২১ মে ২০২০

 

** ‘ক্লোন’ (Clone) খুঁজে পেয়েছি আমার

= = = = = = = = = = = = = = = =


খুব বেশী ভনিতার মধ্যে যাচ্ছি না। মূল আলোচনার আগে এইটুকুই শুধু বলতে চাই, আমাদের কারো কারো মধ্যে কিছু না কিছু মিল হতেই পারে। দুই একটা মিল পেলে আমরা তেমন একটা পাত্তা দিই না। কিন্তু ১৮ বছরের ব্যবধানে, দুই ব্যাচের দুইজন নটরডেম কলেজের ছাত্রের মধ্যে যদি বহু মিল একসাথে খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে সেটাকে অলৌকিক বলে হয়ত চালিয়ে দেয়া যেতে পারে মনের সান্ত্বনার জন্য। আমি আমার সাথে ২০১৯ ব্যাচের ‘তাওসিফ হাসান খান’ এর এতগুলো মিল খুঁজে পেয়েছি যে, শেষমেশ আমি এটাই বলতে চাচ্ছি যে, আমি আমার ‘ক্লোন’ খুঁজে পেয়েছি এবং সেটা আমার প্রাণের কলেজ নটরডেম থেকেই! মাত্র কিছুদিন আগে আমার কোন এক পোস্টের দুর্বল লেখা পড়ে তাওসিফ আমাকে নক করে, ফেসবুকে অ্যাড করে। এরপর আমাদের আলাপচারিতায় বেস্ট সেলিং থ্রিলারের মত বেরিয়ে আসতে থাকে এক এর পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য!

 

ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। ছোট ভাই তাওসিফের সাথে আলাপচারিতায় আমরা অনেক অনেক তথ্যে নিজেদের জীবনে হুবহু মিল বা অনেকাংশে মিল পেয়েছি যা সাধারণত একই পরিবারের দুই কাজিনের মধ্যেও পাওয়া দুষ্কর। আমি তাওসিফকে বলেছি, তুমি হচ্ছো আমার ক্লোন। যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকতো, তাহলে হয়ত বলতাম, আগের জন্মে আমরা মনে হয় দুই যমজ ভাই ছিলাম। এই জন্মে স্রষ্টা আমাদের ১৮ বছরের ব্যবধানে দুই পরিবারে পাঠালেও ঠিকই আমাদের দেখা করিয়ে দিয়েছেন। সদালাপী বন্ধুবৎসল তাওসিফ খুব সহজেই এই অধমের মনে জায়গা করে নিয়েছে। করোনার এই দুর্যোগ না হলে আমার মনে চাচ্ছিলো আমি ওকে ওর বাড়ি থেকে এনে আমার কাছেই রেখে দেই। যা হোক, এবার আমি ছোট ছোট পরিসরে ওর সাথে আমার পাওয়া মিলগুলো উল্লেখ করছি।

 

১। কলেজ নটরডেম এবং গ্রুপ একই। গ্রুপ ‘সেভেন’, সায়েন্স। আমার রোল #১০১৭১৭০ আর তাওসিফের হল #১১৯০৭০১২

 

২। কেমিস্ট্রি গুরুঃ আমরা একই গুরুর শিষ্য বা সতীর্থ। উভয়ের কেমিস্ট্রির শিক্ষক মিঃ সঞ্জিত কুমার গুহ স্যার। এবং আমাদের উভয়ের পছন্দের সাবজেক্ট অবশ্যই কেমিস্ট্রি।

 

৩। আমরা উভয়ই ‘সরকারী স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস’ করেছি। তাওসিফ করেছে কিশোরগঞ্জ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আর আমি করে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুল (ঢাকা) থেকে।

 

৪। আমরা উভয়েই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাওসিফ মাত্র ভর্তি হয়েছে। আমি পাস করেছি ২০০৭ সালে। আমাদের উভয়ের বিষয় Chemical Engineering (ChE) বা কেমিকৌশল। আমরা কেমিস্ট্রিকে ভালবেসেই কেমিকৌশল নিয়েছি। তাওসিফ আর্কিটেকচারে ২৪ তম হয়েও নিজের পছন্দে কেমিকৌশল নিয়েছে।

 

৫। আমি যখন বুয়েটে লেভেল-১, টার্ম-১ এ ছিলাম তখন সাবেকুন্নাহার সনি আপার হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিনের জন্য ভার্সিটি বন্ধ হয় যায় আর তাওসিফের ক্ষেত্রেও সেই এখন ১-১ এ বন্ধ চলছে করোনা ভাইরাস দুর্‍্যোগের কারণে। উভয়েরই ১-১ দীর্ঘায়িত হয়ে গেল। ( কি আর করা?)

 

৬। আমরা পৈত্রিক ভিটার ভিত্তিতে উভয়ই দুই ভি.আই.পি’র প্রতিবেশী। তাওসিফ হল মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিবেশী (কিশোরগঞ্জ) আর আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবেশী (গোপালগঞ্জ)। এখানে উভয় জেলায় কিন্তু ‘গঞ্জ’ উপাংশতেও মিল আছে!

 

৭। তাওসিফ এবং আমি আমরা উভয়ই আমাদের স্বীয় পরিবারের প্রথম সন্তান এবং অবশ্যই ‘বড়-ছেলে’।

 

৮। আমারা উভয়ই তিন ভাই বোন! দুই ভাই এক বোন!

 

৯। আমাদের উভয়ের মায়ের নাম একই! আমাদের মায়ের নাম ‘রুকসানা’!

 

১০। উভয়ের রক্তের গ্রুপ একই। AB+

 

১১। রক্ত নিয়ে বলা শেষ হয়নি। আরো কাহিনি আছে। তাওসিফের বাবার রক্তের গ্রুপ AB+ আর মায়ের হল A+. আমার ঠিক উল্টাটা। আমার বাবার A+ মায়ের AB+. এটাকে কি বলবেন?

 

১২। ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন, আমরা একই ধরনের চশমা পরি। তাওসিফ এখন যেই ধরণের ফ্রেম পরে আছে, আমি আমার স্কুল, কলেজ লাইফ থেকে শুরু করে এই ধরণের চশমাই ব্যবহার করে আসছি।

 

১৩। তাওসিফ উচ্চশিক্ষা নিতে এবং গবেষণা করতে ভীষণ আগ্রহী। আমার ডক্টরেট ২০১৩ সালেই হয়ে গেছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে সনির্বন্ধভাবে ঐকান্তিক প্রার্থনা করি, আমার ছোট ভাইটার মনের আশা পূরণ হোক। একজন উচুস্তরের গবেষক হোক ভবিষ্যৎ জীবনে!

 

১৪। আমাদের উভয়ের শখের ক্ষেত্রেও যেন আমরা হুবহু প্রতিরুপ। আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করি, জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে পছন্দ করি। আড্ডা দিতে ভালবাসি। গান শোনা, বই পড়া, ঘোরাঘুরি করা এগুলো তো আছেই। তাওসিফ এবং আমি আমরা উভয়ই পাহাড় এবং সমুদ্র যুগপৎ ভালবাসি। আমাদের উভয়ের পছন্দের লেখকের তালিকায় আছেন ড. হুমায়ূন আহমেদ এবং ড. জাফর ইকবাল।

 

১৫। তাওসিফ বুয়েটের ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ হলে থাকে। আমিও নজরুল ইসলাম হলে সংযুক্ত ছিলাম। বুয়েটের নিয়মানুসারে, অনাবাসিক ছাত্রদেরও কোন না কোন হলের সাথে সংযুক্ত থাকতে হয়!

 

১৬। তাওসিফের জন্মদিন ৭/৭ আর আমার হল ৬/৬

 

১৭। আমাদের উভয়ের একজন খালাতো বোন আছে এবং উভয়ের ডাক নাম "নিশা"। শুধু তাই নয়, আমাদের পরস্পরের খালাতো বোন আমাদের থেকে ৪ বছরের বড়। 

 

আর কি কিছু বলার বাকী রইলো! বুঝেই গেছেন তাওসিফকে কেন আমি আমার ‘ক্লোন’ বলেছি। তাওসিফের উচ্চস্তরের লেখাপড়ার জন্য এবং গবেষক হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য কিছু করতে পারলে আমি মনে করবো আমি আমার জন্যই কিছু করলাম। নটরডেম কলেজের যে কোন ছাত্রের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। ছোট ভাইদের জন্য কিছু করতে পারলে আমরা বড় ভাইরা খুশিই হব। ‘নটরডেম’ এই কথাটার সাথেই এক অদ্ভুত মায়া, ভালবাসা জড়িয়ে আছে। এই কলেজের ছাত্র শুনলে মনের ভেতর থেকেই এতটা আপন বলে মনে হয় যেটা অনেক নিকটাত্মীয়ের ক্ষেত্রেই মনে হয় না। আসলেই তো, এই কলেজ আমাদের আত্মার বন্ধনে বেধে রেখেছে। তাওসিফ সহ ছোট বড় সবার প্রতি জানাই আমার ভালবাসা!  

View shawon1982's Full Portfolio