মাস্তান [Story]

এলাকার মানুষের কাছে তার নাম কালু গুন্ডা। তার বাবা মা কোথায় সে জানে না। ছোটবেলা থেকে লোকে তাকে কালু নামেই ডাকে। তার নিজের একটা সুন্দর নাম হয়তো ছিল কিন্তু সেটা কি সে জানে না।

 

দিনে মাস্তানি করা আর রাতে মদ খেয়ে টাল হয়ে পড়ে থাকাই এখন তার প্রতিদিনের কাজ। মাস্তানির কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চাঁদাবাজি করা, প্রতিপক্ষের নেতা গোছের লোকদের হুমকি দেয়া, মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে পথে ঘাটে লাঞ্চিত করা ইত্যাদি।  

 

লোকমুখে শোনা যায় যে কালুর উপর নাকি এলাকার এম পি সাহেবের আশীর্বাদ আছে। যে কারণে থানার পুলিশ তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার পরও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। ইতোমধ্যে দু একবার জেল হাজতে গিয়েও খুব দ্রুত জামিনে বের হয়ে এসেছে।

 

এলাকার অঘোষিত রাজা যেন সে। একদিন সেলিম মাস্টারের বড় ছেলে রুবেল কালুর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অবস্থায় কালু তাকে থামিয়ে দিয়ে তার গালে এক চড় বসিয়ে দেয়। রুবেল ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যায়। আশেপাশের পথচারীরাও এ রকম অবিবেচক কাণ্ডে বিস্মিত হয়ে ঘৃনাভরে কালুর দিকে তাকিয়ে থাকে।

 

রুবেল কারণ জানতে চাইলে কালু তাকে বলে যে সে তাকে সালাম দেয়নি এটাই তার সবচেয়ে বড় অপরাধ। বেচারা রুবেল নিজেকে বড়ই অসহায় ভেবে বাড়ির দিকে হেঁটে যেতে থাকে। রাগে দুঃখে তার অন্তরে যেন ঝড়ো সমুদ্রের মত উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। রুবেল মনের গভীর থেকে অভিশাপ দিতে দিতে চলে যায়।

 

যতই দিনের চাকা গড়াতে থাকে, ততই কালু যেন কড়াইয়ে রাখা রুটির মত ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে। তার অহংকার তাকে রীতিমত অন্ধ করে দিয়েছে। সে মনে করে যে সেই সবার উপরে। তাকে পরাস্ত করার সাহস কারো নেই।

 

কিন্তু অহংকার যে পতনের মূল সেটা তো সবাই জানে। তার উপর অনেক নিরীহ মানুষের অভিশাপ কালুর উপর কালো মেঘের মত ভেসে বেড়াচ্ছে। ইদানিং তার সাঙ্গপাঙ্গরা স্কুল কলেজগামী মেয়েদের উত্যক্ত করা শুরু করেছে। রুবেলের ছোট বোন নীলা কালুর ইভ টিজিং-এ অতিষ্ঠ হয়ে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।

 

রুবেল অনেকবার প্রশ্ন করার পরে নীলার কাছ থেকে স্কুলে না যাওয়ার পেছনে আসল কারণটা খুঁজে বের করেছে। রুবেল মনে মনে এর একটা বিহিত করার জন্য সংকল্প করে। চুপচাপ বসে থাকলে সমাজে বসবাসকারী কালুর মত কীটেরা আরও বেশী অত্যাচার করবে। ওদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে এখনই।

 

রুবেল সিদ্ধান্ত নেয় যে এলাকার আরও কয়েকজন বিবেকবান মানুষের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে। সে তার দু একজন বন্ধুকে নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য মানুষের সাথে গোপনে দেখা করতে থাকে। সকলেই কালুর উপর ক্ষ্যাপা। কেউই এ ধরণের অন্যায় সহ্য করতে পারে না কিন্তু জনসম্মুখে অপমান এবং অপদস্থ হবার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

 

রুবেলের সাহসী পদক্ষেপে যুবক বৃদ্ধ সকলেই অনুপ্রেরিত হতে থাকে। সবার সাথে কথা বলে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয় সেটা হচ্ছে এই যে একটি নির্দিষ্ট দিনে সবাই এলাকার স্কুলের মাঠে সমবেত হবেন এবং হাতে ব্যানার , পোস্টার ইত্যাদি থাকবে যেখানে কালু এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য বার্তা থাকবে।

 

ইতোমধ্যে একজন সাংবাদিকের সাথে কথা হয়েছে। তিনি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অবিচারের কথা ফলাও করে ওনার স্বনামধন্য পত্রিকায় প্রকাশ করবেন। যাইহোক, অবশেষে সেই দিনটি এসে উপস্থিত। সকলের মুখে তৃপ্তির হাসি। কেউ যেন মুঠো ভরে খুশীর সুরভী ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। সবার মন আজ আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে। আজ যেন কোনও বাধাই বাধা নয়; আজ যেন সকল অন্যায় অত্যাচারের বুকে ছুরি বসিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে।

 

কালু গুণ্ডার অন্যায় মানি না মানব না, কালুর চামড়া তুলে নেব আমরা, অবিলম্বে কালু গুণ্ডাকে গ্রেপ্তার কর, করতে হবে ইত্যাদি স্লোগানে চারিদিক মুখরিত হতে থাকে। আশেপাশের জানালায় এবং বারান্দায় অসংখ্য কৌতুহলী দৃষ্টির মেলা বসেছে যেন। পথচারীদের কানে তীব্র স্লোগানগুলো পৌঁছানোর সাথে সাথে ওনারা শিহরিত বোধ করতে থাকেন; যেন এইমাত্র ওনাদের শিরা দিয়ে বিদ্যুৎ বয়ে গেছে।

 

ওদিকে কালু গুণ্ডার চ্যালারা ঠিকই এই সংবাদটি তার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কালু বিষয়টা জানার পরে বাঘের মত গর্জে উঠেছে। সে যত দ্রুত সম্ভব ঐ মিছিলে উপস্থিত মানুষদের একটি তালিকা করতে বলেছে। পরবর্তীতে বেছে বেছে সে সবাইকে আক্রমণ করবে। কালু যখন শুনেছে যে রুবেল নয়া নেতা সেজেছে তখন কালুর মনে হয়েছে যেন কেউ তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

 

এক রাতে রুবেল এলাকার চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষে একা বাসায় ফেরার পথে কে বা কারা যেন পেছন থেকে অতর্কিতে তার উপর হামলা চালায়। তার পীঠে এবং পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ভুতের মত মুহূর্তেই পালিয়ে যায়।

 

         রুবেল প্রায় আধা ঘণ্টা রাস্তার ধারে তক্তার মত পড়ে থাকে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণে সে যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ঠিক তখন একজন দয়াবান পথচারী তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। এদিকে রুবেল মৃত্যুর সাথে প্রাণপণ লড়াই করছে। অন্যদিকে পরদিন সকালে পত্রিকায় কালু গুণ্ডার রক্তাক্ত ছবি প্রকাশিত হয়। ছবিটির উপরে লেখা কুখ্যাত কালু গুন্ডা ক্রসফায়ারে নিহত!

View kingofwords's Full Portfolio