জবাবদিহিতা! [Bangla Story]

          নূর আলম সারাদিন রিক্সা চালিয়ে পথের পাশে টং-এ বসে বেশ আয়েশ করে চা খাচ্ছে। আচমকা কোত্থেকে কিছু পুলিশ এসে আলমসহ সেখানে বসে থাকা অন্যান্যদের ঘাড়ে ধরে পিক আপ ভ্যানে টেনে তুলতে থাকে। দেখে মনে হয় যেন চালের বস্তা তোলা হচ্ছে! জোর যার মুল্লুক তার, এই প্রবাদটি হুবহু ফলে গেছে!  

 

        আতঙ্ক সবার চোখে মুখে; কেউ জানে না কি তাদের অপরাধ! আটককৃতদের মধ্যে দুয়েকজন আবেগতাড়িত হয়ে কাঁদতে থাকে। এর মধ্যে একজন বেশ সাহসের সাথে প্রশ্ন করে বসে,

 

- আমাদেরকে এভাবে ধরে নিচ্ছেন কেন? আমরা কি চোর নাকি ডাকাত?


- চুপ হারামজাদা! একটা কথাও বলবি না! আরেকটা কথা বললেই তোকে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে কুকুর বিড়ালের মতন মেরে ফেলবো!

 

        এমন হুমকি পাবার পর আর কারো মুখ দিয়ে একটি কথাও বের হয় না! গাড়ি এগিয়ে চলে; হতাশা এবং ভয়ও সেই নিরীহ লোকদের সাথে সাথে চলে। তারা মনে মনে ভাবে যে ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই পরিবারের সদস্যরা তাদের গ্রেফতারের কথা জানতে পেরে কান্নকাটি শুরু করেছে।

 

        থানার সামনে গাড়ি থামে; গ্রেফতারকৃত প্রত্যেককে চোরের মতন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে সোজা লকআপে রাখা হয়। তাদের মধ্যে কারো কারো মনে আতঙ্ক, কারো কারো মনে ক্রোধ এবং ক্ষোভ।

 

        এই নিরীহ মানুষদেরকে বিভিন্ন চুরি, ডাকাতি, খুন রাহাজানি ইত্যাদি মামলায় আসামি করা হয়। আলম পাশের একজনকে বলে যে পুলিশ বাড়তি টাকা খাওয়ার জন্যই তাদের সবাইকে এভাবে গণহারে আটক করে এনেছে। সবাই খুব ভালো করে বুঝে যে এটা ঘোরতর অন্যায়। কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস কারো নেই। প্রতিবাদ করলেই যে মামলার পাশাপাশি তাদের উপর পাশবিক হামলাও জুটবে!

 

        ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের আত্মীয়স্বজনরা আসতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা অনেক কান্নাকাটি এবং আকুতি মিনতি করে তাদেরকে মুক্ত করে দিতে অনুরোধ জানাচ্ছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা! পরিশেষে একজন কনস্টেবল এসে কাকে ছাড়ানোর জন্য কত টাকা লাগবে তা বলে দেয়। দুই ঘণ্টার মধ্যেই নির্ধারিত অংকের টাকা আনতে পারলেই কেবল তারা তাদের আটককৃত প্রিয়জনদেরকে মুক্ত করতে পারবে। তা না হলে তারা অতি শীঘ্রই জেলের ভাত খাবে। 

 

        এসবের মাঝে আলম ভেন্টিলেটরের ভাঙা অংশ দিয়ে এক ফালি আকাশ দেখে; সে মনে মনে ভাবে যে পুলিশের এমন অন্যায় জুলুম দেখার পরও কিভাবে আকাশ এমন অপরিবর্তিত থাকে?       

View kingofwords's Full Portfolio
tags: