রহস্যময় ভয়নিচ ম্যানুস্ক্রিপ্ট

 

রহস্যময় ভয়নিচ পান্ডুলিপি সম্পূর্ণ হাতে লেখা চিত্রসম্বলিত একটি গ্রন্থ যা কোন অজানা বর্ণমালায় রচিত। কার্বন ডেটিং পরীক্ষা করে জানা গেছে যে গ্রন্থটি ১৪০৪-১৪৩৮ সালের মাঝে কখনও রচিত হয়েছে। রচয়িতা সম্পুর্ণ অজ্ঞাত। ইতিহাসে এই গ্রন্থের রচয়িতা সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। ধারণা করা হয় রেঁনেসার সময়ে ইতালীর উত্তরাংশে কোথাও এটি রচিত হয়ে থাকতে পারে। পোলিশ গ্রন্থ ব্যবসায়ী উইলফ্রিড মাইকেল ভয়নিচ ১৯১২ সালে গ্রন্থটি ক্রয় করেন। এরপর থেকেই রহস্যময় এই গ্রন্থটি ভয়নিচ মযানুস্ক্রিপ্ট নামেই পরিচিত। ভেলাম পার্চমেন্টের উপরে লেখা গ্রন্থটির কিছু পাতা কালের আবর্তে হারিয়ে গেলেও এখনও প্রায় ২৪০ টি পাতা অক্ষত আছে। 

 

এখন পর্যন্ত বহু বিশেষজ্ঞ দ্বারা গ্রন্থটি পরীক্ষিত হয়েছে কিন্তু কারো দ্বারাই এর পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। এমনকি ২য় বিশ্বযুদ্ধের দক্ষ ক্রিপ্টোগ্রাফারগণ ও হার মানতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে পান্ডুলিপিটি সংরক্ষিত আছে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেইনেক লাইব্রেরীতে। ১৯৬৯ সালে হ্যান্স পি ক্রাউস গ্রন্থটি সেখানে উপহার হিসেবে দান করেন। বইটির ক্যাতালগ নাম্বার হল MS-408। লেখা এবং চিত্রাঙ্কনের ধরণ দেখে বোঝা যায় যে, এটি পালকের কলম দিয়ে লেখা এবং চিত্রাঙ্কনে লোহার আকরিক থেকে নির্মিত কালি ব্যবহৃত হয়েছে।

 

গ্রন্থটিতে প্রায় ১৭০,০০০ টি অক্ষর আছে আর শব্দসংখ্যা প্রায় ৩৫,০০০। শব্দের মধ্যে অক্ষর বিন্যাস গবেষকদের অবাক করেছে। কোন কোন অক্ষর শুধু প্রথমে, মাঝে বা শেষেই বসেছে। কিছু বিশেষ শব্দ শুধু বিশেষ কিছু পৃষ্ঠায় দেখা গেছে।  কখনও কখনও একি লাইনে এই শব্দের প্রয়োগ দুইবার বা তিনবারও দেখা গেছে। কোন কোন বিশেষ চিহ্নের বারংবার প্রয়োগ এই গ্রন্থের পাঠোদ্ধার কে আরো দুঃসাধ্য করে তুলেছে।

 

গ্রন্থের চিত্রাঙ্কন থেকে ধারণা করা হয় যে, গ্রন্থটিতে মোট ৬টি বিষয়ের সমাবেশ রয়েছে। প্রত্যেকাংশে চিত্রের সাথে বর্ণনা রয়েছে। গ্রন্থের শেষাংশে কোন চিত্র নেই বরং শুধু লেখা রয়েছে। যে যে বিষয়ের ব্ররণনা আছে বলে ধারনা করা হয় তা হল

১। লতাগুল্ম

২। জ্যোতিষ্ক/রাশি সংক্রান্ত

৩। জীববিদ্যা

৪। মানচিত্র

৫। চিকিৎসা/ওষধি বৃক্ষ সংক্রান্ত

৬। লৈখিক বর্ণনা

 

এই গ্রন্থের আদি উৎসের ইতিহার অজ্ঞাত। উইলফ্রিড ভয়েনিচ গ্রন্থটি কেনার পর এর ভেতর একটা চিঠি পান যা ১৬৬৬ সালে লেখা ছিল। চিঠিটা জোহান্স মার্কুস লেখেন অ্যাথানাসিয়াস কির্চার কে। ঐ চিঠিতে উল্লেখ ছিল, এই গ্রন্থ সম্রাট রুডলফ এর তত্ত্বাবধানে ছিল যা উনি ৬০০ ডুকাট স্বর্ণমূদ্রা দিয়ে ক্রন করেন যা প্রায় ২ কিলো ৭০ গ্রাম স্বর্ণের ওজনের সমান। পরে উনি গ্রন্থটি উনার উদ্ভিদ উদ্যানের প্রধান জ্যাকোবাস হর্সিকি দে টেপেনেজ কে প্রদান করেন। পরে এই গ্রন্থের স্বত্বাধিকারী হন, প্রেগ এর অন্যতম কেমিস্ট জর্জ ব্যারেশ। ব্যারেশের মৃত্যুর পর গ্রন্থটি তারই বন্ধু প্রেগের চার্লস ভার্সিটির রেক্টর জোহান্স মার্কুস মার্সির নিকটে। উনি কয়েক বছর পরে অ্যাথানাসিয়াস কির্চারের নিকট পাঠান এটার পাঠোদ্ধারের আশায়। কির্চার মিশরের হায়ারোগ্লিফিক ভাষার পাঠোদ্ধারের দাবীদার ছিলেন। জোহান্স একটি চিঠিতে তাঁকে অনুরোধ করেন গ্রন্থটির পাঠোদ্ধার করতে। এই চিঠিটাই পরে গ্রন্থের সাথে ভয়েনিচের হস্তগত হয়।

 

এর পরের প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস একেবারেই অন্ধকারের অন্তরালে রয়ে গেছে। ধারণা করা হয় কির্চারের তত্ত্বাবধানে এটা রোমানো কলেজ (বর্তমানে পন্টিফিসাল গ্রেগরিয়ান ইউনিভার্সিটি) এ রক্ষিত ছিল। ১৯১২ সালে রোমানো কলেজে অর্থসংকট দেখা দিলে কর্তৃপক্ষ এর কিছু জিনিস বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন যার মধ্যে এই রহস্যময় পান্ডুলিপিটিও ছিল। পরে ভয়েনিচ এটা ক্রয় করে নিলে উনার নালে এই পান্ডুলিপিটি পরিচিত হয়। এরপরে প্রায় ৭ বছর ধরে ভয়েনিচ নিজে এর পাঠোদ্ধারের প্রয়াস নেন এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের নজরে গ্রন্থটি আনার চেষ্টা করেন। ১৯৩০ সালে ভয়েনিচ মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী ইথেল ভয়েনিচ এই গ্রন্থের তত্ত্বাবধানে আসেন। ইথেল ১৯৬১ সালে মারা যাবার আগে তার বান্ধবী অ্যান নীলকে গ্রন্থটি দিয়ে যান। নীল পরে গ্রন্থটি হ্যান্স পি ক্রাউস এর নিকটে বিক্রি করে দেন। হ্যান্স পরে এই গ্রন্থের কোন ক্রেতা না পেয়ে তা ইয়েল ইউনিভার্সিটির সংগ্রহালয়ে দান করে দেন। বর্তমানে ভয়েনিচ ম্যানুস্ক্রিপ্ট সেখানেই আছে।


 

 

[সূত্রঃ ইন্টারনেট]  

Author's Notes/Comments: 

12, 13th December 2016

View shawon1982's Full Portfolio