১ মে ২০২০

আজকের দিনটা আমার জীবনে দুইটা কারণে স্মৃতিময়। ঠিক দশ বছর আগে এই দিনে অর্থাৎ ১লা মে ২০১০ এ আমার বিয়ের আনুষ্ঠনিকতা শেষ হয় বৌ-ভাত তথা ওয়ালিমার মাধ্যমে। আমার ধর্মীয় আকদ বা বিয়ে যদিও আগের বছর মাস দশেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের ঠিক চার দিনের মাথায় আমাকে প্রবাসে ফেরত যেতে হয়েছিল কারণ আমার সীমিত ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিছু করার ছিল না। কারণ বিয়েটাও হুট করে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরের বছর যখন দেশে এসে অনুষ্ঠান করি, সেটা খুব স্মৃতিময় ছিল। অনুষ্ঠান সবগুলোই হয়েছিল জাঁকজমকের সাথেই। এই দিনে অর্থাৎ ১লা মে তেই ছিল শেষ অনুষ্ঠান তথা ওয়ালিমা। অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাহেব। উনি এখন আর বেঁচে নেই। অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে সবার নজর কেড়েছিল বিশিষ্ট অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু সাহেব। উনি সম্পর্কে আমার ফুফা হন। মিরপুর ১১ তে আল-ফুয়াদ কমিউনিটি সেন্টারে হয়েছিল অনুষ্ঠানটা। বেশ মজা হয়েছিল। নিজের বিয়েতে নিজেই এঞ্জয় করেছিলাম ব্যাপারটা মন্দ না।

 

আর দুঃখের স্মৃতিও একটা আছে এই দিনে। ২০০৬ সালের এই দিনেই, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়ছি, গ্রুপ স্টাডি করার জন্য হলে গিয়েছিলাম। বিকাল বেলা আম্মু ফোন করে জানালো, তোমার বড় মামা মারা গেছেন। আমি ভীষণ হতচকিত হয়ে গেলাম। আমার প্রিয়, আমার বড় মামা আর নাই? হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেছেন! আমার পরীক্ষা চলছিল বলে খুলনা যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না তখন। দেখা হল না আমার প্রিয় মামার শেষ বিদায়। দারুণ এক মজার মানুষ ছিলেন আমার বড়ো মামা। আমাদের সাথে অনেক রসিকতা করতেন। শিকার করতে পছন্দ করেতেন। কত মজার মজার গল্প করতেন। খুলনা গেলেই আমার প্রিয় কাজ ছিল, বড়ো মামার সাথে উনার ষোলো’র মাছের ঘের দেখতে যাওয়া। এক দফা তো যাবই। আমার মামা ওয়েস্টার্ণ বইয়ের খুব ভক্ত ছিলেন। মামার ছিল বই পড়ার শখ। উনার ঘরের শেলফে সেবা প্রকাশনীর অনেক বই ছিল। আমার টার্গেট ছিল কি করে ওখান থেকে বই নেয়া যায়। মামার শেলফ থেকে নেয়া কিছু বই, এখনও আমার সংরহে আছে। বইগুলোতে মামার সিগনেচার দেয়া আছে। আমার মামার নাম ছিল আব্দুন নূর (খোকন)। খুলনার দৌলতপুরের পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত আছেন আমার শান্তিপ্রিয় এই মামা। মামার সেই ভরাট কন্ঠ এখনও আমার কানে ভাসে। চলতি কোন লোকপ্রিয় নাটকের চরিত্রের নাম ধরে ছোট ছোট নাতি পুতাদের ডাক্তেন। কাউকে বলতেন খান্ডে রাও, কাউকে মঙ্গুজ (বেজী’র ইংরেজী)। মামা মাঝে মাঝে ইংরেজী কঠিন কঠিন শব্দের বানা ধরতেন। পারলে খুশি হতেন। আমার কাছে মামার হাতের লেখা দুইটা চিঠি আছে। সেই চিঠি দুইটাই এখন বড় মামার আশীর্বাদের মত মনে হয় আমার কাছে। সৃষ্টিকর্তা মামাকে ভাল রাখুন।

 

View shawon1982's Full Portfolio