১২ মার্চ ২০২০

কি এক ভাইরাস যে আসলো! সবাই ভয়ে কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে গেছে। সবার মধ্যেই কেমন যেন একটা অদৃশ্য মৃত্যুভয় কাজ করছে। যে যত বেশী জানছে সে তত বেশী কাবু হয়ে যাচ্ছে। আর যে মোটেই জানে না, সে মনে হয় তত ভাল আছে। সে তো জানেই না, ভয় টা আসবেই বা কোত্থেকে? আর যারা আমার মত? অর্থাৎ কোন কিছুতেই যাদের কিছু এসে যায় না? আমরাও একরকম ভালই আছে। আমার কথা হল, এত ভয় পেলে চলে? যতটুকু সতর্কতা নেয়ার দরকার নিচ্ছি। এর বেশী তো আমি কিছু করতে পারবো না!

 

আমাকে জীবিকা উপার্জনের জন্য পথে পা বাড়াতেই হবে। আমাকে তো দুয়ার বন্ধ করে বসে থাকলে হবে না। আমার তো এতো স্বচ্ছলতা নেই যে আমি, নিজে একটা গাড়ী চড়ে বসে ঘোরাঘুরি করবো! আমাকে নিয়মিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেই চলাচল করতে হয়। প্রতিদিন নতুন নতুন শত শত মানুষের মধ্যেই চলাচল করছি। আমি কাউকে ঘৃণা করছি না। সবাইকে আগেও যেমন দেখতাম, করোনা ভাইরাস আসার পরেও সবাইকে সেভাবেই দেখছি। কারো সাথে হাত মেলাতে, তাকে ভালবাসায় জড়িয়ে ধরতে আমার কোথাও কোন আপত্তি নেই। আমার কাছে এখনও ভাইরাসের ভয়ের চেয়ে মানুষে মানুষের ভালোবাসার দাম অনেক বেশী।

 

কাল আমি আর আমার স্ত্রী মিরপুর দুই নাম্বার স্টেডিয়ামের কাছে চৌরাস্তার মোড় পার হব। এমন সময় তিন কি চার বছরের একটা মেয়ে আমার পাঞ্জাবী টেনে বলল, আমাকে একটু রাস্তা পার করে দিবেন? আমি ভীষণ অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে। মেয়েটার হাতে একটা খাবারের টোপলা। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি মেয়েটার হাত ধর। কারন, মনে হতে লাগলো, এটা কোন চক্রের কাজ নয়তো? আমরা বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার করাচ্ছি, তখন হয়ত তেড়ে আসলো, ছেলে-ধরা বলে! যা হোক, সেই ভয় পাইনি। সামনেই একজন ট্রাফিক পুলিস অফিসার দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাচ্চাটাকে পার করে তার সামনে গিয়ে বললাম, এই বাচ্চাটা আমাদের বলেছে রাস্তা পার করে দিতে। উনি বললেন, অসুবিধা নাই নিয়ে যান। রাস্তা পার হয়ে বললাম, তোমার মা কই? মেয়েটা ইশারা করে দেখালো, ঐদিকে। মেয়েটা হেঁটে সামনে এগিয়ে গেল। আমাদের ইচ্ছা হল একটু সামনে এগিয়ে যাই। কয়েক কদম এগোতেই দেখলাম একটা দোকানের সামনে ওর মা শুয়ে আছে! গিয়ে খাবারটা ওর মায়ের হাতে দিল। ওর মাকে বললাম, এটা আপনার মেয়ে? সে বললো, হা! আরেকটা আসতেসে! আমি হতবাক, সে তখন বলল, আরেকটা পেটে! এরপর সে প্যাকেটের খাবার নির্বিকার ভঙ্গিতে খেতে লাগলো। ফুটফুটে মেয়েটা মায়ের পাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো।

 

আজকে বাসে করে আসছিলাম ছেলের রিপোর্ট ডাক্তার কে দেখিয়ে। বাস যখন সেই স্টেডিয়ামের কাছে এলো, অজান্তে চোখ চলে গেল সেই দোকানের সামনে। দেখি এখনো সেই মহিলা সেখানে বসে আছে। মেয়েটা আজ অন্য একটা ড্রেস পরে মায়ের পাশে ঘুরঘুর করছে! সামনে আর চিন্তা করার সাহস হল না। একটা গর্ভবতী মহিলা, ফুটপাথে পড়ে আছে! তার দৈনন্দিন জীবন কিভাবে চলছে? কিভাবে বেঁচে আছে সে? জীবনের মানে তার কাছে কি? আর আমরা? করোনা ভাইরাসের ভয়ে দুয়ার দিয়ে বসে আছি। কারো সাথে হাত মেলানোর আগে চিন্তা করছি, হাত মেলালে ভাইরাস আমাকে খেয়ে ফেলবে নাতো?

View shawon1982's Full Portfolio