২৩ আগস্ট ২০২০

তিতা করলা অনেকে খেতে পছন্দ করলেও তিতা কথা শুনতে কেউই পছন্দ করে না। তবুও তিতা প্রসঙ্গ যেমন সামনে চলে আসে তেমনি মাঝে মাঝে তিতা কথা বলতেও যেমন হয়, শুনতেও হয় তেমনই। কারণ আমরা অনেকেই হাসিঠাট্টার ছলে এমন কাজকর্ম করি, যেগুলো আমার কাছে ‘হাসির খোরাক’ মনে হলেও আদতে সেগুলো মূর্খতা আর অনৈতিক বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।  ইদানিং কালে ফেসবুক এ প্রায় দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ কমেন্ট এবং নিজেদের স্ট্যাটাস এ ‘বাণী’(!) জাতীয় কিছু পোষ্ট দিচ্ছেন এবং সেগুলোর শেষে ‘–‘ চিহ্ন দিয়ে কিংবদন্তী সাহিত্যিক এবং অসংখ্য পুরষ্কারের সাথে ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত ড. হুমায়ূন আহমেদ এর নাম জুড়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ যে নিম্নমানের কথা সেখানে জুড়ে দেয়া হচ্ছে ‘ট্রেন্ড’ এর নামে তার সাথে হুমায়ুন আহমেদ এর লেখনীর দূর দূর দিয়ে তো দূরের কথা ছায়া দিয়েও কোন সংকাশ নেই। এমন একজন মানুষ, একজন সাহিত্যিকের নাম ব্যবহার করে এহেন অরুচিকর কাজের হেতু কি সেটা আমি কয়েকদিন ধরে চিন্তা করেও কোন সুরাহা করতে পারলাম না। যে উত্তর আমার নিজের মনের ভেতর প্রতিধ্বনিত হল, সেটা হল, আমাদের মনের অনেক কলুষতার মধ্যেও এটিও এক ধরণের কলুষতা, গুনী মানুষের নামে অহেতুক কুৎসা রটনা করে নিজের মানসিক বিকৃতির পরিচয় তুলে ধরা। আমি দুঃখিত, এখানে আমি কোন উদাহরণ তুলে ধরবো না। যদি আমার উপরে আপনাদের বিশ্বাস থাকে, তাহলে সেই বিশ্বাসের ভিত্তি করে বলছি, নিজের চোখে এমন কয়েকটা উদাহরণ না দেখলে আমি আজকের এই লেখাটা লিখতাম না।

 

আমার খুব দুঃখ লাগে যখন দেখি আমাদের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাচ্চাগুলো এমন কিছু ‘ট্রেন্ড’ বা গড্ডালিকায় গা ভাসায় যেগুলো কোনভাবেই শোভনের তালিকায় ফেলা যায় না। স্কুলের বাচ্চারা কোথাও ভুল করলে সেটা উচিত ছিল বড় ভাই বা আপু হিসেবে তাদের শুধরে দেয়া। কিন্তু সেটা না করে নিজেরাই যখন সেগুলো করে, তাহলে আমরা আমাদের ছোটদের জন্য কি উদাহরণ রেখে যাচ্ছি? বর্তমানে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জানামতে Plagiarism সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেয়া হয় এবং সেটা যে একটা গহির্ত অন্যায় সেটাও শিক্ষার্থীরা জানে ভাল করেই। আধুনিক বিশ্বের শিক্ষিত মহল এ বিষয়ে সোচ্চার। তারপরেও কি করে সেই শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা সমাজের মেধাগুলোকে এমন অবজ্ঞা করে সেটা আমার বোধগম্য নয়। ড. হুমায়ুন আহমেদ আমাদের সামনে পরিচিত উনার লেখনির মাধ্যমে। উনি কোন ধর্মের প্রবর্তক যেমন না, তেমন উনার একান্ত ব্যক্তিগত জীবনও একান্তই উনার, আমার আলোচ্য বিষয় না। উনার ব্যক্তিগত জীবন অযাচিত ভাবে কেন আমার সমালোচনায় উঠে আসবে, সেখানে আমি নিজেই চাই না আমার ব্যক্তিগত জীবন সমালোচিত হোক? আপনি নিজে যদি একজন সাহিত্য বোদ্ধা হয়ে থাকেন, তাহলে হুমায়ুন আহমেদের লেখার গঠনমূলক সমালোচনা করেণ। উনার বহুমুখী প্রতিভাকে মানুষের সামনে তুলে ধরেণ। সত্যি সত্যি উনার যে সমস্ত উক্তি আছে, সেগুলোকে যথার্থ ভাবে উপস্থাপন করেন। হুমায়ূন আহমেদ’রা একদিনে তৈরী হয় না। এই ক্ষণজন্মা মানুষরা যুগে যুগেও জন্মায় না। গুনী মানুষের সন্মান দিতে শিখুন, নিজেও সন্মানিত হবেন। একজন সন্মানিত ব্যক্তিই পারেন অন্য মানুষকে সন্মান দিতে।

View shawon1982's Full Portfolio