রবার্ট ব্রাউনিং-এর “পরফিরিয়াস লাভার”: প্রেম নাকি উন্মাদনা! [Bangla Essay]

রবার্ট ব্রাউনিং-এর পরফিরিয়াস লাভার একটি প্রেমের কবিতা। এ কবিতায় আমরা এক উন্মাদ প্রেমিকের মুখোমুখি হই। কবিতা যতই সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকে, আমরা সেই পাগলাটে প্রেমিকের মনস্তাত্ত্বিক জগত সম্পর্কে আরও বেশী করে জানতে পারি। তার আবেগের ভারসাম্যহীনতা আমাদের চোখে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়।  

 

যেহেতু প্রেমিক তার প্রেমিকা পরফিরিয়া সম্পর্কে অতীতের কোনও তথ্যই দেয় না সেহেতু আমাদেরকে নিজস্ব বিচক্ষণতার উপরই নির্ভর করতে হয়। পাগলাটে প্রেমিককে নিয়ে লেখা কবিতা আমাদেরকে একটি বিষয়ের দিকে ধাবিত করে, সেটি হচ্ছে এই যে ব্রাউনিং অস্বাভাবিক এবং অদ্ভুত আচরণের মানুষের প্রতি বেশ আগ্রহ বোধ করতেন এবং তাদেরকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে খুব পছন্দ করতেন।    

 

পরফিরিয়াস লাভার কবিতায় আমরা মূলত একজন প্রেমিক এবং প্রেমিকার দেখা পাই। কবিতাটিতে প্রেমিককে সিনেমার গুণ্ডার মতই অঙ্কিত করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রেমিকার মধ্যে অহংকারের ছটা স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। প্রেমিক ঝড়ের রাতে প্রেমিকার জন্য অপেক্ষায় থাকে; তার অপেক্ষা পাঠকের মনকেও নাড়া দেয় কারণ তার বর্ণনায় আবেগ এবং ভালোবাসার উপস্থিতি লক্ষণীয়। পরফিরিয়ার আগমন মুহূর্তেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে সূর্যের আলোকরশ্মির মত দ্যুতি ছড়ায়।

 

যখন পরফিরিয়া আসলো ধীরে...

উষ্ণতায় কক্ষটি উঠলো ভরে।

 

পরফিরিয়া নিজেকে বেশ আধিপত্যের সাথেই তুলে ধরে; তার আচার ব্যবহারে প্রলোভনের আকর্ষণও তীব্র। তাকে দেখে মনে হয় যেন এই স্থানটিতে সে বহুবার এসেছে! যখন পরফিরিয়া আভরণ সরায়, তখন প্রেমিক তার মখমলের মতন মোলায়েম ত্বকের প্রশংসায় মেতে উঠে। পরফিরিয়ার সোনালি চুলের কথা বলতেও সে ভুল করে না।

 

প্রেমিকের কথায় একটি বিষয় খুবই স্বচ্ছ হয়ে উঠে আর তা হচ্ছে এই যে প্রেমিকা পরফিরিয়া প্রেমিকের প্রতি শারীরিকভাবে আকৃষ্ট; সে তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে না। দুজনে যখন আগুনের পাশে বসা, তখন প্রেমিকের মনে হয় যেন এই মুহূর্ত যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে; পরফিরিয়ার প্রেমিক হতে পেরে সে নিজেকে খুব ভাগ্যবান এবং আনন্দিত বলে মনে করছে।

 

মুহূর্তেই কেন জানি প্রেমিকের মনে হয় যে তার জন্য পরফিরিয়ার ভালোবাসা প্রকৃত ভালোবাসা নয়। তার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে প্রেমিকার ভালোবাসাকে চিরতরে ধরে রাখতে হলে তাকে হত্যা করতে হবে! তৎক্ষণাৎ উন্মাদ প্রেমিক পরফিরিয়ার হলুদাভ চুল তার গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। প্রেমিক এই ঘৃণ্য কাজটি করে কারণ সে বিশ্বাস করে যে এভাবে পরফিরিয়াকে চিরতরে নিজের করে রাখা সম্ভব।

 

একটি লম্বা সোনালি চুলের তৈরি দড়িতে তার

ছোট্ট গলার চারপাশে আমি ঘুরালাম তিনবার,  

এবং তার শ্বাসরোধ করলাম।     

 

প্রেমিক নিজের এই জঘন্য কর্মটিকে সমর্থন করতে গিয়ে বলে যে পরফিরিয়া নাকি ঠিক সেই মুহূর্তে মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছিল! সে আরও বিশ্বাস করে যে এভাবে পরফিরিয়াকে হত্যা করার ফলে পরফিরিয়ার কোনও কষ্টই হয়নি-

 

আমি নিশ্চিত যে সে কোনও কষ্ট অনুভব করেনি।

 

পরফিরিয়াকে হত্যা করার পর উন্মাদ প্রেমিকের মনে হয় যেন সে একপ্রকার আধিপত্যের অধিকারী হয়েছে। প্রেমিকার মস্তক তার কাঁধে নিয়ে সে বসে আছে। সে হত্যার মতন এমন জঘন্য পাপ করার পরেও এর সমর্থনে নির্লজ্জের মত বলে,

 

পুরো রাতজুড়ে আমরা একটুও নড়িনি,

এবং ঈশ্বরও একটি কথাও বলেননি!

 

এই কবিতায় কবি হয়তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যেখানে নারীরা অবহেলিত। হয়তো বিচারবুদ্ধিহীন প্রেমিক পরফিরিয়াকে হত্যা করেছে কারণ পরফিরিয়ার অন্য কারো সাথে গোপন সম্পর্ক আছে যা সে জানতে পেরেছে। পরিশেষে হয়তো কবি পাঠকদেরকে এই বার্তাই দিতে চান যে প্রেমে বিশ্বাস এবং সহনশীলতা থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

View kingofwords's Full Portfolio
tags: