ধোঁকা! [অণু গল্প: Bangla Flash Fiction]

শাহরিয়ার ইতোমধ্যে ফাহিমকে ঠকিয়েছে। সে ফাহিমকে বলেছে যে ২৫,০০০ টাকা দিলে তাকে পরবর্তী একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হবে। ফাহিম শাহরিয়ারের উপর পুরোপুরি আস্থা রেখেই বিকাশে সম্পূর্ণ অর্থ পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর নাটকের শুটিং শুরু হয়। ফাহিম তার জীবনের প্রথম ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের জন্য ডাক পায়। এ যেন রীতিমত স্বপ্নকেই হাতে পাওয়া!


বেশ উত্তেজনার মধ্য দিয়েই শুটিং এর কাজ চলতে থাকে। ফাহিম তার সর্বোত্তম প্রচেষ্টার মাধ্যমে চমৎকারভাবেই নাটকে তার চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলে। নাটকের প্রায় ৫০ ভাগ শুটিং শেষ হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। কিন্তু বাকি ৫০ ভাগের শুটিং যে ঠিক কবে শুরু হবে তার কোনও ইয়ত্তা নেই! এদিকে ফাহিম বেশ কয়েকবার শাহরিয়ারকে কল করে জিজ্ঞেস করেও কোনও সদুত্তর পায় না।


ফাহিমঃ হ্যালো, শাহরিয়ার ভাই, কেমন আছেন?


শাহরিয়ারঃ এইতো ভাই, ভালোই আছি। আপনার কি খবর?


ফাহিমঃ এইতো চলছে কোনও রকম। ভাই, ঐ ধারাবাহিক নাটকের বাকি শুটিং কবে শুরু হবে?


শাহরিয়ারঃ ঠিক বলতে পারছি না ভাই। আসলে প্রচুর খরচ! আমার হাত একেবারেই খালি। আপনি যদি কিছু টাকা দিয়ে সহায়তা করেন তাহলে হয়তো কাজটা আবার শুরু করা যাবে।


ফাহিমঃ আমিতো ইতোমধ্যে আপনাকে ২৫,০০০ টাকা দিয়েছি। এখন আবার এতো টাকা জোগাড় করা আমার দ্বারা সম্ভব না ভাই! ভালো থাকেন ভাই। পরে কথা হবে।


শাহরিয়ারঃ ঠিক আছে।


প্রায় দেড় বছর পর শাহরিয়ার ফেইসবুকে ফাহিমকে একটি ম্যাসেজ পাঠায়। ফাহিম ভাবে যে হয়তো শুটিং আবার শুরু হতে যাচ্ছে এবং শাহরিয়ার ভাই তাকে এই খবরটিই দিতে চাচ্ছে!


শাহরিয়ারঃ কেমন আছেন ভাই?


ফাহিমঃ ভালো আছি। আপনি?


শাহরিয়ারঃ তেমন ভালো নাই ভাই। আপনার কাছে কি ৫,০০০ টাকা হবে? দুই বা তিন দিন পর পেয়ে যাবেন।


ফাহিমঃ দুঃখিত ভাই, আমার হাত একেবারে খালি।


ফাহিম খুব ভালো করেই বুঝে গেছে যে শাহরিয়ার একটা ধোঁকাবাজ ছাড়া আর কিছুই নয়! কয়েকদিন পর সে আবারো ফাহিমকে একটি ম্যাসেজ পাঠায় এই লিখে যে তাকে যেন ১,০০০ টাকা ধার দেয়া হয়। কে জানে কি মনে করে যেন ফাহিম বিকাশে ১,০০০ টাকা পাঠিয়ে দেয়। অবাক করার মতন বিষয় হচ্ছে এই যে শাহরিয়ার যেদিন টাকাটা ফেরত দেবে বলেছিল, ঠিক সেদিনই বিকাশের মাধ্যমে সে টাকাটা ফাহিমের ফোনে পাঠিয়ে দেয়।


এই ঘটনার প্রায় ৭ অথবা ৮ দিন পর শাহরিয়ার আবারো ফাহিমের কাছে ২,০০০ টাকা ধার হিসেবে চায়। যেহেতু সে কিছুদিন আগে ১,০০০ টাকা ধার নিয়ে আবার ফেরত দিয়েছে, তাই ফাহিম তাকে বিশ্বাস করেই ২,০০০ টাকা ধার দেয়। কিন্তু এবার শাহরিয়ার তার কথা রাখেনি। নির্দিষ্ট দিন অতিবাহিত হয়ে আরও অনেক দিবস, অনেক রজনী গড়িয়ে গেলেও শাহরিয়ারের দিক থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়াতো দূরের কথা, ফাহিম ফেইসবুকে তাকে কোনও ম্যাসেজ দিলেও সে কোনও উত্তর দেয় না!


ফাহিম মনেমনে ভাবে- “মানুষ এতোটা অমানুষ হয় কি করে?”

View kingofwords's Full Portfolio