২৬ জানুয়ারী ২০২০

অ্যালো ভেরা (Aloe Vera) কে বাংলায় বলে ‘ঘৃতকুমারী’! আহা কি একটা মাখন মাখন নাম! ছোটবেলায় দাদীর কাছে শুনতাম এর নাম ‘ঘেত্তকুমলা’! উনি এটা উনার আঞ্চলিক ভাষায় বলতেন। ছোটবেলা থেকেই চিনি এটাকে। দাদুকে দেখতাম দেশ থেকে এলে দুই একটা অ্যালোভেরার স্বাস্থ্যবান পাতা সাথে করে নিয়ে আসতেন। আমাদের ফ্রিজে রেখে দিতেন। চারকোনা ফালি ফালি করে কেটে পাতার একদিকের ত্বক ছিলে সেই ছেলা অংশ মাথায় দিয়ে বসে থাকতেন! বলতাম, এটা মাথায় দাও কেন? উনি বলতেন, এতে মাথা ঠান্ডা থাকে। আমিও উনার দেখাদেখি মাথায় দিতাম! গরম মাথা ঠান্ডা করতাম। অংক পরীক্ষার আগে মাথায় ‘ঘেত্তকুমলা’ দিয়ে নিভু নিভু চোখে ম্যাথ-রিভাইস করতাম!

 

ইদানিং এই অ্যালোভেরার বহুবিধ ব্যবহার দেখি। আগে দেখতাম রাস্তার মোড়ে মোড়ে এর শরবত বানায়ে বিক্রি করছে। মানুষ দেদারসে এটার শরবত খাচ্ছে। এর ভেষজ গুণ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমি বাংলাদেশে এর শরবত খাইনি, কিন্তু প্রবাস জীবনে কিছু কিছু জুস খেয়েছি যেগুলোর ভেতর এই অ্যালোভেরা দেয়া থাকতো। যাই হোক, বিজ্ঞাপনের গুণেই হোক আর ভেষজ গুণের ব্যাপারে সচেতনতার কারণেই হোক, মানুষ এখন অ্যালোভেরাকে বেশ গোণায় ধরে। অনেকে অ্যালোভেরার গাছ লাগাচ্ছেন টবে করে! মন্দ কি? খাওয়া যায়, রুপচর্চা করা চলে! দরকার হলে মাথায় দিয়ে বসে থেকে মাথা ঠান্ডা রাখা চলে!

 

গতকাল এক ফার্মেসীর দোকানে গেলাম বাচ্চার ডায়াপার কিনতে। চোখ চলে গেল অ্যালোভেরার একটা লিপ-বামের দিকে। এদিকে কয়দিন ঠোটে পেট্রোলিয়াম জেলী জাতীয় কিছু দেই নেই, ঠোঁট শুকায়ে ফেটে প্রায় রক্তারক্তি অবস্থা। অ্যালোভেরা দেখে অপরিসীম ভালবাসায় আমার মন দয়ার্দ্র হয়ে গেল। কিনে ফেললাম একটা। বাসায় এসে দেখি টেবিলে আমার ভায়রা বসে আছে, শাশুড়ী বসে আছেন, খালা শাশুড়ী আছে, এবং আরো অনেকে। টেবিলে দেখি রুটি আর মুরগীর মাংস দেয়া। চটপট খেয়ে নিলাম। ঠোঁট জ্বালা করছে মুরগীর ঝোলে। ভাবলাম খেয়েই অ্যালোভেরা লাগাবো ঠোঁটে, এরপর একটা উপন্যাস নিয়ে আয়েশ করে পড়তে বসবো।

 

যে কথা সেই কাজ। প্লাস্টিক ফয়েল খুলে ঠোঁটে আয়েশ করে অ্যালোভেরা লিপ-বাম ঘসছি আর কথা বলছি। আমি প্রথমে বুঝি নি। ভেবেছি, ছিঃ ছিঃ আমার ঠোঁটের চামড়া উঠে একি অবস্থা! ওমা পরে দেখি পেছন থেকে আমার শাশুড়ি বলে উঠলেন, কি মাখো কি মাখো? অনেকটা আর্তনাদের মত শোনালো উনার গলা! আমার স্ত্রী পেছন থেকে বলে উঠলো তুমি ‘লিপস্টিক’ মাখছো? এরপরে হাসির ধুম পড়ে গেল। আমি ততক্ষণে বুঝলাম সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে। এটা একধরণের Disguised Color Lip-stick ছিল। যেটা দেখতে হালকা সবুজ রঙের হলেও ঠোটে দেয়ার সাথে সাথে ম্যাজেন্ডা রঙ হয়ে যাচ্ছিল। আমি পড়ি মরি করে আমার ফাটা ঠোটের উপরে জোরে জোরে গামছা ডলে ডলে সেই রঙ ওঠানোর চেষ্টা করেও পুরোপুরি সফল হলাম না। একটু রঙের প্রভাব থেকেই গেল! মনে মনে বললাম, অ্যালোভেরার গুষ্টি কিলাই! মুখে বললাম, কি আর করা থাক! সেটা নিয়ে পরে আমার শ্যালিকাকে দিয়ে দিলাম! গেল আমার অ্যালোভেরা! উচিত শিক্ষা হয়েছে আমার! চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনই অ্যালোভেরা হলেই সেটা রংহীন হয় না!

View shawon1982's Full Portfolio