নবনীতা (এলোমেলো কথামালা)

প্রিয় নবনীতা,

কেমন চলছে তোমার দিনকাল? নিশ্চই অনেক ভাল আছ। আমি ভাল থাকি, আবার ক্ষণে ক্ষণে কোথাও হারিয়ে যাই। গানের ভাষার মতই আমার যে হারিয়ে যাবার কোন মানা নেই কোথাও। হারিয়ে যাবার মধ্যেও যে কি এক অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করে তাই না? সেজন্যই তো তুমি কি নিশ্চিন্তেই না হারিয়ে আছো। আবার হারিয়ে তুমি যাবেই বা কোথায়? আমি তো আমার মনের মধ্যে তোমাকে ঠিকই খুঁজে পাই। তাহলে কি তুমি হারাতে পেরেছো নবনীতা? সবাই যে বলে তুমি হারিয়ে গেছ? আসলেই কি? আমি তো তোমাকে খুঁজলেই পেয়ে যাই। তুমি তাহলে হারালে কিভাবে?

 

সেদিন আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কত কিছু ভাবছিলাম। সব এলোমেলো ভাবনা। আমার লেখালিখির মত আমার ভাবনা গুলোও সব এলোমেলো। কখনো মেঘ দেখি, মেঘেদের নিঃসঙ্গ ওড়াওড়ি। আসলেই কি মেঘদের কোন স্বার্থ নেই? সঙ্গ নেই? তুমি বলতে, মেঘরা নাকি নিঃস্বার্থ হয়। আবার অনেকটাই নিঃসঙ্গ। সেদিন আমি তোমার এই কথার কোন মেনে বুঝতে পারিনি। তখন তো আমি কবিতা পড়তাম না। আর এখন দেখো, কবিতা না পড়ে থাকতেই পারি না। কি এক অভ্যাসে যে জড়িয়ে পড়েছি! অবশ্য এর কৃতিত্ব তোমার। খোলা চুলে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে আবৃত্তি করতে তখন প্রথম প্রথম আমি আবৃত্তি শুনতাম না। ভাল লাগা চোখে আমি তোমার দু’চোখের মুগ্ধতা দেখতাম। একসময় তোমার মুগ্ধতা আমাকেও স্পর্শ করতো। আমি হারিয়ে যেতাম তোমার কবিতার মধ্যে। আমার সেই কল্পনায় থাকতো লম্বা একটা মাটির পথ, দুই পাশে বড় বড় গাছ। তার মধ্যে হাত ধরে তুমি আর আমি হেঁটে চলেছি নিরবধি নিঃশব্দে এক অজানার পানে। তোমার আমার কোন লক্ষ্য নেই, কোন গন্তব্য নেই। যেন এক উদ্দেশ্যহীনতার মধ্যে হেঁটে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। পথ হারিয়ে পথ চলাই তখন মনে হত জীবনের পরম প্রাপ্তি। হারানোকেও মনে হত পরম পাওয়া। এ সব কিছুই আমি শিখেছি তোমাকে কাছে। আমার কাছে তুমি ছিলে কবিতার এক বাস্তব রূপ। তোমার মুখ থেকে শোনা কবিতা গুলোই মনে হত যেন জীবন্ত ‘তুমি’ হয়ে আমার কাছে এসেছে।

 

কোন কথা থেকে কোন কথায় হারিয়ে গেলাম। এটাই আমার এখনকার অবস্থা। কোন কাজ যে স্থির হয়ে করবো সেই উপায় নেই। একটা শুরু করি, সেটা বাদ দিয়ে, আবার অন্য একটা শুরু করে দেই। এখন আর কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু করতে ভালও লাগে না। মনে হয় আগের মত উদ্দেশ্যহীন হয়ে যাই, ঠিক তোমার মত।

 

আমি বলছিলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘ দেখার কথা। মেঘ উড়ে যায়। কখনো আস্তে আবার কখনও দ্রুততার সাথে। যেন কিছু ধরতে যাচ্ছে। মেঘ কি কাউকে উদ্দেশ্য করে ছোটে কখনও? নাকি আমাদের মতই উদ্দেশ্যহীন? মেঘ দেখতে দেখতে আবার চোখে পড়ে যায় নাগরিক ব্যস্ততায় দৌড়াতে থাকা মানুষগুলোর দিকে। কি এক অজানা ক্ষিপ্রতায় মানুষ ছুটে চলে। যেন এই ছুটে চলাই জীবন। কারো এক মুহুর্ত বিশ্রামের সুযোগ নেই। কেউ নিজের দিকে তাকায় না। সবাই কেমন যেন অন্যের জন্যই ছুটে চলে। আমার ভীষণ অবাক লাগে। মানুষ কি তাহলে সারাজিবন অন্যের জন্য বাঁচে? এত কষ্ট করে সব অন্যের জন্য? এভাবে কি মানুষ একদিন অন্যের জন সব দিয়ে নিঃস্ব হয়ে একাকী চলে যায় পৃথিবী থেকে? এর নাম বেঁচে থাকা? নিজের জন্য কি তবে কিছুই নেই?

 

নবনীতা, আমি আমি আসলেই অনেক এলোমেলো। কি লিখছি আমি নিজেই কিছু ঠাহর করতে পারছি না। একবার মেঘের কথা বলছি তো আবার মানুষের বেঁচে থাকার কারণ খুঁজছি। আমি যে আসলে তোমাকে কিই বলতে চাইছি তা নিজেই বুঝতে পারছি না। এটাই আমার জন্য একটা সমস্যা। আমার বারান্দায় কিছু গাছ লাগানো আছে মাটির টবে। গাছগুলো মনে নয় নীরবে নীরবে দুলে দুলে কোন এক অজানা গানের সাথে তাল দিয়ে চলেছে। যেই গান শুধু ওরাই শুনতে পায়। সেই গান শোনার কোন কান বা মন কোনতাই হয়ত আমাদের নেই। তাই আমরা শুনতে পাই না। আমি একাকী অযত্নে বেড়ে ওঠা কিছু ঘাসের দুলুনি দেখতে থাকি। ওরা নিজেদের মত করে দুলতে থাকে। আমার ভাল লাগে। মনে হয় আমি যেন একটু হলেও প্রানের ছোঁয়া পাই। ওরা যেন আমাকে কি বলতে চায়। আমি এগিয়ে যাই, ওরা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আমার আর শোনা হয় না ওদের কথা। যেমন আমি আজও শুনতে পাইনি তোমার অনেক কথা যা তুমি বলতে চেয়েও আমাকে বলনি। আমি অপেক্ষায় আছি যদি কখনও তুমি আমাকে বল। আমি তো এক আকাশ অপেক্ষা নিয়ে বসে আছি শুনবো বলে কিন্তু তোমার কখন সময় হবে নবনীতা?

 

ইতি

তোমার প্রতীক্ষায় একজন।     

Author's Notes/Comments: 

25 july 2019

View shawon1982's Full Portfolio