৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

আড্ডা দেয়া আমার খুব পছন্দের একটা কাজ এবং এটাকে শখ ও বলা যেতে পারে। কথা বলার মত মানুষ পেলেই আমার আর কথা নেই, আড্ডায় মেতে উঠতে আমি ভীষণ ভালবাসি। আড্ডা দিতে দিতে কত রকমের আলাপ চারিতা করা যায়। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে যদি হালকা চা-নাস্তা বা চা-চক্র চলে, তাহলে তো মনে হয় আর কথাই নেই। অমর লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ডঃ হুমায়ূন আহমেদ সহ অনেক কবি সাহিত্যিকদের জীবনীতেই দেখেছি তারাও আড্ডা দেন এবং ভালবাসেন। আমার আড্ডা দেয়ার জন্য বয়সের কোন ব্যবধান নেই। যে কোন বয়সী মানুষের সাথেই আমি আড্ডায় মেতে উঠতে পারি যদি উপস্থিত ব্যক্তির সাথে আমার মনে মিল থাকে। মনের মিল না থাকলে সেটাকে অন্তত আড্ডা বলা যায় না। সেটা তর্ক বিতর্কে পর্যবসিত হয়। সেখান থেকে মন কষাকষি এবং দ্বন্দ্ব বিভেদ মতানৈক্য তৈরী হয়, যেটা কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষের কাম্য নয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন যেসব বন্ধু ছিল, এখন তাদেরই সবচেয়ে বেশী সংখ্যকের সাথে আমার আলাপ হয়। এখনকার আড্ডার ধরণ অবশ্য অনেকটাই পালটে গেছে। দেখা করা যদি সম্ভব নাও হয় তবুও মেসেঞ্জারে বা ইন্টারনেটে, ফোনালাপে আড্ডা দেয়া হচ্ছে। তবুও আড্ডা দেয়া চাই। নগরের যাপিত জীবনের যান্ত্রিকতা যখন শ্বাসরোধ করে ফেলে, তখন একটু মনকে রেহাই দেয়ার জন্য আড্ডা কেমন যেন একটা প্রাণ সঞ্জীবনীর মত কাজ করে। নগর জীবনের ব্যস্ততার একঘেয়েমী কাটিয়ে উঠতে আড্ডায় মেতে উঠি। বন্ধুদের সাথে যখন আড্ডা দেই, ওদের সাথে কথা বলার মাঝে আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে যেমন আলাপ করা যায় তেমনি কোন না কোন মাথা থেকে সমস্যা সমাধানের জন্য কত সুন্দর সুন্দর পন্থা বের হয়ে আসে। হাসি ঠাট্টা যখন চলতে থাকে তখন মনেই হয় না, প্রায় এগযুগেরও বেশী সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে এসেছি। বন্ধুদের সাথে বসলে মনে হয় বয়স যেন এখনও সেই আগের ফ্রেমেই গেঁথে আছে। শরীরের বয়স যত বাড়ে বাড়ুক, আমি আমার মনের বয়স কখনও বাড়তে দেই না। কি হবে এত সাতপাঁচ ভেবে? জীবনতো একটাই। একটু আনন্দে কাটুক না জীবন। সেই আনন্দে তো কোন মানা নেই, যাতে কারো ক্ষতি হচ্ছে না বা কোন ধরণের সীমা লঙ্ঘন হচ্ছে না।

 

আমার নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হয়। আমার এক ঝাঁক ছোটভাই আছে যারা মূলত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ওদের সাথে আমার ইন্টারনেটে যেমন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে, তেমনি আমি আমার সময় সুযোগ পেলেই ওদের কাছে যাই। ওদেরকে দেখতেই বারবার যাই। ওদের অনিন্দ্যসুন্দর মুখগুলো যখন দেখি, তখন আমি ভুলে যাই, ওদের সাথে আমার বয়সের বেশ বড় একটা ব্যাবধান আছে। ওদের সাথেও কত রকমের আলাপ হয়। আমি যখনই ওদের সান্নিধ্যে যাই, আমি বুঝতে পারি, যান্ত্রিক নগরজীবন আমার আত্মার ভেতর যে অপাংক্তেয় দহনের সৃষ্টি করেছে, সেটা অবদমিত হয়ে যায়। আমার মনে হয়, ওদের সান্নিধ্য আমাকে প্রতিনিয়ত উদ্দীপ্ত করে। আরো মনে হয়, জীবন অর্থহীন না, অনেক কিছু করা যায়, অনেক কিছু করার আছে। সেগুলো করার জন্য আমার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। ওদের নিষ্পাপ অভিব্যক্তিগুলো আমাকে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর কাছে নিয়ে যায়। আমি ওদের সাথে বসি। ওদের কথা বলা দেখি। একজন অন্যজনের সাথে হাসি ঠাট্টা করে। আমিও যোগ দেই। আমি দেখতে পারি, সময় বদলেছে, মানুষগুলো তো বদলায়নি। আমরাও ঠিক এমনটাই করেছি আমাদের ক্যাম্পাসে। কত কত স্মৃতি আমাকে Nostalgic করে দেয় যখন ওদের মুখগুলো দেখি। ওদের দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ে আমার বন্ধু, রেজা, আরিফ-১, শিমুল, সুমন, আরিফ-২, রাফিয়া, পুনম, মিজান, মুকুল, পারভেজ এমন কত কত বন্ধুদের নাম। সময়ের বিবর্তনে সেই নামগুলোই যেন এখন একটু পরিবর্তন হয়ে হয়েছে- সম্রাট, শুভ, মুনিম, পাপন, অর্ক, নাঈম, সুদীপ্ত, সুব্রত, নয়ন... সেই একই ফ্রেমে বন্দী হই আমরা সবাই। এক অদৃশ্য ভালবাসার বন্ধনে আমরা বাঁধা পড়ে রই।      

View shawon1982's Full Portfolio