ভালোবাসা দিবস [Bangla Story]

       আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে, অর্থাৎ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ঘুম থেকে উঠেই শায়ান তার প্রাণপ্রিয় প্রেমিকা নায়লার জন্য ১০১টি লাল গোলাপ কিনতে হন্তদন্ত হয়ে ফুলের দোকানে যায়। যে দোকানেই যায়, সেখানেই লাল গোলাপ আছে ঠিকই, তবে ১০১টি লাল গোলাপ একসাথে কোনও দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না।

 

        কি আর করা, অগত্যা কোনও দোকান থেকে ৫টি গোলাপ, অন্য দোকান থেকে ১৫টি এমন করে অনেক কষ্টে অবশেষে ১০১টি লাল গোলাপ যোগাড় করা গেছে। সবগুলো ফুল যে সকালবেলা বাগানে ফোঁটা ফুলের মতই তরতাজা এমনটি না হলেও শায়ান মনে মনে খুব খুশী কারণ তার স্বপ্ন ছিল যে এই ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে সে ১০১টি লাল গোলাপ দিয়ে নায়লাকে চমকে দেবে! ভালোবাসার মানুষটির মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ যে কতোটা সুখের তা পৃথিবীর সব প্রেমিক ভালো করেই জানে! 

 

        তাছাড়া, নায়লার ফুলের প্রতি ভালোবাসা শায়ানের অজানা নয়। ওদিকে নায়লা অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত বোধ করছে। বিরক্তি ধীরে ধীরে রাগে পরিণত হচ্ছে। নায়লা সেই চিরচেনা পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। এটি সেই বেঞ্চ যেখানে পাঁচ বছর আগে নায়লা বসে ছিল, আর শায়ান হাঁটু গেড়ে নায়লার তুলার মতন নরম কোমল হাতটিতে আলতো চুমু খেয়ে বলেছিল আমি তোমায় ভালোবাসি! আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই! আমি তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই!

 

        সেদিনের সেই অসাধারণ ভালোলাগার মুহূর্তটি প্রায়ই বসন্ত ঋতুর মতন নায়লার মনে ফিরে ফিরে আসে! নায়লা ভাবছে আর অজান্তেই মনে মনে হাসছে, এমন সময় পেছন থেকে শায়ান এসে নায়লার দুই চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দিয়ে দুষ্টুমি করে বলে,

 

- বলোতো আমি কে?


- ফাজলামো রাখো শায়ান!


- বাহ! তুমি এতো সহজেই বুঝে ফেললে যে আমিই তোমার চোখ ঢেকে রেখেছি?


- চোখ ঢেকে রাখলেও কানতো খোলা আছে তাই না? তোমার কণ্ঠ আমি চিনি না বুঝি?


- হুম, একদম খাঁটি কথা!


- এতো দেরী হলো কেন বলোতো? এদিকে আমি অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি!


- সরি বাবা! সরি! এই যে দেখো কানে ধরছি! সরি! সরি! সরি! প্লিজ ক্ষমা করে দাও সোনা! তুমি বললে আমি কান ধরে উঠবস করবো! এই যে দেখো- ১, ২...


- ধেৎ! মশকরা রাখোতো!


- হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে জান! শায়ান হাঁটু গেড়ে ১০১টি লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলে।


- হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে, শায়ান আনন্দে হাসতে হাসতে সেই উপহার গ্রহণ করে বলে।


- তোমার পছন্দ হয়েছে সোনামণি?


- হুম! অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে! থ্যাংক ইউ সো মাচ!


- থ্যাংক ইউ দেবার কি দরকার আবার? তোমার জন্য আমার জীবনটাও দিতে পারি ময়না পাখি!


- থামোতো! আর কখনও যেন তোমার মুখ থেকে এমন কথা না শুনি! নায়লা আলতো করে শায়ানের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে আবেগতাড়িত হয়ে বলে।


- আচ্ছা বাবা, আর কখনও বলবো না, হয়েছে?


- ঠিক আছে, কথাটা মনে থাকে যেন!


- মনে থাকবে আমার প্রাণ পাখি! তোমার জন্য গোলাপ ফুল যোগাড় করতে করতে আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। কিছু খাওয়া দরকার।


- হুম, তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমারও একটু একটু ক্ষুধা পেয়েছে! নায়লা দুষ্টুমির হাসি হেসে বলে।


- আমার সাথে মশকরা করা হচ্ছে তাই না?


- না, আসলেই কিছু একটা খেলে ভালোই হতো।


- কি খাবে বলো? আমি ঝড়ের বেগে যাবো, আর বজ্রের বেগে ফিরে আসবো!


- ফুচকা বা চটপটি খেতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু আশেপাশে কোনও চটপটিওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে না।


- চিন্তা করো না ময়না আমার! রাস্তার ঐ পারে একটা চটপটির দোকান আছে। আমি এক্ষুনি গিয়ে নিয়ে আসি।


- দাঁড়াও! আনার দরকার কি? চলো আমরা সেখানে গিয়েই চটপটি খাই!


- আরে না, না! সেখানে অনেক মানুষের ভিড়ে ফুচকা খেলে মোটেও ভালো লাগবে না!


- আমি কি একা বসে থাকবো?


- বেশীক্ষণ লাগবে না জান! যাবো আর আসবো!


- হয়েছে! তোমার যাওয়া আর আসায় যে কতক্ষণ লাগে সেটা আমার ভালোমতোই জানা আছে!


- বড়জোর দশ কি পনেরো মিনিট লাগবে লক্ষ্মী!


- আচ্ছা যাও, তবে তাড়াতাড়ি এসো!


- ঠিক আছে।

 

        শায়ান দ্রুত দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে যায়। নায়লা শায়ানের দিকেই তাকিয়ে থাকে। পার্কের বেঞ্চ থেকে চটপটির দোকান একেবারে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। শায়ান খুব দ্রুত চটপটির প্যাকেট হাতে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে গেলে ডান পাশ থেকে আসা একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। 

 

        নায়লা দূর থেকে তা দেখতে পেয়েই শায়ান বলে চিৎকার দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শায়ানের নিথর, রক্তাক্ত দেহ দেখে নায়লা মূর্ছা যায়। দুজনকে হাসপাতালে নেবার পর নিবিড় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। মনে হয় ভালোবাসা দিবসে দুই প্রেমিক প্রেমিকা একই সাথে হাতে হাত রেখে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে গেলো যেন!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: