২২ মার্চ ২০২০

‘বাংলাদেশী’ আমরা! এই পরিচয়টা কখনও যেমন গর্ব বয়ে নিয়ে আসে তেমনি বলতে খারাপ লাগে, কখনও আমাদেরই আচরণের জন্য এই শব্দটা আমাদের জন্য লজ্জাও বয়ে নিয়ে আসে। সত্যি কথা বলতে আর দ্বিধা কি? সারা দেশের সভ্য মানুষ (অর্থাৎ সচেতন মানুষ) যখন করোনা ভাইরাসের জন্য সাধ্যমত সর্বোচ্চ সচেতনতা অললম্বন করছে, তখন আমরা এই বাংলাদেশী কি কি করছি? আমার ক্ষুদ্র নজরে মোটামুটি যা কিছু চোখে পড়েছে, এবং যা যা নিয়ে মানুষ আলোচনা করেছে-

 

১। করোনার আকৃতির বড়া আর মাস্ক আর আকৃতির লুচি বানিয়ে খাওয়া হচ্ছে।

২। কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলার জন্য অশ্লীর কথার তুবড়ি ছোটানো হয়েছে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর লোকের উদ্দেশ্যে।

৩। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে করোনা কে রুখে দেয়ার জন্য, এটাকে অনেকেই ঘুরে বেড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ মনে করে সমুদ্রসৈকতকে জনারন্যে পরিণত করেছে।

৪। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্রিফিঙে সাংবাদিক কর্তৃক প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আপনার পেছনে ৩৭ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে! সবাই সবার গা ঘেষে এবং এখানে কোন সতর্কতা অললম্বন করা হয়নি।

৫। কোয়ারেন্টাইনের সিল হাতে নেয়া লোক কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকেট কিনছে।

৬। কোয়ারেন্টাইনে থাকে এক লোক মাছ বিক্রি করছে। উনি সম্প্রতি প্রবাস থেকে ফিরেছেন।

৭। কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থাতেই বিয়ে করেছেন। অনুষ্ঠান করেছেন, কিন্তু জানতে পেরে বৌ-ভাত ঠেকিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।

৮। কোয়ারেন্টাইনে থাকে এক লোক পালিয়েছে বলে তাকে দাবড়িয়ে ধরে এনেছে অনেকে মানুষ, পরে তারা বিজয় মিছিল করেছে।

৯। মিরপুরে একজন মারা গিয়েছে, সেজন্য পুরো বাড়ি কোয়ারেন্টাইন করে দেয়াতে সেই বাড়ি দেখতে শত শত মানুষ গা ঘেষাঘেষি করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।

১০। এই জরুরী অবস্থার মধ্যেই ‘ভোট’ দেয়া হয়েছে।

১১। মানুষের ধর্মচেতনা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। জুমার নামাজে এবং অন্যান্য নামাজে মাসজিদে উপস্থিতি নিয়ে অনেক ধর্মীয় গুরু ‘মাহফিল’ গরম করে ফেলছে, যেখানে স্বয়ং কাবা ঘরের তাওয়াফ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।

১২। ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মানুষের অনুভুতি নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। স্বপ্নে ভাইরাসের দেয়া গাণিতিক ফর্মুলা নিয়ে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, সেটা নিয়ে চটকাচটকি হচ্ছে।

১৩। গুজবের প্রসার করা হচ্ছে। পীর সাহেব বলেছেন তাই সবাই তিনটা করে থাককুনি পাতা খাবার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন, নিজের জ্ঞান বিবেক লোপ করে দিয়ে।

১৪। অনেক পয়সাওয়ালা বাসাকে গুদাম বানিয়ে ফেলছেন। ‘আমি বাঁচি অন্যরা মরুক’ এই নীতি মাথায় রেখে, সমানে জিনিস কিনছেন।

১৫। মজুদদার রা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে।

১৬। করোনা ভাইরাস শুধু উহুদী আর বিধর্মিদের আক্রমন করবে, মুসলমানদের কিছু হবে না, এই জাতীয় সাম্প্রদায়িক, উষ্কানিমূলক কথাবার্তা ছড়ানো হচ্ছে। এবং দেশের অনেক মানুষের বদ্ধমূল ধারণা সেটাই।

১৭। ডাক্তারদের প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট দেয়া হয়নি যেমনটা দরকার ছিল, উলটা নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে যে যার মাস্ক নিজে নিয়ে আসবে। ডাক্তাররা চিকিৎসা দিবে কিন্তু তাদের জীবন ভয়ঙ্কর আশঙ্কাযুক্ত।

১৮। করোনা নিয়ে তর্ক বিতর্কে হাতাহাতি মারামারিতে মারা গেছে একজন।

 

এমন অনেক অনেক আরো পয়েন্ট হয়তো আপনাদের মনেও পড়বে। এগুলার সমষ্টিই আমরা। এই গোড়ামী আর ভ্রম আর ধর্মের নামে অধর্মের বিস্তারকারীও আমরাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছোট বোন শান্তার স্ট্যাটাসটা নিচে হুবহু তুলে দিচ্ছি। কারণ ওর স্ট্যাটাসটা পড়ার পড়ে আমার মনে হয়েছে আমার নতুন করে বলার আর কিছুই নেই। যা বলতে চেয়েছিলাম, শান্তা সেটা বলে দিয়েছে।

 

“করোনা ভাইরাস বনাম আমার গ্রামের মানুষ:


ঘটনা ১ঃ এক হুজুর আসছে বাড়িতে এতিমখানার জন্য টাকা নিতে। আমি বললাম হুজুর আপনি ত টাকা কালেক্ট করতে বাড়ি,বাড়ি,গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন,মাস্ক নেই কেন!


হুজুর: দেখ মা, নামাজ পড়ি,কুরআন পড়ি,কিছু হবে না। এসব ভাইরাস টাইরাস আসছে ইহুদিদের জন্য আমাদের জন্য না

 

ঘটনা ২ঃ অটোতে বসে আমি আর আব্বু যাচ্ছি। আব্বু অটোচালক কে বলছে ভাই তুমি মাস্ক ব্যবহার কইরো শুধু করোনাভাইরাস এর জন্য ত না তুমি অটো চালাও বাতাস নাকে মুখে লাগলে ত এমনি ঠান্ডা, সর্দি হয়।


অটোচালকঃ কি বলেন ভাইজান! সংগ্রামের সময় পাঞ্জাবিরা আমাদের গ্রামে আসতে পারেনি, পীর কাশিমপুর এসে থেমে গেছে গুলি মারছিল বন্দুক কে গুলি বের হওয়ার পর গুলি উধাও হয়ে গেছে, আমাদের গ্রাম পর্যন্ত আসতে ই পারে নি।আমাদের পীর-মুরশিদ আছে,আর এতো একটা ভাইরাস।“

View shawon1982's Full Portfolio