১৪ জানুয়ারী ২০২০

একটা হত্যা করেছিলাম আমি আমার অজ্ঞাতসারে । যেমনই হোক সেটা হত্যা ছিল। যেটার কথা মনে পড়লে আমার মন এখনও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সৌদি আরবে থাকতে হত্যাটা করেছিলাম। আমার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। ১৯৮৮ সালের ঘটনা। সেই হত্যার স্মৃতি আমাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। যদিও অবুঝ বয়সের ছিলাম তবুও আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে যতবার মনে হয়েছে ঘটনাটার জন্য ততবারই ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। অবলা পশুটা তো প্রতিবাদ করতে পারেনি। নীরবে মরে গেছে। একটা মুরগী ছিল সেটা। আব্বু একবার কয়েকটা মুরগী কিনে এনেছিলেন জীবিত। সাদা রঙ এর। উদ্দেশ্য ছিল নিজেরা জবেহ করে এরপর বাসায় খাওয়া হবে। একটা কার্টনের ভেতর ছিল মুরগী গুলো। কয়েকটা একসাথে। মুরগীগুলো রাখা ছিল আমাদের বাসার গেটের কাছে। দুপুরে আব্বু আম্মু ঘুমাতেন মাঝে মাঝে। আমি সাধারণত ঘুমাতাম না। আমার অনেক খেলনা পাতি ছিল। সেগুলা নিয়ে খেলতাম। কি খেয়ালে একটা লাঠি নিয়ে আসলাম। মুরগীগুলোকে খোচাখুচি করতে লাগলাম। মুরগীগুলো ফার্মের ছিল। অনেক শান্তশিষ্ট। এরা নড়াচড়া বা প্রতিবাদ তেমন করতে জানে না। খুব সম্ভবত পা বাঁধা ছিল। আমি একটা লাঠি দিয়ে একটা মুরগীর গলায় খোঁচা দিতে লাগলাম। আমি বুঝতে পারিনি এতে ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। মুরগীটা চোখ বন্ধ করে ফেলছিল। আমি মনে করেছিলাম মনে হয় ঘুমিয়ে যাচ্ছে। এরপর লম্বা সময় লাঠিচেপে ধরেছিলাম ঘুম পাড়াবো বলে। মুরগীটা ঘুমিয়ে গেল চিরতরে। কোন প্রতিবাদ করেনি, করতে পারেনি।

 

আব্বু ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, বা আমি দেখালাম, দেখো তো মুরগীটা ওঠে না কেন? উনি দেখে বললেন, এটা তো মরে গেছে। আমি ‘মরে যাওয়া’ কি জিনিস তখনও বুঝতাম না। মৃত্যু ব্যাপারটা বাংলাদেশে এসে পরে বুঝেছি। আব্বু বললেন, তুমি কি করেছ? আমি সব বলে দিলাম। কারণ তখন মিথ্যা কথা কিভাবে বলতে হয় জানতাম না। সব বলে বললাম, এটা এখন খাওয়া যাবে না? আব্বু বললেন, মরা মুরগী খাওয়া যায় না। উনি আমাকে একটুও বকা দিলেন না, সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন, লাঠি দিয়ে ওদের কষ্ট দিতে হয় না। ওদের খাবার দিতে হয়। আমি এতটুকু বুঝেছিলাম তখন, আমি যে কাজটা করেছি ঠিক করিনি। আমার অন্যায় হয়ে গেছে। এরপরে আমি এই জাতীয় কাজ আর কোনদিন করিনি। তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমি নিজের হাতে কোন মুরগী জবেহ করিনি। করবোও না সারাজীবন আর। তখন বুঝিনি কিন্তু এখনও আমার ভেতর অপরাধবোধ কাজ করে।

 

প্রতিনিয়ত তো কত মশা মাছি মেরে ফেলছি, তেলাপোকা মারছি। কিন্তু কীট-পতঙ্গ মেরে ফেলা আর বিনা কারণে একটা মেরুদন্ডী পশু বা পাখি মেরে ফেলার মধ্যে পার্থক্য তো আছেই। এখন পত্র পত্রিকা ইন্টারনেট খুলনেই দেখতে পারি, মানুষ(!), ছিহ! মানুষ বলতেও ঘৃণা হয়, মানুষ(!) এর মত দেখতে জন্মানো দানবগুলো, কি অবলীলায় বিড়াল, কুকুর, এদের বাচ্চাকাচ্চা মেরে ফেলছে! কিভাবে পারে? পিটিয়ে মেরে ফেলছে বিড়াল কুকুর এদের বাচ্চা। মাঠের মধ্যে খেলছিল দেখে ৯ টা কুকুরের বাচ্চাকে পিটিয়ে মেরে ফেললো? মানুষ(!) এর মত দেখতে এই শয়তানগুলা কি জানে না, তাকে যে সৃষ্টি করেছে, এই কুকুরের শাবকগুলাকেও সেই মহান সত্ত্বাই সৃষ্টি করেছেন? হাদীসের মধ্যে বর্ণিত আছে, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহ’র পরিবারভুক্ত’। একবারো কি মানুষ(!) নামের এই দানব হিংস্র শয়তানগুলা ভাবলো না, সর্বদ্রষ্টা এসব কিছু দেখেছেন? একবারও মনে হল না, সর্বশক্তিমান সেই সত্ত্বা সমস্ত জীবের ভাষা আর তাদের কষ্ট সম্পর্কে অবহিত আছেন? কোন জাতির কথা আলোচনা করছি আমি? যেই জাতিতে পিতার দ্বারা স্বীয় কন্যা ধর্ষিত হয়? সম্পত্তির জন্য যেই জাতিতে পিতা নিজের সন্তানের কান কেটে, জননাঙ্গ কেটে, পেটে বুকে ছোরা ঢুকিয়ে মেরে ফেলে গাছে ঝুলিয়ে রাখে? মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানেন? সৃষ্টিকর্তা আসলেই কি অসীম ধৈর্য্যের অধিকারী। সবকিছু তিনি কতখানি অপরিসীম ধৈর্য্যের সাথে দেখছেন।

View shawon1982's Full Portfolio