই উনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলেন। বাসা থেকে নাঈমার দরকারী কাপড়, বাচ্চার তোয়ালে, কাপড় এগুলো হসপিটাকে নাঈমার জন্য বরাদ্দ কেবিনে রাখা হল। শুরু হল আমাদের অপেক্ষার পালা। আমার অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। নাঈমাকে ও.টি তে নেবার আগে কেবিনে আনা হলো আমাদের সাথে দেখা করার জন্য। আমরা ওর সাথে ছবি তুললাম। আম্মুও ততক্ষণে এসে গেছেন হসপিটাল এ। আমার শাশুড়িও চলে এলেন। আমার বন্ধু কনক ওর স্ত্রী সহ দেখে গেল। আমাদের সামনে নাঈমাকে ওটিতে নিয়ে গেল। আমরা মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম। বাইরের কাঁচের দরজা থেকে আমাদের চোখ আর সরে না। আমার বোন শেফা মোবাইলের ভিডিও মোড অন করে দরজার উপরে ধরে রাখলো যেন আগন্তুক ভাতিজার প্রথম দৃশ্য সে সবার আগে ধারণ করতে পারে। আমরা আগেই জেনে গিয়েছিলাম যে জুওয়াইরিয়া’র এবার ভাই আসছে।  

 

প্রায় পনেরো বিশ মিনিট পরে শেফা চেচিয়ে আসলো, ঐযে বাবু বাবু......! নার্সের কোলে তোয়ালে পেচানো আমার ছোট্ট জাদুর খনি অনিন্দ্য! আমরা হুড়াহুড়ি করে ঢুকলাম কাঁচ ঠেলে। সবার প্রথমে দৌড়ে দিয়ে নার্সের কাছ থেকে কোলে তুলে নিল নাঈমার বড় ভাবী অর্থাৎ সোনিয়া ভাবী, অনিন্দ্য’র বড় মামী। সোনিয়া ভাবী আমার দুইটা বাচ্চাকেই প্রথম নার্সের কাছ থেকে কোলে তুলে নিয়েছিল! ভাবির কোলে রেখেই আমি ছলছল চোখে অনিন্দ্য’র ডান কানে আজান আর বাম কানে ইকামাতের শব্দগুলো শুনিয়ে দিলাম। আম্মু কোলে নিল, আমার শাশুড়ী কোলে নিল। আমিও একটু ভয়ে ভয়ে কোলে নিলাম। অনিন্দ্য চোখ পিটপিট করে তাকায়, আবার বন্ধ করে। কাঁদে নি। নার্স আবার আমাদের কাছ থেকে ভেতরে নিয়ে গেল। এর কিছুক্ষণ পরে নাঈমার বেডে ওর পাশে শুইয়ে মা-ছেলেকে একসাথে বের করে নিয়ে এলো। তখন আমরা আবার একদফা ছবি তুললাম। এরপরে মা-ছেলেকে পোষ্ট অবজার্ভেশন রুমে নিয়ে গেল। ওখানে দিনের বাকী অংশ এবং রাতে থাকবে। পরদিন সব ঠিক থাকলে কেবিনে দিবে। পরদিন দুপুরের দিকে মা-ছেলেকে কেবিনে দিয়ে গেল! শুরু হলো আমার অনিন্দ্য বাবাটার জীবনের দ্বিতীয় দিন। নাম তো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আমার বাবাটার নাম রাখা হলো, নুয়াইমান বিন জায়েদ (অনিন্দ্য)। বদরী সাহাবী হযরত নুয়াইমান বিন আমর (রাঃ) এর নামানুসারে আমি আমার ছেলের নাম রেখেছি।

 

আজকে আমার ছোট বাবাটার এক বছর পুর্তি হয়ে গেল। সে এখন সারা বাসা হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ায়। মেজাজ দেখায়, হাসে! সর্বশক্তি দিয়ে আমার দাঁড়ি ধরে টানাটানি করে আর ইচ্ছামত সেখান থেকে দাঁড়ির পশম ছিঁড়ে আনে। মানা করলে হাসে! প্যান্ট পরা না থাকলেও ঝাড়ু একটা পেলে ফ্লোরে বসে বসে ঘর ঝাড়ু দেয়। হাতের ধারে যা পায় ধরে ধরে খাটের উপরে থেকে ফেলে দেয়। ফেলে দিয়েই আমাদের দিকে তাকিয়ে চারটা দাঁত করে হেসে আমাদের দুর্দশা দেখে। আমার মোবাইলটা তার সবথেকে বেশী প্রিয়। না দিলে, আ আ করে লাফিয়ে লাফিয়ে রাগ প্রকাশ করে। আর মোবাইলট ফোনটা হাতে পেলে ধরে কানে দিয়ে বলতে থাকে, ‘ও ও ঔ’। ওই ভাষার অনুবাদ করা আমার পক্ষে সম্ভব না! এভাবেই কেটে যাচ্ছে আমাদের দিন। সবার কাছে আমার সন্তান, আমার পরিবারের সকলের জন্য দোয়া চাই।

View shawon1982's Full Portfolio