ঈদের পোশাক [Bangla Story]

        এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসন্ন; আর মাত্র দুই দিন পরেই ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই নিরন্তর খুশী এবং অসংখ্য সুখকর স্মৃতি সৃষ্টি হবার এক অনন্য উপলক্ষ!

 

        প্রতিবার ঈদের আগে ঝিনুক রহমান তার বাসার কাজের মেয়ে আম্বিয়াকে কাপড় কিনে দেন। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঝিনুক তার পছন্দমত একটি ড্রেস কিনে আম্বিয়াকে দিয়েছেন। আম্বিয়াও অত্যন্ত খুশিমনে এবং কৃতজ্ঞতাভরে সেটি গ্রহণ করে বাড়ি ফিরে যায়।

 

        কিন্তু বাসায় গিয়ে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে যখন আম্বিয়া সেই ড্রেসটি খুলে দেখে, তখন গোধূলির আকাশের মতন খুশীতে আলোকিত মুখটা মরা গাছের মতন শুকিয়ে যায়! এটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। নিজের পছন্দ যাচাই করার জন্য সে তার বাইশ বছরের মেয়ে শামিমাকে দেখিয়ে বলে,

 

- দেখ তো শামিমা, ড্রেসটা কেমন?


- এইডা কুনো ড্রেস অইলো? এইডাতো কুনো ফইন্নিরে দিলেও পড়বো না! নাই রঙের কুনো ঠিক, কাফরডাও ফালতু!


- হ, তুই এক্কেরে আমার মনের কতাডাই কইছস রে! গতবার আফায় যে ড্রেসটা দিছিলো, হেইডা সুন্দর আছিলো। কিন্তু এইবার আফায় আমারে এক্কেরে সস্তা কাফড় দিয়া ঠকাইছে!


- হ, মা, তুমি ঠিকই ধরছো।

 

        শামিমার কথাগুলো যেন আগুনে ঘি ঢালার মতন! আম্বিয়া আহত বাঘিনীর মতন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মোবাইল হাতে নিয়ে ঝিনুককে ফোন করে,

 

- হ্যালো! আম্বিয়া!


- জে আফা, আমি। আফা, কিছু মনে না করলে একখান কতা কইতাম!


- কি কথা, বলো!


- আফা আপনে আমারে যেই ড্রেসটা দিছেন, হেইডা আমার মোটেও পছন্দ অয় নাই!

 

- কেন? এতো সুন্দর ড্রেস! আমারতো অনেক পছন্দ হয়েছে! তাইতো তোমার জন্য কিনলাম!


- না আফা, এইডা আমার একটুও ভাল্লাগে নাই! আমার মাইয়ারও একমত!


- তাহলে এক কাজ করো, কাল আসার সময় ড্রেসটা সাথে করে নিয়ে এসো; আমি এটা পরিবর্তন করে তোমার জন্য আরেকটা ড্রেস নিয়ে আসবো, ঠিক আছে?


- না আফা, থাক; যেইডা দিছেন, দিছেন। আর পাল্টাইতে অইবো না!


- কেন? তুমি না এইমাত্র বললে যে ড্রেসটা পছন্দ হয়নি! তাহলে এটা পাল্টে আরেকটা আনলে সমস্যা কোথায়?


- আসলে আমরা গরীব মানুষতো হেইল্লাইজ্ঞা আফনে এইরম সস্তা কাফড় কিন্না আনছেন! আফনার মনডা অনেক বড় ভাবছিলাম, কিন্তু আসলে বড় না!


- আম্বিয়া, তুমি কিন্তু এখন খুব বাড়াবাড়ি করছো! তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না!


- যা কইছি হাছাই কইছি, একটু ভাইব্বা দেখলেই বুঝতে পারবেন।

 

- তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো আম্বিয়া! একজনের পছন্দ আরেকজনের পছন্দের সাথে না মিলতেই পারে! আমি যেখানে বললাম যে ড্রেসটা পাল্টে আরেকটি সুন্দর ড্রেস নিয়ে আসবো, সেখানে তুমি বাচ্চার মতন কেন এভাবে কথা বলছো?


- না আফা, এই ড্রেস আর পাল্টাইয়া আনতে অইবো না! এইডা আমি অন্য কাউরে দিয়া দিমু! আমি এইডা ফড়ুম না!


- তুমি কিন্তু আমার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ আম্বিয়া! আমি একটি ড্রেস কিনে দিলাম আর সেটি তুমি পড়বে না, আরেকজনকে দিয়ে দেবে, এটা কি আমার জন্য অপমানজনক নয়?


- আফনার যেইডা বুঝার হেইডা বুঝেন! তয় আমি এই ড্রেস ফড়ুম না!


- দুই টাকার কাজের মেয়ে হয়েও তোমার এতো বড় আস্পর্ধা! বেয়াদবির একটা সীমা থাকা দরকার! ঠিক আছে, কাল থেকে তুমি আর আমার এখানে কাজ করতে এসো না। কাউকে পাঠিয়ে দিও, আমি তোমার বেতন দিয়ে দেবো। 

 

        মানুষের মনোজগতে অবিরাম যে খেলা চলে, তা বড়ই বিচিত্র এবং রহস্যময়! যার সাথে অনেক বছরের মধুর সম্পর্ক, তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হতে মাত্র কয়েকটি সেকেন্ডই যথেষ্ট! ঝিনুক ভেবেছেন যে আম্বিয়া তার আত্মসম্মানে কুড়ালের মতন প্রচণ্ড আঘাত করেছে; অন্যদিকে আম্বিয়ার ধারণাও অনেকটা একই ধরণের; তার মতে ঝিনুক এতো সচ্ছল পরিবারের একজন হয়েও আম্বিয়াকে এতো নিম্নমানের কাপড় কিনে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তাদের মধ্যেকার সম্পর্কটা শুধুমাত্র মালিক এবং চাকরানীর! যে ঘরটিকে আম্বিয়া এতদিন নিজের ঘরের মতই ভেবে এসেছে, সেটির পানে এখন তাকালেই ঘৃণায় তার দুচোখ বুজে আসে! যেন এটি ঘর নয়, একটি নোংরা আবর্জনাময় ডাস্টবিন!

View kingofwords's Full Portfolio
tags: