নষ্টামি! [Bangla Story]

      রিয়ান, পাপ্পু এবং ফাহিম এইচ এস সি-র ফলাফল জানার জন্য চট্টগ্রাম কলেজে গিয়েছে। অনেক ভিড়ভাট্টা হবার ফলে নোটিশ বোর্ডে টানানো ফলাফল থেকে নিজেদের ফল খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়!

 

        অবশেষে যখন তিনজনই তাদের ফল দেখতে পায়, সকলের মুখই সকালবেলার সতেজ এবং আলোকিত আকাশের মতই প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠে। ফল দেখার পূর্বে তিন বন্ধুর মধ্যে ফাহিম বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল; কেন জানি তার মনে হচ্ছিলো যে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না। কিন্তু ফলাফল খুব ভালো না হলেও সে যে কৃতকার্য হয়েছে এতেই তার মনে আনন্দের সুনামি ঘটে গেছে!

 

        ফল জানার পালা শেষ হলে তারা স্বাধীন পাখীর মতই এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে। যেন নেই কোনও সমাজ, নেই কোনও নিয়ম, যেন তারা যা ইচ্ছা করতে পারবে, যেন তাদেরকে আটকানোর মতন কেউ নেই! কিন্তু আড্ডা এবং ঘোরাঘুরি করতে করতে কখন যে তিনটা বেজে গেছে তা কারোই খেয়াল নেই!

 

        বলাই বাহুল্য যে রিয়ান, পাপ্পু এবং ফাহিম তিনজনই বেশ ক্ষুধার্ত। তখন পাপ্পূ বলে,

 

- চল বাসায় চলে যাই।


- হ্যাঁ চল, সেটাই ভালো হবে; ঘর থেকে বের হয়েছি অনেকক্ষণ হয়েছে। আর দেরী করলে মা দুশ্চিন্তা করবে, রিয়ান পাপ্পুর সাথে একমত পোষণ করে বলে।


- আরে না না, কি যে বলিস না তোরা? ঘরে কেউই কোনও চিন্তা করবে না! আমাদের মা বাবারা ঠিকই বুঝবেন যে পরীক্ষার ফল বের হয়েছে, একটু দেরীতো হতেই পারে! ফাহিম তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলে।


- ফাহিমের দেখি ঘোরার সাধ এখনও মেটেনি! পাপ্পু একটু টিটকারি করে বলে।


- বাসায় না গিয়ে কি করবো বল? প্রচণ্ড ক্ষুধায় পেট দাবানলের মতন জ্বলছে! রিয়ান বিরক্তির সাথে বলে।


- খাবার নিয়ে এতো চিন্তা করিস কেন তোরা? ফাহিম দৃঢ়তার সাথে বলে।


- তুই যদি আমাদেরকে বার্গার কিনে খাওয়াস, তাহলে আমরা আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারি, পাপ্পু বলে।


- আমিও একমত, রিয়ান বলে।


- খাবার ব্যবস্থা হয়ে যাবে!


- কিভাবে হবে শুনি? রিয়ান জিজ্ঞেস করে।


- ঐ যে দেখ, কমিউনিটি সেন্টার!


- দেখেছি, তো? পাপ্পু বলে।


- তার মানে হচ্ছে এই যে আমরা সেখানে মেহমানদের সাথে মিশে গিয়ে সুস্বাদু খাবার খেয়ে আসবো! ফাহিম বলে।


- তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? রিয়ান বলে।


- কেন? ফাহিম জানতে চায়।


- সেখানে কি তোর মামার বিয়ে হচ্ছে নাকি যে গেলাম আর খেয়ে চলে আসলাম? পাপ্পু ভেংচি কেটে বলে।


- আমাদের সবার পরনে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে আমরা কলেজপড়ুয়া ছাত্র! যদি ধরা পড়ে যাই? রিয়ান বলে।

 

- আরে দোস্ত, বুকে সাহস থাকতে হয়! তোদের মতন এমন ভীতু বন্ধু আমি কখনো দেখিনি!


- আচ্ছা, তোর কোনও প্ল্যান আছে কিনা বল? পাপ্পু বলে।


- অবশ্যই আছে! শোন, আমরা খালি হাতে সেখানে যাবো না; যদি যাই তবে সবার সন্দেহ হবে। তার চেয়ে আমরা বরং একটা গিফট নিয়ে যাবো। ফাহিম বলে।


- শালার মাথাটা আসলেই গেছে! পকেটে আছে মাত্র কয়েকটি টাকা। কিছু কিনে খাবার টাকা নেই আর সে বলে কিনা উপহার কিনবে! টাকা কি আকাশ থেকে পড়বে নাকি? রিয়ান বলে।


- সমস্যা থাকলে সমাধানও থাকবে। তোরা আমার সাথে ঐ দোকানটায় চল।


- দেখ, এখনও সময় আছে, এসব পাগলামো বাদ দিয়ে চল যার যার বাসায় যাই। ধরা পড়লে কিন্তু একটা মারও মাটিতে পড়বে না! পাপ্পু বলে।


- আরে রাখ তোর প্যাঁচাল! আমার সাথে আয়তো!

 

        রিয়ান, পাপ্পু এবং ফাহিম পার্শ্ববর্তী দোকানে যায়। ফাহিম সামনে গিয়ে দোকানীকে জিজ্ঞেস করে যে একটি ছোট খালি কাগজের বাক্স দেয়া যাবে কিনা। মুদি দোকানে এরকম বাক্স এমনিতেই পড়ে থাকে। তাই খুব সহজেই বাক্স জোগাড় হয়ে যায়!

 

        এরপর ফাহিম রাস্তা থেকে একটি মোটামুটি ওজনের ইট কুঁড়িয়ে নিয়ে আসে। পাপ্পু এবং রিয়ানকে যেন মন্ত্র পড়ে বশ করা হয়েছে! তারা একটি কথাও বলছে না; শুধু চোখ মার্বেলের মতন বড় বড় করে ফাহিমের আজব কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছে!

 

          ফাহিম ইটের টুকরোটি যত্নসহকারে সেই খালি বাক্সের ভেতরে রাখে। তারপর দোকানির কাছ থেকে একটি সুদৃশ্য রেপিং পেপার কিনে নিয়ে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে সেই বাক্সটি সুন্দরভাবে বেধে ফেলে। এখন কেউ দেখে বোঝার উপায় নেই যে বাক্সের ভেতরে মূল্যবান উপহারের পরিবর্তে একটি সামান্য ইটের টুকরা আছে!

 

        তারপর দোকানদারের কাছ থেকে একটি ছোট ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নিয়ে স্কচ টেপ দিয়ে সেটি বাক্সের উপর লাগিয়ে দেয়। কার্ডে কাল্পনিক কিছু নাম লিখে দেবার মাধ্যমে উপহার নিয়ে সমস্ত তোড়জোড় সমাপ্ত হয়।

 

        বাক্সটি ফাহিমের হাতে; সে আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে। রিয়ান এবং পাপ্পু তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। ফাহিমের মনে একটুও ভয় নেই! কিন্তু অন্য দুই বন্ধুর অবস্থা করুণ! তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছে যে এইমাত্র তাদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হবে! 

 

        যাইহোক, উপহারটি নির্দিষ্ট স্থানে হস্তান্তর করে ফাহিম তার বন্ধুদের নিয়ে খাবার টেবিলে বসতে না বসতেই সুস্বাদু খাবার এসে হাজির! ইচ্ছেমত পেট ভরে খেয়ে তিন বন্ধু বাইরে আসে। যে রিয়ান এবং পাপ্পু পূর্বে ফাহিম সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলছিল এবং অপমানসূচক কথা বলছিল, এখন তাদের মুখেই প্রশংসার খই ফুটছে! রিয়ান এবং পাপ্পু দুজনই একযোগে ফাহিমকে বস বলে সম্বোধন করতে থাকে!    

View kingofwords's Full Portfolio
tags: