৫ ডিসেম্বর ২০১৯

চা বা কফি আমি কোনটাই নেশা করে খাই না কিন্তু দুটোই আমার ভীষণ পছন্দ। বাসায় কাউকে চা খেতে দেখলে আমারো চা খেতেই হবে। আবার সেই চা নিজে বানালেও হবে না। অন্য কাউকে বানিয়ে দিতে হবে। আমি নিজে ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করেছি। কফি আমি নিজে বানিয়ে খেতে পছন্দ করি আর চা যদি অন্য কেউ বানিয়ে দেয় তাহলেই খেতে ভাল  লাগে। আমি চা বানাতে পারি কিন্তু ইচ্ছা করে না বানাতে! আলসেমিতে পেয়ে বসে। জানি না ভুল কিনা, তবে আমি নিজে নিজে একটা জিনিস খেয়াল করেছি। চা আর পান এই দুইটা জিনিস যখন নিজে থেকে কেউ অন্য কাউকে খাওয়ার জন সাধে বা অফার করে তখন তার পেছনে একটা কেমন যেন অন্যরকম টান বা ভালবাসা কাজ করে। কাউকে যদি বলি, তোমার সাথে বসে চা খেতে চাই, তখনও মনে হয় আমার এই আবেগটা কাজ করে। প্রিয় মানুষ বা বন্ধুকে তো বলতে ইচ্ছা করেই, তোর সাথে বসে চা খাবো!

 

বাসা কিংবা অফিসে যেখানেই একটু নিজের জন্য সময় বের করতে পারি, সেখানেই আমার একটু চা বা কফি পান করার জন্য মন করতে থাকে। একদম সেই প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীতের মতই, “আমার মন কেমন করে... কে যানে... কাহার তরে... মন কেমন করে...’। যেন তেন পরিমান খেলে তো আবার মন ভরে না। তাই আমার চা কিংবা কফি খাবার কাপগুলাও প্রমাণ আকারের হয়ে থাকে। যেই থেকে তারই চোখ কপালে উঠে যায়! এত চা, আপনি খাবেন? আমি ৭৫% প্রাকৃতিক আর ২৫% কৃত্রিমতা মিশিয়ে একটা হাসি দেই আর বলি, জ্বী! এর কমে চা খেলে আমার জমে না। আবার চায়ের কাপে বা কফির মগে হালকা হালকা চুমুক দিতে দিতে চুপ চাপ বসে থাকতেও ভালও লাগে না। সেখানেও আমাকে কিছু না কিছু করতে হবে। কেউ সামনে থাকলে তার সাথে নানা রকম গল্প করতে মন চায়! বেশীরভাগই অবশ্য আকাজের গল্প। চা খেতে খেতে আর যাই হোক গুরুগম্ভীর কথা বলতে বা শুনতে আমি রাজি নই। চুমুকে চুমুকে যদি চা বা কফির মজাই না অনুভব করতে না পারলাম তাহলে আর এমন খেয়ে দরকার কি? অনেকে সময় বাঁচাতে পিরিচে ঢেলে সুঁ... করে একটা টান দিয়ে চা শেষ করে। আমিও যে এমন করনিনি কখনও তা নয়। তবে এখন বুঝতে পেরেছি, এমন করা মানে হল, চা বা কফিকে অপমান করার মত। চা ও খাবো আবার তাড়াহুড়া করবো তা তো হবে না ভাই! সময় নিয়ে খান। বেশী বেশী করে মজা নিতে থাকুন আমার মত। গল্প করার মত কাউকে না পেলে, সাথে একটা বই নিয়ে বসে পড়ি আর চা খাই। এটিও আমার খুব পছন্দের কাজ!  

 

অলিতে গলিতে মহল্লায় মহল্লায় তো চায়ের নানা রকম ফেরের রীতিমত পাল্লাপাল্লি চলছে। শিল্প বিপ্লবের মত এখন মনে হয় পানীয়-বিপ্লব চলছে। রাস্তার উপরে রাখা একটা চাকা দেয়া কার্টে কত রকমের যে চা পাওয়া যায় তার তালিকা লিখতে বসলে মনে হয় আরো দুই তিনটা পৃষ্ঠা লেগে যাবে। এসবের মধ্যে টক জাতীয় কোন ফল মনে হয় বাদ নাই যেটা চায়ে দেয়া হয় না। জলপাই, তেঁতুল, মাল্টা, লেবু, ইত্যাদি ইত্যাদি। মরিচের চা ও আছে। রঙ চায়ের মধ্যে মরিচ দিয়ে দেবে। মরিচের রকমফের চাইলেও তাও আছে। নরমাল মরিচ না বোম্বাই মরিচ? আমি অবশ্য নরমাল কাঁচা মরিচের চা খেয়েছি। মন্দ লাগেনি! ঝাল ঝাল চা! হালকা হালকা জিহ্বা জ্বলে আর কি! মাল্টা চা টা আমার খুব পছন্দ। খেতেও কিন্তু বেশ!

 

সিলেটে গেছি বার দুয়েক। ওখানে নাকি কোথায় সাত রঙ আট রঙের চা পাওয়া যায়। অনেকের ছবিতে দেখেছি। আমি খাইনি কখনও। যারা খেয়েছেন তারা নিশ্চই বলতে পারবেন স্বাদ কেমন! বেশ কয়বছর আগে, মামাতো ভাই বাপ্পী খুলনায় আমাদের ডে-নাইত চা খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল। নাম শুনে তো আমি থ! ডে-নাইট চা! বাপ্পী বললো, ভাই চলই না। নিজেই খেয়ে দেখবা কেমন। আমাকে নিয়ে গেল দৌলতপুরের ডে-নাইট কলেজের মোড়ে ছোট্ট একটা টং এর চায়ের দোকানে। যেখানে ছোট একটা ছেলে বসে চা বানাচ্ছিল। আমি একটু হতাশ হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবটা ছিল, ‘এই দোকান! আবার ডে-নাইট চা’। ছেলেটা আমাদের সামনেই একটা ট্রান্সপারেন্ট কাপে অর্ধেক পরিষ্কার গরম পানি নিয়ে তাতে একটু চিনি মেশালো। এরপর চায়ের ছাঁকনি নিয়ে কাপের কোণ ঘেঁষে অল্প অল্প করে কেটলি থেকে মেশাতে লাগলো রঙ চায়ের লিকার। যখন লিকার দেয়া শেষ হল আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, লিকার টা নিচের গরম পানির সাথে মিশে গেল না। নিচে স্বচ্ছ পানি আর উপরে লাল লিকার! হয়ে গেল আমাদের ডে নাইট চা। আমি খাব কি, হাতে কাপটা নিয়ে ভালকরে দেখতে লাগলাম। এও কি সম্ভব! ম্যাজিকের মত মনে হচ্ছিল। পরে তো ঠিকই বুঝেছি, ঘনত্বের পার্থক্যের দরুণ এটা হয়। এই কাপ হাতে নিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রঙের খেলা দেখতে হয়, এরপরে ইচ্ছা হলে চামচ দিয়ে দুই লেয়ার মিশিয়ে দিলেই আপনি আপনার চেনা পরিচিত রঙ চা পেয়ে যাবেন। এবার আয়েশ করে চুমুকে চুমুকে পান করুণ ডে-নাইট চা। পাঠক, আপনার যদি লেখা পড়া হয়ে থাকে, তাহলে আপনি নিজেও ডে-নাইট চা বানানোর চেষ্টা করে দেখতেই পারেন। আর যদি সম্ভব হয়, চা খাওয়ার সময় কাইন্ডলি মনে থাকলে আমাকে একটু ডাক দিয়েন। গল্প করতে করতে চা খেতে যে আমি ভীষণ ভালবাসি।  

View shawon1982's Full Portfolio