ওল্ড হোম

সকাল বেলাতেই ‘ওল্ড হোম’ এ এসে এমন আচরণ সহ্য করা যায় না। বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। ডেস্কে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কোন এক ঘর থেকে একজন বুড়া মানুষের গোঙ্গানীর মত শব্দ শোনা যাচ্ছে। বাবাকে দেখে চলে যাবে ম্যাক্স। সিনেমার শ্যুটিং আছে। লিন্ডাকে নিয়ে শপিং এ যেতে হবে। কত কাজ! বিগত চার মাস ধরে প্রায় বাবাকে দদেখতে আসতেই পারে না ম্যাক্স। গ্ল্যামার জগতের অনেক খ্যাতনামা তারকা সে। সারাদিন শ্যুটিং করার পরে লিন্ডাকে সময় দিতে হয়। কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে বাবার কথাই মনে থাকে না। এত ব্যস্ত থাকে ম্যাক্স। এই প্রোগ্রাম ঐ প্রোগ্রাম একের পর এক লেগেই আছে। এদিকে লিন্ডা জানিয়েছে যে সে ম্যাক্স এর বাচ্চার মা হতে চলেছে। এখনও খবরটা গোপন আছে। এটা জানাজানি হলে গ্ল্যামার জগতে ম্যাক্স এর অবস্থান কি হবে তা নিয়েও সে খানিকটা চিন্তিত। কয়েক দিন ধরেই বাবার কথা মনে পড়ছিল। আজকে চলে এলো বাবাকে দেখার জন্য শহরের নামকরা ওল্ড হোম এ।

ম্যাক্স বিরক্ত হয়ে টেবিলে রাখা ঘন্টাটা আবার বাজালো। কিছুক্ষণ পরে বয়স্কা একজন মহিলা এলেন। তিনি রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে ম্যাক্সের দিকে তাকালেন। বললেন, কি ব্যাপার?
-অনেক্ষণ হল কাউকে দেখছি না। ম্যাক্সের গলায় উষ্মা প্রকাশ পায়।
-আমাদের একজন ক্লায়েন্ট অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্টাফরা সবাই তাই ব্যস্ত। তা বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
-আমি আমার বাবাকে দেখতে এসেছি। বাবার রুম নাম্বার হল ৪২৭।
-নাম বলুন। বলেই ভদ্রমহিলা রেজিষ্টার খাতা উল্টাতে শুরু করেন। ম্যাক্স কোন বাড়তি গুরুত্বই পেল না মহিলার কাছে।
-রবার্ট মিলার।
-কি বললেন? মহিলা বেশ অবাক হয়ে ম্যাক্সের দিকে তাকালো। কি বললেন আপনার বাবার নাম?
- রবার্ট মিলার। কেন কি হয়েছে? ম্যাক্স নিজেও একটু অবাক হয়।
-আপনি কি আমাদের পাঠানো চিঠি পান নি? মহিলা এবার একটু ঝাঁঝের সাথে জিজ্ঞাসা করেন।
-কোন ঠিকানায় পাঠিয়েছিলেন? কিসের চিঠি?
-কেন আপনার হ্যামিল্টন স্ট্রীটের বাসার ঠিকানায়।
-আমি ঐ বাসা পরিবর্তন করেছি। ম্যাক্স উত্তর দেয়।
-আর আপনার ফোন?
-সেটাও পরিবর্তন হয়েছে।
-আপনার কি একবারও মনে হল না আপনার নতুন বাসার ঠিকানা আর ফোন নাম্বারটা আমাদের জানানোর দরকার? মহিলা তিরস্কারের সাথে বললেন?
-কেন কি হয়েছে? ম্যাক্স কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না।
-কি হয়েছে? বাহ ভালো ছেলে তো আপনি! চার মাস পরে এসে জিজ্ঞাসা করছেন কি হয়েছে? আপনার বাবা মারা গেছেন আজ থেকে আরো দুই মাস আগে। মারা যাবার আগে আপনার জন্য একটা খাতা রেখে গেছেন। আমি নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, আপনার বাবা নিষেধ করে দিয়েছিলেন বলে আমরা মিডিয়াতে জানাই নি। এতে হয়ত আপনার সন্মান ক্ষুণ্ন হত। বলেই মহিলা ঘুরে চলে গেলো ম্যাক্সকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই।

বেশ কিছুক্ষণ পরে অল্পবয়সী একজন মেয়ে এসে ডেস্কে এসে বললো, এই নিন স্যার আপনার বাবার খাতা। খাতাটা হাতে দিয়েই মুখে এক টুকরো শুকনা হাসি দিয়ে মেয়েটিও চলে গেলো অন্য একটি ঘরে। ম্যাক্স এর রীতিমত অসহায় লাগতে শুরু করলো। কি বলে গেলো বয়স্কা মহিলাটি? বাবা নেই? আর আমি কিছুই জানতে পারলাম না। নিজেকে গালাগাল আর অভিশাপ দিতে শুরু করলো ম্যাক্স। কেন আরো আগে এলো না? কেন বাসা পরিবর্তন করার সময় মনে পড়লো না এখানকার নিয়মের কথা? ম্যাক্সের মনে হতে লাগলো যেন ওর বয়স হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গেছে। পা থেকে শক্তি চলে গেলে যেমন লাগে ঠিক তেমন মনে হতে লাগলো। খাতাটা নিয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে গিয়ে বসে পড়লো ম্যাক্স। বারবার বাবার কথা মনে পড়ছে। বাবাকে দেখতে পেল না। কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজেকেই দোষ দেয় ও। গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দিয়ে রুপালী পর্দায় নিজেকে দেখেছে। বাবাকে মনে পড়ে নি। আজ যখন বাবা নেই তখন বাবাকে মনে পড়ছে। এখন আর কি লাভ মনে করে? তাও আবার যে কিনা দুই মাস আগেই মারা গেছে? ম্যাক্স উল্টাতে শুরু করে বাবার লেখা খাতার পাতা। পাতা উল্টাতেই এক মহিলার ছবি চোখে পড়লো। ভীষণ মায়াবী আর সেই সাথে একটু অভিমানী। এই ছবির মহিলাকে আগে কখনও দেখে নি ম্যাক্স। বাবার চির চেনা সেই হাতের লেখা। খুব সুন্দর ছিল বাবার হাতের লেখা। শেষ বয়সে এসেও সেই সৌন্দর্য একটুও কমেনি। দুই চোখে পানি এসে গেলো ম্যাক্স এর। সিনেমা করতে গেলে চোখে গ্লিসারিন দিতে হয় পানি আনার জন্য। আর আজ এমনিতেই পানি চলে আসছে চোখে! ম্যাক্স পড়তে শুরু করে বাবার লেখা কথা। ওকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। অনেকটা চিঠির মত করে লেখা।

আমার ‘ছোট্ট জাদু’ ম্যাক্স,

কেমন আছ সোনা? কতদিন তোমাকে দেখি না। তোমার বাসায় ফোন করেও তোমাকে পেলাম না। তোমাকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে বাবা। আমার বয়স হয়ে গেছে। কত দিন আর বাঁচবো তা তো জানি না। জীবন সায়াহ্নে এসে আমার মনে হয় সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখন আর শরীরটাও বেশী ভাল লাগে না। এই দেখ, লেখা শুরু করেই নিজের কথা বলতে শুরু করলাম। তুমি বিরক্ত হয়ো না বাবা। আসলে বুড়ো হয়ে গেছি। মাথা কাজ করে না ঠিকমত। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারি না। কারো কথাই তেমন মনে পড়ে না। বারবার শুধু মনে পড়ে তোমার ছোটবেলার দিনগুলো। তুমি কত চঞ্চল ছিলে! আমার সারাটা জীবন কেটে গেলো তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে। এখন আমার বড়ো একা লাগে বাবা। তুমি অনেক দিন আসো না। আমি তো এখানে কাউকে কিছু বলতেও পারি না। তুমি কবে আসবে সোনা?

আমার খুব ইচ্ছে ছিল আমার শেষ জীবনটা তোমার সাথে কাটাই। কিন্তু আমার কি ভাগ্য বল। তুমি তোমার কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়লে। ভালই হয়েছে আমাকে এখানে রেখে গেছো। তোমার কাজের কোন ক্ষতি না হোক আমি সেটাই চাই। তুমি অনেক উন্নতি কর জীবনে বাবা। আমি তোমাকে অনেক উপরে দেখতে চাই। তুমি যেখানেই যাও সেখানেই অনেক ভালো করবে আমি এটাই চাই তোমার কাছে। সবার কাছে তুমি অনেক বড়ো হয়ে গেলেও আমার কাছে তুমি এখনও আমার সেই ছোট্ট জাদুটাই আছো।

তোমার কি মনে পড়ে বাবা? তুমি তোমার ছোটবেলায় আমাকে ছেড়ে একটুও থাকতে পারতে না। তোমার মা বেঁচে ছিল না। তুমি আমাকে কিছুক্ষণ না দেখলেই কান্নাকাটি শুরু করে দিতে। শুধু তোমার একাকীত্বের কথা চিন্তা করে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। তুমি তখন অবশ্য অনেক ছোট। তোমার মনে না থাকারই কথা। তোমার আয়া মিসেস আর্থার তোমাকে কিছুতেই সামলাতে পারতো না। তুমি শুধু আমার কাছেই থাকতে চাইতে। আর আজ দেখো, তুমি কত বড়ো হয়ে গেছ!

আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি ম্যাক্স। তোমার জীবনে যেন কখনও একাকীত্ব না আসে। ছেলেমেয়ে নিয়ে তুমি সুখে দিন কাটাও। অবশ্য আমি তোমার ছেলেপুলে দেখে যেতে পারবো বলে মনে হয় না। এই একটা দুঃখ মনে হয় থেকেই যাবে আমার। তবে যেখানেই থাকি না কেন, তোমাকে সুখী দেখতে চাই আমি ম্যাক্স। আমার জীবনের শেষের দিনগুলোর মত যেন তোমার জীবনে কখনই না আসে। একাকীত্ব অনেক খারাপ জিনিস বাবা। তোমাকে জীবনের এই শেষপ্রান্তে এসে কিছু কথা বলে যেতে চাই। এতদিন বলি নি, আসলে দরকার হয় নি। কিন্তু আমি চলে গেলে এই কথাগুলা তোমার কখনই জানা হবে না। কারণ কথাগুলা তোমাকে জানানোর মত আর কেউ নেই যে। ব্যাপারগুলা জানা তোমার অধিকার।

অনেক অনেক বছর আগের কথা। একদিন আমি রাতের বেলা পাশের শহর থেকে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় আলো কম ছিলো। আমি দেখলাম, একটা মেয়ে আলুথালু বেশে আড়াআড়ি রাস্তা পার হচ্ছে। কোন দিকে নজর নেই। আমাকে অগত্যা গাড়ির গতি কমাতে হল। মেয়েটার বেশভুষা দেখে দূর থেকেই বুঝলাম মেয়েটার মানসিক ভারসাম্য ঠিক নেই। কাছে গিয়ে গাড়ি থামালাম। মেয়েটা রাস্তার একপাশে গিয়ে বশে পড়লো। রাস্তাঘাটে কোন পাগলী কে দেখলে আমাদের কোন আকর্ষণ লাগার কথা না। আমার নজর কাড়লো অন্য একটা ব্যাপারে। আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম ড্রাগ অ্যাডিক্ট কি না। দেখালাম তা না। মেয়েটা আসলেই পাগল। গায়ের কাপড় ছেঁড়া, ময়লা। চুলগুলো এলমেলো হয়ে আছে। মেয়েটা মুখ করুণ করে বসে আছে। মুখটা শুকনা। ভীষণ মায়া লাগলো দেখে। দেখেই বুঝলাম মেয়েটার খাওয়া হয় নি অনেকক্ষণ। কত ক্ষণ বা কয় দিন আমি জানি না। আমার গাড়িতে খাবার ছিল। কিছু ফল আর কেক। মেয়েটার সামনে দেয়া মাত্রই খাবারের উপরে ঝাপিয়ে পড়লো। আমার চোখে পানি এসে গেলো মেয়েটার দুরবস্থার কথা চিন্তা করে। কারণ মেয়েটা যখন রাস্তা পার হয় তখন আমার নজর পড়েছিল মেয়েটার স্ফীত উদরের দিকে। মনে হল মেয়েটা মনে হয় গর্ভবতী হতে পারে। আমি দাঁড়িয়ে মেয়েটার খাওয়া দেখলাম। খাওয়া শেষ হলে আমি চলে আসবো মনে করে গাড়ির কাছে গেলাম। সীটে বসার সময় দেখলাম মেয়েটা আমার পিছে পিছে চলে এসেছে। কি করবো বুঝতে পারলাম না। খুব কষ্ট লাগলো। আগেপিছে চিন্তা না করে মেয়েটাকে আমার গাড়ীতে তুলে নিলাম। পরে না হয় খোঁজ খবর করা যাবে কার মেয়ে এটা।

বাসায় এসে দেখলাম মেয়েটার গাড়ির সীটে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। একটা হাত পেটের উপরে দিয়ে রেখেছে। আমি মেয়েটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গাড়ি থেকে বের করে ঘরে নিয়ে এলাম। শুইয়ে দিলাম আমার এক ঘরে। মেয়েটা কিছুই টের পেল না। পরদিন সকাল বেলা আমি ডাক্তার সোফিয়া কে ডাকলাম বাসায়। উনি মেয়েটাকে পরীক্ষা করে বললেন, মেয়েটা গর্ভবতী। আর মেয়েটার শরীরের অবস্থা ভাল না। মেয়েটা অপুষ্টিতে ভুগছে। আমি দিশেহারা বোধ করলাম কি করবো ভেবে। তখন আমার অবস্থা যে খুব একটা ভাল ছিল তা নয়। আমি ডাক্তারের পরামর্শমত মেয়েটার চিকিৎসা আর খাবার দাবারের ব্যবস্থা করলাম। একজন আয়া রেখে দিলাম মেয়েটার সার্বক্ষণিক যত্নের জন্য।

আবিস্কার করলাম মেয়েটা শুধু যে পাগল তাই নয়, মেয়েটা বোবাও। কথা বলতে পারে না। শুধু মুখ দিয়ে বিচিত্র কিছু শব্দ করতে পারে। বাইরে থেকে যখন ঘরে ফিরতাম তখন আমাকে দেখে খুব খুশী হত। হাত দিয়ে ইশারা করে কি যেন বোঝাতে চাইত। আমি বুঝতে পারতাম না। অনেক বিজ্ঞাপন আর অনেক যোগাযোগ করেও আমি মেয়েটার কোন হদিস বের করতে পারলাম না। হয়ত কেউ যোগাযোগ করতে চাইলো না। কে শুধু শুধু এমন একটা আপদ ঘাড়ে নিবে? আমাদের সমাজে আমরা সবাইতো অনেক সভ্য(!) আর ব্যস্ত। আমার বুঝতে আর বাকী নেই, একটা পাগল বোবা যুবতী মেয়েকে রাস্তায় পেয়ে কোন মানুষরূপী পশু ধর্ষণ করে গেছে। আমাদের সমাজ একটা বোবা মেয়েকে ধর্ষণের সুবিধা দিতে পারে, কিন্তু মেয়েটির দায়িত্ব নিতে পারে না। ঘৃণায় আমার মনটা বিষিয়ে গেলো। মেয়েটার উপরে অনেক মায়া পড়ে গেলো। আমি নিজের বোনের মত দেখতে লাগলাম ওকে। আমি শেলী বলে ডাকতাম কিন্তু ও শুনতে পেত না। ওর আয়াকে বারবার বলে দিতাম যেন ওর যত্নের কোন কমতি না হয়। আমার স্ত্রী মারা গিয়েছিলো আগেই। আমি আর বিয়ে করি নাই।

এই ঘটনার প্রায় ৩ মাস পরে শেলীর প্রসব বেদনা ওঠে। মাঝে মাঝে ওকে ঘরে হাত পা বেঁধে রাখতে হত অগত্যা। নড়াচড়া যেন বেশী না করতে পারে। বাচ্চাটার যে নাহলে ক্ষতি হয়ে যেত। ওকে হসপিটাল এ নিয়ে গেলাম। ওর ফুটফুটে একটা ছেলে হল। কিন্তু বাচ্চাটার জন্মের পর ওর শরীরে খিঁচুনি দেখা দিলো। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও শেলীকে বাঁচাতে পারলো না। বাচ্চাটা জন্ম দিয়ে চার ঘন্টার মাথায় শেলী মারা গেলো। আমি হাপুস নয়নে কাঁদলাম মেয়েটার জন্য। অনেক মায়া পড়ে গিয়েছিল। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করেছিলো আমার কি হয়। আমি একটুও দ্বিধা না করে বলেছিলাম, আমার বোন। আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে এলাম ঘরে। শুরু হল আমার আমার নতুন জীবন। শেলীর আয়াটাকেই নিযুক্ত করে দিলাম এবার বাচ্চাটার দেখাশোনা করার জন্য।

আমার সারাজীবন জুড়ে তখন এই বাচ্চাটা। আমার মনে হত আমার নিজের বাচ্চা এটা। আমাদের মাত্র দুই বছরের দাম্পত্য জীবনে আমার কোন বাচ্চা ছিল না। আমার স্ত্রী মারা গিয়েছিল ক্যান্সার এ। এই বাচ্চাটাকে নিয়েই আমি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতাম। আমি বাচ্চাটার নাম দিলাম ‘ম্যাক্স মিলার’। লোকে যেন আমার ছেলে বলেই ভাবতে পারে তাই আমার পদবী দিয়েই আমি তার নাম দিলাম। আমি আদর করে ডাকতাম ‘লিটল ম্যাজিক’ বলে।

আমার লিটল ম্যাজিক এখন কত্ত বড় তারকা হয়ে গেছে! ছোটবেলায় আমি দূর থেলে লিটল ম্যাজিক বলে ডাক দিলে, ম্যাক্স দৌড়ে আমার কোলে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ত। কতবার আমার কোলে, বিছানায় পেশাব করে দিয়েছে! কতবার আমার উপর রাগ করে আমার হাত কামড়ে দিয়েছে! মনে পড়লে এখনও মনে হয় বেশীদিন আগের কথা তো নয়। কিন্তু এর মধ্যেই তিরিশটা বছর পার হয়ে গেল।

কখনো তোমাকে তোমার মায়ের কথা বলি নি। তুমি তোমার মায়ের কথা বললে আমি বারবার তোমাকে আমার মৃতা স্ত্রীর কথা বলতাম, তার ছবি দেখাতাম। শেলীর একটা ছবি একবার তুলে রেখেছিলাম। এখানে আসার আগে আমি ছবিটা আমার সাথে নিয়ে আসি। তুমি এই লেখাটার সাথে পাবে সেটা।

অনেক ক্লান্ত লাগছে বাবা। আর লিখতে পারছি না। চোখেও এখন আর ভালো দেখি না তেমন একটা। আমার মনে হয় আমার চোখ দুটা এখনও ভালো আছে শুধু তোমাকে একনজর দেখার জন্য বাবা। তুমি জলদি চলে আসো আমার এই ওল্ড হোমে। একবার তোমাকে একটুর জন্য দেখা দিয়ে যাও। আমি এখন বুড়ো হয়ে গেছি বাবা। তোমাকে দেখতে মন চায় আমার প্রতিদিন। জলদি এসো আমার লিটল ম্যাজিক। আমি হয়ত আর বেশিদিন বাঁচবো না।

ইতি তোমার বাবা-
রবার্ট মিলার

পড়তে পড়তে শেষের পাতায় বাবার কালি কলমের লেখা কয়েক জায়গায় কালি ছড়িয়ে গেলো। পানি পড়লে যেমনটা হয়। ম্যাক্স সম্বিত ফিরে এলে বুঝলো ওর চোখের পানিতে চিঠির পাতা ভিজে গেছে। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগতে লাগলো। মনে হল, আবার সেই শৈশবে ফিরে গেছে। এখনি সামনের দরজা দিয়ে বাবা এসে বলবে, আমার লিটল ম্যাজিক! সামনের সবকিছু ঝাপসা লাগছে। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ম্যাক্স ঠিকমত। আরো কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ায় সে। মনে হচ্ছে কেউ যদি ওকে একটু ধরে রাখতো তাহলে ঠিকমত হাঁটতে পারতো।

গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে, সেই কর্মচারী মেয়েটি এসে ডাক দেয়। চোখ মুছে ম্যাক্স মেয়েটির দিকে তাকায়। ‘স্যার আপনার বাবার কবরের ঠিকানা নিয়ে যান’, মেয়েটি সরলভাবে বলে।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় ম্যাক্স বলে, ‘দরকার নেই। একজন ঠিকানাবিহীন মানুষকে ঠিকানা দেয়া মানুষ আমার বাবা। উনার কবর আমি সারা জীবন নিজেই খুঁজে যাবো। এতে আর কিইবা এমন কষ্ট হবে বলুন?’

চোখের পানি মুছে ম্যাক্স বেরিয়ে যায় রাস্তায়। পেছনে পড়ে থাকে বাবার স্মৃতি বিজড়িত ওল্ড হোম। কালের সাক্ষী হয়ে ওল্ড হোম রইলো তার আগের ঠিকানাতেই। হয়ত এমন আবার নতুন কোন গল্পের অপেক্ষায়।

Author's Notes/Comments: 

21st March 2012

View shawon1982's Full Portfolio
word_man's picture

beautifully written,but i

beautifully written,but i couldnt read a word
lol ron


ron parrish

shawon1982's picture

hello ron

thanks ron for your sweet words. actually this is a story written in my native language bangla. its a story of an old home where the father died four months before but his super star son did not even come to meet his old father. he was so busy that no time to meet his father. something like that!


Dr. Zayed Bin Zakir Shawon