৬ সিফতের মুজাকারা

৬ সিফতের মুজাকারা


الله তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিজ কুদরত দ্বারা। الله তায়ালা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ রেখেছেন দীন (دين) মানার মধ্যে। দীন  মানা প্রত্যেকের জন্য জরুরী। দীন হল الله তায়ালা হুকুমকে রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) এর তরিকায় মানা। দীন আমাদের মধ্যে আসবে মেহনতের ওসিলায়। এই ৬ সিফত হল ৬ টা মেহনতের তরিকা। ৬ সিফতের উপর একিনের সাথে মেহনত করে ’আমল করতে পারলে পুরা দীনের উপর চলা সহজ।

এই সিফতগুলা হল- ১। কালিমা ২। নামাজ ৩। এলেম ও জিকির ৪। একরামুল মুসলিমিন ৫। তাসহিহে নিয়ত ৬। দাওয়াত ও তাবলিগ


১। কালিমা (كلمة)لا إله إلا الله محمد رسول الله

অর্থ-الله ছাড়া কোন মা’বুদ নাই; রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) الله তায়ালা রসূল। অর্থাৎ الله তায়ালা হুকুম মানা আর নবীর তরিকায় চলা। এই একীন দিলে পয়দা করা যে, করনেওয়ালা যাত একমাত্র الله তায়ালা আর আমল করার যাবতা (অলঙ্ঘনীয় বিধান) হল একমাত্র রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) এর তরিকা’।

* উদ্দেশ্য- ‘তবদিলে একিন’ অর্থাৎ একিনের পরিবর্তন। যথা-

১। দিলের একিন সহি করা- মাখলুক থেকে কিছু হয় না বরং সব কিছু الله  তায়ালা থেকে হয় এই একিন দিলে বসানো।

২। তরীকার একিন সহি করা- কোন তরিকায় শান্তি ও কামিয়াবি নাই, একমাত্র রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) এর তরিকায় শান্তি ও কামিয়াবি, এই একিন দিলে বসানো।

৩। জজবার একিন সহি করা- মানুষের দিলকে দুনিয়া থেকে ঘুরায়ে আখিরাতের দিকে করে দেয়া, আসবাব থেকে ঘুরায়ে আমলের দিকে করা, মাখলুক থেকে ঘুরায়ে খালেক অর্থাৎ الله তায়ালার দিকে করা।

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা (শেখা) – সহি উচ্চারণে কালিমা শেখা, কালিমার মেহনত শেখা এবং এর ফজিলতগুলাকে শেখা ইত্যাদি।

২। মশক করা (চর্চা করা) – কালিমার উপর আমল করা এবং জিন্দেগী চালানো। কালিমার কথা মুজাকারা করা। الله তায়ালা বড়ত্ব আলোচনা করা ইত্যাদি।

৩। দাওয়াত দেয়া – কালিমার ফজিলত বর্ণনা করে ইনফেরাদি ও এস্তেমায়ী ভাবে দাওয়াত দেয়া।

৪। দুয়া করাالله তায়ালা যেন সবাইকে কালিমার হক আদায় করে মেহনত করার তৌফিক দেন আর ঈমানের বুঝ দান করেন।


২। নামাজ (الصلاة) الله তায়ালা হুকুম আর الله তায়ালা কুদরত থেকে সরাসরি নেয়ার মাধ্যম।

 

* উদ্দেশ্য- আমার ২৪ ঘন্টার জিন্দেগিকে নামাজের সিফতে নিয়ে আসা। (+ব্যাখ্যা)

 

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ

 

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা – রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) যেভাবে নামাজ আদায় করছেন এবং সাহাবীদের শিখিয়েছেন, মেহনত করে ঐভাবে নামাজ শেখা। নামাজের আহকাম, আরকান শেখা; তাহারাত শেখা, নামাজের ফাজায়েল ও মাসায়েল শেখা।

২। মশক করা – ফরজ নামাজ মসজিদে গিয়ে তাকবিরে উলার সাথে আদায় করা। মহিলাদের জন্য আউওয়াল ওয়াক্তে ঘরে নামাজ আদায় করা। ওয়াজিব সুন্নাত নামাজের এহতেমাম করা আর নফল নামাজ সময় ও সু্যোগ বুঝে আদায় করা।

৩। দাওয়াত দেয়া – নামাজের দিকে এস্তেমায়ী ও ইনফেরাদি দাওয়াতের তরগীব।

৪। দুয়া করা – নামাজ হাসিলের জন্য দুয়ায় জামেয়া’র তরগীব।

 

৩(ক)। এলেম (علم) – নবীগন الله তায়ালা কাছে থেকে যে জ্ঞান লাভ করেছেন এবং যে জ্ঞানের সম্পর্ক ক্ববরের ৩ প্রশ্নের সাথে সেটাই এলেম। আর এলেম এর সাথে যার তাক্বওয়া আছে তিনি আলেম।

* উদ্দেশ্য- আমার ২৪ ঘন্টার জিন্দেগিতে الله তায়ালা কি হুকুম তা রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم)  এর তরীকা মোতাবেক জানা।

 

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ

 

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা – এলেমের ফজিলত জানা, ফাজায়েলে এলেম তালিমের হালকায় শেখা আর মাসায়েলে এলেম ওলামা হযরতদের খিদমতে গিয়ে শেখা।

২। মশক করা – জানা এলেমের উপর আমল করা আর এলেমের মুজাকারা করা।

৩। দাওয়াত দেয়া – এলেমের দিকে এস্তেমায়ী ও ইনফেরাদি দাওয়াতের তরগীব।

৪। দুয়া করা – এলেম হাসিলের জন্য দুয়ায় জামেয়া’র তরগীব।


৩(খ)। জিকির (ذكر) – অর্থ الله তায়ালা স্মরণ। এলেম হল হালের হুকুম অর্থাৎ এই মুহুর্তে الله তায়ালার কি হুকুম, তা রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم)  এর তরীকা মোতাবেক জানা, আর জিকির হল তা মানা।

* উদ্দেশ্য- আমার ২৪ ঘন্টার জিন্দেগিতে الله তায়ালা স্মরণ অন্তরে জিন্দা রাখা। অর্থাৎ الله তায়ালা কি হুকুম তা রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم)  এর তরীকা মোতাবেক মানা।  

 

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ (কোরানের ফজিলত, দুয়া করার ফজিলত, বিভিন্ন ওজিফার ফজিলত, এস্তেগফারের ফজিলত, দুরুদের ফজিলত, কালিমার জিকিরের ফজিলত, মাসনুন দুয়ার ফজিলত ইত্যাদি)

 

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা – সহি ভাবে কুরান শেখা, সুন্নাত তরিকার ওজিফাগুলা শেখা, মাসনুন দুয়াগুলাকে জিন্দেগির মাকসাদ বানায়ে শেখা, জিকিরের ফজিলত শেখা।

২। মশক করা – রোজ সহি ভাবে কুরান তেলাওয়াত করা, সুন্নাত তরিকার ওজিফাগুলা আদায় করা, মাসনুন দুয়াগুলাকে জিন্দেগির মাকসাদ বানায়ে আদায় করা, তিন তাসবিহাতের এহতেমাম করা।

৩। দাওয়াত দেয়া – জিকিরের দিকে এস্তেমায়ী ও ইনফেরাদি দাওয়াতের তরগীব।

৪। দুয়া করা - জিকির হাসিলের জন্য দুয়ায় জামেয়া’র তরগীব।

 

৪। একরামুল মুসলিমিন (اكرام المسلمين) – অর্থ মুসলমানকে সন্মান/ইজ্জত করা।

* উদ্দেশ্য- মুসলমানের হক্ব সম্পর্কিত الله তায়ালার হুকুম সমূহকে রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) তরীকায় পুরা করা। সব মুসলমানকে তবকা অনুযায়ী ইজ্জত করা। মুসলমানের হক আদায় করা। মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখা।

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা – মুসলমানের হক জানা। হক আদায়ের এবং একরামের ফাজায়েল জানা আর হক নষ্ট করার ক্ষতি সম্পর্কে জানা।

২। মশক করা – বড়দের শ্রদ্ধা করা, ছোটদের আদর করা, ওলামাদের তা’জিম করা। সব মুসলমানের হক আদায় করা। মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখা। গীবত না করা।

৩। দাওয়াত দেয়া – একরামের দিকে এস্তেমায়ী ও ইনফেরাদি দাওয়াতের তরগীব।

৪। দুয়া করা - একরাম হাসিলের জন্য দুয়ায় জামেয়া’র তরগীব।


৫। তাসহিহে নিয়ত (تصحيح النية)– নিয়তকে শুদ্ধ করতে থাকা।

* উদ্দেশ্য- আমার ২৪ ঘন্টার জিন্দেগিকে الله তায়ালা রাজী খুশির উপর নিয়ে আসা।

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা – এখলাস সম্পর্কে জানা, এর মেহনত শিক্ষা করা, এর ফজিলতগুলা জানা। এখলাস না থাকলে আমলে শিরক হবে এটা জানা।

২। মশক করা –আমলে বার বার নিয়ত কে তাহকীক করা। গলদ নিয়তকে দুরস্ত করে الله তায়ালা জন্য আমল করা। নির্জনে আমল করা, গোপনে সদকা করা। এস্তেকামাতের সাথে আমল করতে থাকা।  

৩। দাওয়াত দেয়া – এখলাসের দিকে এস্তেমায়ী ও ইনফেরাদি দাওয়াতের তরগীব।

৪। দুয়া করা - এখলাস হাসিলের জন্য দুয়ায় জামেয়া’র তরগীব।

 

৬। দাওয়াত ও তাবলিগ (الدعوة والتبليغ) – দাওয়াত হল মানুষকে الله তায়ালা দিকে ডাকা আর তাবলিগ হল মানুষকে ’আমলের দিকে ডাকা। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত হল রসূলুল্লহ (صلي الله عليه وسلم) এর সুন্নতের এহতেমাম সহকারে এবং সাহাবা (رضي الله عنهم) এর অনুরূপ জজবা ও তরীকায় ’আমলী দীনকে মানুষের মধ্যে জিন্দা করা। 

* উদ্দেশ্য- ঈমান ও ’আমলকে সহি করার জন্য الله তায়ালা রাস্তায় বের হয়ে মেহনত করা। জান, মাল, সময়কে الله তায়ালা রাজী খুশির জন্য ব্যবহার শিক্ষা করা। মেহনত করে সুন্নাতকে এবং দীনকে জিন্দেগিতে নিয়ে আসা। সর্বোপরি, الله তায়ালা রাস্তায় বের হওয়া الله তায়ালা হুকুম আর দীনের দাওয়াতের কাজের জিম্মাদারিকে আদায় করা।

* ফজিলত- কোরানের আয়াত + মুন্তাখাব হাদীস + অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ

* হাসিল করার তরিকা-

১। দরস করা – দাওয়াতের ফজিলত জানা আর লম্বা সময় নিয়ে الله তায়ালা রাস্তায় বের হওয়া। ১ সাল, ৩ চিল্লা,  ১ চিল্লা ইত্যাদি সময় দিয়ে এই কাজ শেখা।

২। মশক করা – নিজের মহল্লায় এহতেমামের সাথে ৫ কাজ করতে থাকা আর পুরা জিন্দেগি এই কাজের সাথে মউত পর্জন্ত লেগে থাকা।

৩। দাওয়াত দেয়াالله তা’য়ালা’র  রাস্তার দিকে এস্তেমায়ী ও ইনফেরাদি দাওয়াতের তরগীব।

৪। দুয়া করাالله তা’য়ালা’র  রাস্তায় বের হবার জন্য দুয়ায় জামেয়া’র তারগীব।

 

৫। তাশকিল – নিজের নিয়তকে পেশ করে সবাইকে তাশকিল করা।

Author's Notes/Comments: 

January 2010

View shawon1982's Full Portfolio